নারী অধিকার রক্ষা এবং তাদের দোষ-ত্রুটির খতিয়ান

প্রবীর কুমার:

অনেকের মাঝে, বিশেষ করে পুরুষদের মাঝে এমন এক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, নারীবাদের নামে নারীদের দোষগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, অন্যায় কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। মোটেও তা নয়। কোনো নারীর কিংবা নারীবাদে বিশ্বাসী মানুষের মন্দ কাজের দায় সামগ্রিক নারীবাদের উপর পড়ে না।

নারী-পুরুষ সবার মাঝেই স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, হীনতা, প্রতারণা আছে। একজন নারীর কাছেও যদি জানতে চাওয়া হয় সে কোনো বাজে আচরণ বা নিম্ন মানসিকতার নারী দেখেছে কিনা, আমি নিশ্চিত যে, সে একাধিক নারীর সন্ধান দিতে পারবে। এভাবে সংখ্যাটা অনেকে পৌঁছোয়। নির্যাতিত শ্রেণীর কেউ খারাপ কাজ করতে পারে না, এমন নয়। এটাই সত্যি যে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অনেক পুরুষও মানসিক নির্যাতনের শিকার হোন। এটা স্বীকার করলে নারীবাদ সামান্যতম আহত হবে না। নারীবাদীরাও এই সত্যি জানেন। তবে এর সংখ্যা নারী নির্যাতনের তুলনায় অতি নগণ্য। অপরদিকে নারীদের প্রতি অন্যায়-বৈষম্য এতোই বেশি যে সমাজ-রাষ্ট্রের কাছে তা ঐতিহ্যের মতো হয়ে গেছে।

তাই বিবেকবান মানুষগুলো চাইছে এই বৈষম্য টিকিয়ে রাখার প্র্যাকটিস বন্ধ করতে, সমান অধিকার দিয়ে বৈষম্যহীন, বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ গড়তে। সমাজে এখনো ‘রাগ না থাকলে কীসের পুরুষ’ আর ‘মাথা নত না থাকলে কেমন মেয়ে’ ধারণার প্রচার চলে। আর এই ধারণা থেকেই নারীর উপর আজন্মকাল নির্যাতন চলে, মাথা নত করে রাখার ষড়যন্ত্র চলে। নারীবাদীরা এই অসভ্যতা দূর করতে চায়। তাই এতো প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও বলে যায়, লিখে যায়।

পুরুষতন্ত্র নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য। তবে সমগ্র পুরুষতন্ত্রকে গালাগাল করতে গিয়ে সমগ্র পুরুষ জাতিকে গালাগাল করলে নারীরা তাদের মন্দ কাজের দায় থেকে মুক্তি পাবে না। তেমনি পুরুষরাও সমগ্র নারীজাতির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, ব্যক্তিগত তিক্ততার বিষেদাগার করে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নারীদের উপর করে আসা শোষণ, অত্যাচার, প্রতারণা অস্বীকার করতে পারে না। আমরা এই সহজ বিষয়গুলোকে অতি জ্ঞানে কিংবা স্বল্প জ্ঞানে জটিল করে ফেলি।

মানুষের বৈষম্যহীন ভাবনার প্র্যাকটিস করা উচিৎ, সুস্থ মস্তিষ্কে সত্যিটা বোঝার চেষ্টা করা উচিৎ। নারীবাদীরা নারীদের ভুলের প্রতি অন্ধ নয়, তারা পুরুষের প্রভুও বানাতে চায় না- বৈষম্য দূর করতে চায়, সমতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে মানবিকতার প্রতিষ্ঠা চায়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.