জান্নাত নীলা:
কে, কীভাবে নিজেকে আবিষ্কার করেন জানা নেই, কিন্তু আমি আবিষ্কার করলাম প্রেমে পড়বার পর।
শাড়ি নামক ১২ হাত লম্বা যন্ত্রণাকে যেদিন গুছিয়ে পরে কপালে টিপ, চোখে কাজল নিয়ে আবেগঘন দৃষ্টি ফেললাম আয়নায়, আমি প্রথম দেখলাম, আমার ভেতরের নারীকে।
এর আগে পর্যন্ত একজন মানুষকে নারী ভাবার প্রয়োজন হয়নি। মানুষের নারী বা পুরুষ হবার প্রয়োজনকে প্রজননতন্ত্রের বিষয় হিসেবে গণ্য করেছি তখন পর্যন্ত। কী হাস্যকর না!
বয়স কম ছিল, এমন বিশুদ্ধ সরল হাস্যকর অনেক ধারণাই ছিল যা ভেঙে গিয়েছিল আমার প্রেমটার মতোই। আমি আবিষ্কার করেছিলাম আমি নিজেকে যা ভাবতে চাই তা আসলে অদ্ভুত। আমি একজন সমাজ রাষ্ট্র দৈহিক এবং রাজনৈতিকভাবে নারী! আমি শুধু স্বামী বা প্রেমিকের নই, আমি পুরো পৃথিবীরই নারী! বাসে নারী, লিফট এ নারী, বসের সামনে নারী, বন্ধুর সামনে নারী, শিক্ষকের সামনে নারী, দোকানদারের সামনে নারী, এমনকি নারীর সামনেও নারী।
তবে এতোসব জায়গায় এতোবার নারী হয়েও আমার আসলে কোনো শিক্ষাই হচ্ছিল না। আসল শিক্ষার বাকি ছিল আরও। গত সাত বছর কাজ করছিলাম একটি মিডিয়া হাউসে। অন্তত এসব জায়গার চিন্তা পরিচ্ছন্ন হউক এটা আমাদের একধরনের আকাঙ্ক্ষা, কারণ এসব জায়গায় কাজের কোনো নারী-পুরুষ থাকে না, সবাইকে একই রকম যোগ্যতা নিয়ে টিকে থাকতে হয়, যদিও বাস্তবতা কাঁচকলা।
ওখানের একজন বিবাহিত ও বাচ্চার বাপ, হেড, ভদ্রলোক সম্পর্কে শুনতে পাই, অফিসে তার টিমের একটি মেয়ে তার হেনস্থার শিকার হয়ে চাকরি খুইয়েছে,আর বর্তমানে উনি ধান্দায় আছেন বড় জায়গা নেয়ার, তাই তাকে অনেক কাজ দেখাতেও হয়।
একদিন তিনি এলেন কাজ দেখাতে, বললেন, বুঝসো, একটা টিম বানিয়ে আঁটি বাঁধবো, জিজ্ঞেস করলাম সহযোগিতায় কারা কারা? উত্তর শুনলাম, বললাম, প্রোগ্রামের কেউ তো নেই, ভাইয়া ‘আঁটি বান্ধিবার এই কাজে আমিও থাকিতে চাই’। উনি শুনিয়াও কিছু কহিলেন না। কিছুদিন যাবার পর জানলাম, টিম তৈয়ার! আর তিনি সেখানে তার মনমতো লোকজন নিয়েছেন…
নিক, কিন্তু আমি বাদ পড়লাম, মানে কী! অসম্ভব বিরক্ত হলাম। এরপর এক মিটিং এ উনাকে জিজ্ঞাসিলাম, ‘ভাইয়া, আঁটি বান্ধিবার কর্মটিতে আমি নাই কেন? উনি ঝটপট উত্তর দিয়াসিলেন, “কারণ তুমি মেয়ে মানুষ”।
এবং আমি জানিলাম, আমি একজন মেয়ে মানুষও বটে। মেয়েমানুষ এর দায় আমি লইলাম, ভাইয়ার সুকোমল চরিত্র বাঁচাইতে ইহার দরকার ছিল, কিছুদিন আগে যে কেলেংকারির ভেতর দিয়া তিনি গিয়াছেন, তাহা টিমে আরেকজন মেয়েমানুষ নতুন করিয়া রচনা করিতে পারেন!
ভাইয়ারা মেয়ে মানুষ হইতে বাঁচিয়া থাকুন।