আলফা আরজু:
নারী সাংবাদিকদের নিয়ে হাতে গোণা দুই একটা প্রতিষ্ঠান আছে। আমার জানা মতে, সেইগুলোর মধ্যে “বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরাম” ও “বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র” অন্যতম। এই দুইটা প্রতিষ্ঠানই আমার খুব পছন্দের।
আমি নিজে ফোরাম এর সাথে জড়িত ছিলাম ও আছি। কিন্তু, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের কোনো অনুষ্ঠান হলে -সেখানেও আমি থাকার চেষ্টা করতাম, আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান (যখন যেখানে কাজ করেছি – নিউ এইজ, ডেইলি ষ্টার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট) রিপোর্ট করতাম। প্রয়োজনে চিফ রিপোর্টার ও নিউজ এডিটরদের অনুরোধ করতাম – যেভাবেই হউক – নারী সাংবাদিক কেন্দ্র ও ফোরামের প্রেস রিলিজ অথবা রিপোর্ট যাতে ছাপা হয়।
আমার প্রিয় সহকর্মীরা অনেকেই এইসব নিয়ে হাসাহাসি করে বলতেন – জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থাকার পরও কেন নারীদের আলাদা সংগঠন লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার অনেক নারী সহকর্মী-বন্ধুরা আমি যখন DRU এ ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে executive কমিটি ও পরে ২০০৮ সালে নারী বিষয়ক সম্পাদক হলাম – তামাশা করতেন।
একজন অসম্ভব ভালো নারী নেতা একদিন বললেন “এইসব মহিলা/টহিলা পদে আবার নির্বাচন করার কী আছে? এইসব ফালতু বিষয়ে উনি নেই ইত্যাদি” – আমি কিছুক্ষণের জন্য হা হয়ে গিয়েছিলাম। এবং খুব ভালো অভিনেতার মতো ওই সাংবাদিককে (কিছুটা গায়ে পরে) আরো গভীর করে জড়িয়ে ধরেছি, মিশেছি, হাহা, হিহি করেছি। কারণ আমি জানি – ও যা ভেবেই বলে থাকুক। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনো নারীদের আলাদা মন্ত্রণালয় যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে “নারী বিষয়ক” সম্পাদক অথবা এই ধরনের আলাদা পদেরও প্রয়োজন আছে।
যাইহোক, যে কথা বলার জন্য আমি লেখাটা শুরু করেছি – সেটা বলে ফেলি।
এই প্রতিষ্ঠান দুটোর প্রতিষ্ঠাতা-ধারক ও বাহকদের সাথে আমার একসময় পেশাগত ‘কারণে ও অকারণে’ খুব দহরম মহরম সম্পর্ক ছিলো ও এখনো আছে বলে আমি দাবি করি। “কারণ” মানে – একসাথে এসাইনমেন্ট করতাম। “অকারণে” হলো – এমনি এমনি অনেক সময় আড্ডা-হাহা হিহি অথবা ব্যক্তিগত রাগ-দুঃখ শেয়ার করতাম। অন্যদিকে, আমি নারী বিষয়ে ভীষণ রকমের “ism” করি। কোন নারীর ভালো থাকা মন্দ থাকা আমাকে খুব আলোড়িত করে। তাই যখন কেন্দ্র অথবা ফোরামের কারোর ভালো দেখি – ভীষণ ভালো লাগে। আবার কারোর কষ্টের কথা জানলে – কেঁদে বুক ভাসাই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস – এই দুই সংগঠনের সবারই আমার মত অবস্থা। একজন আরেকজনের সুখে হাসে, দুঃখে কাঁদে। এখানে কেউ কারোর পিছনে কথা বলে বিব্রত করে না, কারোর কাজে উৎসাহ না দিলেও বাগড়া দেয় না কিংবা, আড়ালে হাসাহাসি করে না।
গত সপ্তাহে নারী সাংবাদিক ফোরামের তেরো জন সদস্য নিয়ে একটা নতুন কমিটি হয়েছে। এই কমিটি পেশাদার নারী সাংবাদিকদের নিয়ে বিভিন্ন কাজের অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয়েছে। অনেকেই এই কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অন্যদিকে কেও কেও আবার বলেছেন – সবাই একসাথে থাকলে ভালো হতো। অল্প সংখ্যক নারী – তাদের আবার দুই/তিনটা সংগঠন। এর মানে আমি যা বুঝি তা হলো “নারী সাংবাদিক ফোরাম” ও “নারী সাংবাদিক কেন্দ্র” একসাথে হওয়াকেই ইঙ্গিত করা।
আমি এ বিষয়ে আলাদা মত পোষণ করি। এই সংগঠন দুটো পারস্পারিক শত্রূ নয়। বরং আমি অনেক সময় দেখেছি নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের অসাধারণ কাজগুলোকে আমাদের ফোরামের ফরিদা ইয়াসমিন আপা, মাহমুদ চৌধুরী আপা ও রাশেদা আমিন আপারা বলেছেন “দেখো কেন্দ্র কি দারুন সব কাজ করছে !”
আমি কিন্তু এইভাবেই দেখি। গত পরশু যখন থেকে ফোরামের নতুন কমিটি হয়েছে – বারবার সেইসব পোস্ট/স্ট্যাটাস এর মন্তব্যগুলোতে আমি কেন্দ্রের সহকর্মী-বন্ধু-আপাদের অভিনন্দন জানিয়ে মন্তব্য খুঁজেছি।
আসলে এখনো আশা হারাইনি যে কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান কমিটির নেতারা ফোরামের এই কমিটিকে অভিনন্দন জানাবেন ও একসাথে যাতে নারীদের জন্য ভালো ভালো কাজ করা যায় – সেইরকম একটা বার্তা দিয়ে ফোরামের কমিটিকে স্বাগত জানাবেন।
আবার এমনও মনে হচ্ছে – নারী সাংবাদিক কেন্দ্র হয়তবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে “নারী সাংবাদিক ফোরাম” এর নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানাবেন। কারণ প্রতিষ্ঠান দুটোই – নারী সাংবাদিকদের জন্য কাজ করেছেন, করেন ও করবেন। এই সংগঠন দুটো – আমাদের হাসি-কান্নার জায়গা হয়ে থাকবে।
জয় হউক সকল কর্মজীবী নারীর।