প্রসংগ: ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

তানিয়া কামরুন নাহার:
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিজের ধর্ম পালন করা ও তা সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে, তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন।  অন্ধ বিশ্বাস, গোঁড়ামী, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, কুসংস্কারের অংশগুলো বাদ দিলে সব ধর্মই মানুষকে নৈতিকতা ও মানবতার পাঠই দেয়। সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাক্রমে তাই রয়েছে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি। 
শিক্ষার্থীরা এ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করবে, তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটবে,  এই হলো উদ্দেশ্য। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হয়ে গেছে এ প্লাসের সনদ পাওয়া। এর থেকে রেহাই পায় নি ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিও। শিক্ষার্থীরা কলেমা/কোরান শরীফের সুরা/ গীতা বা বেদের শ্লোক/ ত্রিপিটক, বাইবেলের বিভিন্ন অংশ পড়ছে, মুখস্থ করছে। কেন? শুধুমাত্র ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্য।
অভিভাবকদের মানসিকতাও হয়ে গেছে এরকম, সন্তান কোরানের সুরা বা গীতার স্লোক আদৌ ভালোমত বুঝলো কি না, তার খবর নেই। কিন্তু বিষয়টাতে ভালো নাম্বার পাচ্ছে কি না, সেদিকে খুব সচেতন। ধর্ম আমাদেরকে এরকম জাগতিক বিষয়ে নির্লোভ হতে শেখায়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কাজ করছি উল্টোটা। এমন কি, অসদোপায় অবলম্বন, দেখাদেখি করেও ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের কোন দ্বিধা নেই। ভালো নাম্বারের জন্য এতই মরিয়া যে, ধর্মীয় জ্ঞান আর নৈতিক শিক্ষার গুষ্ঠি কিলিয়ে অনেক আগেই তারা ভূত বানিয়ে ফেলেছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসেও শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা দ্বিধা করবেন না।
বিশ্বাসীরা জানেন, ধর্মীয় ইবাদত/উপাসনা ও জীবনে নৈতিকতার সাথে সৎভাবে চলার পুরষ্কার আখেরাতে বা পরজন্মের কর্মফল হিসেবে পাওয়ার কথা। পরীক্ষার মাধ্যমে কে কত বড় আস্তিক, ধার্মিক তা মূল্যায়ন করা যায় না। এটা করা উচিতও নয়। তাহলে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষার এই সামান্য এ প্লাস নিয়ে এতটা লোভী হওয়ার যৌক্তিকতা কী? 
চারুকলা, ক্যারিয়ার শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষার মত বিষয়গুলো এখন এতটাই অপ্রয়োজনীয় যে, শিক্ষার্থীরা শুধু এ বিষয়গুলোর পরীক্ষা দেবে। কিন্তু কোন নাম্বার মূল সনদে যুক্ত হবে না। পরীক্ষার ফলাফলেও এসব বিষয়ের নম্বর কোন প্রভাব ফেলবে না। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিও  ঠিক এভাবেই বিবেচনা করা যায়।শিক্ষার্থীরা বিষয়টি পড়বে, শিখবে, জানবে ঠিকই, পরীক্ষাও দেবে। কিন্তু এই বিষয়ের নম্বর পরীক্ষার ফলাফল বা সনদ প্রাপ্তিতে কোন প্রভাব ফেলবে না। 
এছাড়াও, সবার ধর্ম যেহেতু এক নয়, তাই সব ধর্মের বিষয়ে একই রকম ভাবে নাম্বার উঠানো যায় না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশির ভাগ স্কুলে কোন শিক্ষক থাকে না। তারা এক রকম না পড়েই পরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে পরীক্ষায় এই বিষয়ে একটি বড় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এদিকগুলোও বিবেচনা করা দরকার।
 শিক্ষার্থীরা বিষয়টি পড়বে তার জীবনের জন্য, জীবনকে সুন্দর করার জন্য, নিজের ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য। পরীক্ষার নাম্বারের জন্য না। 
শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.