নারীর সমানাধিকারে লাভ পুরুষেরই

তসলিমা নাসরিন:

মেয়েরা সমান অধিকার পেলে সত্যিকার উপকার হবে কার? পুরুষের। মেয়েরা সমান অধিকার পাওয়া মানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ভেঙ্গে যাওয়া, পিতৃতন্ত্রের অবসান হওয়া, মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া, স্বনির্ভর হওয়া, ইত্যাদি হাজার রকম ভালো জিনিস।        

পরনির্ভর ক্রীতদাসীর সঙ্গে জীবন বিনিময় করার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে পুরুষ। সুযোগ পাবে শিক্ষিত স্বচ্ছল যোগ্য ব্যক্তির সঙ্গে জীবন বিনিময়ের। জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পুরুষের ঘাড়ে থাকবে না। সংসারের খরচ পুরুষকে একা বহন করতে হবে না।  সত্যিকার সহযাত্রীর সঙ্গে জীবন যাপন করলে মান সম্মান বাড়বে পুরুষের।  দাসী ক্রীতদাসী অধস্তন ইত্যাদি নিয়ে বেঁচে থাকা গৌরবের ব্যাপার নয়।    

পুরুষতন্ত্র আকাশ থেকে পড়েনি। একে বানিয়েছে, একে জিইয়ে রাখছে পুরুষ এবং তাদের কতিপয় বিবেকবুদ্ধিহীন চাটুকার মেয়ে। একটা সুস্থ সুন্দর সমতার সমাজ কখনই গড়ে উঠতে পারে না যদি না মেয়েরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। পরাধীন মেয়েদের নিয়ে যে পুরুষেরা বাস করতে চায়, তারা অসুস্থ, বিকৃত।

এই পুরুষগুলো, যে মেয়েরা সমান অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের দেখলে রাস্তার ক্ষ্যাপা কুকুর যেমন নিজেদের ইনসিকিউর ভেবে ঘেউ ঘেউ করে, তেমন ঘেউ ঘেউ করে। তারা প্রভুর জীবন চায়, সারাজীবন দাসী বাঁদী রাখতে চায় ঘরে। ঘরে বাইরে মেয়েদের ধর্ষণ করতে চায়। নারী পুরুষে বৈষম্য চায়। অসাম্যের পরিবার চায়।

আমরা মেয়েরা লড়াই করছি পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, যে কোনও সভ্য সুস্থ পুরুষই যোগ দেবে আমাদের লড়াইয়ে। এ লড়াইয়ে আমাদের জয় হওয়া মানে পুরুষের জয় হওয়া। আমরা মেয়েরা আমাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবো, এই যা। আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। পুরুষের দয়া দাক্ষিণ্যে আর বাঁচা চলবে না। কিন্তু পুরুষ পাবে, যা তারা এখন পাচ্ছে, তার চেয়ে লক্ষ গুণ বেশি। সবচেয়ে বড় যে পাওয়া, তা হলো, একটা গ্লানিময় জীবনের বদলে তারা একটা গৌরবময় জীবন পাবে। 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.