পুরুষ কি পিতৃত্ব হারাচ্ছে?

আসমা খুশবু:
প্রেম সুন্দর। একসাথে হাতে হাত ধরাধরি করে হাঁটা অথবা পাশাপাশি বসে থাকা কাপলগুলোকে খুব সুন্দর দেখায়।  একটু ছোঁয়া সে সৌন্দর্য অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। আজকের বাংলাদেশে একটি ঘরে একা একটি মেয়ে একা একজন অপরিচিত পুরুষের সাথে কতোটা নিশ্চিন্ত মনে থাকবে, ভাবলে ভয় লাগে। যত বিশ্বাসই করুক দশ মিনিট এক রুমে একা একজন পুরুষের সাথে কোনো মেয়েই থাকতে চাইবে না। আপনার পাশে যদি কেউ অস্বস্তি নিয়ে বসে, সে নির্দোষ হলেও, এই সতর্ক দৃষ্টি অপমানের, পুরুষ এটা কবে বুঝবে? 
দুইজন ছেলেমেয়ে প্রেমে পড়েছে, বিশ্বাস বেড়েছে, নির্ভরতা বেড়েছে, একে-অন্যের জন্য মন কেমন করছে, একজনের টানে আরেকজন ছুটে এসেছে বহু দূর থেকে, এমন কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে বিশ্বাসী প্রেমিকের দ্বারাই ধর্ষিত হলো মেয়েটি অথবা গ্যাং রেপ। ওই মেয়ে কি জীবনে ভালোবাসতে পারবে আরেকজন পুরুষকে? অথবা এই ঘটনা জানার পর সকল প্রেমিকাই সাবধান হবে প্রেমিককে বিশ্বাস করা থেকে। কাজেই বিশ্বাস ভালোবাসা এসব আর পাশাপাশি অবস্থান করবে কি? 
যৌনতা দু’জন মানুষের। শারীরিক ক্ষমতার জোরে হোক, আর নিজেকে প্রভুত্বের আসনে বসিয়ে হোক সেটা যখন জোরপূর্বক আদায় করা হয়, সেখানে আর যা-ই থাকুক প্রেম থাকে না।  পুরুষের এমন প্রভুত্বের গল্প পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনই দু’চারটে পড়ার দুর্ভাগ্য হয় আমাদের। বাইরে অবিশ্বাস, ঘরে সমাজের ভয়ে কত প্রেমহীন সম্পর্ক টিকে আছে তার হিসাব হয়তো আমাদের অজানা, কিন্তু এমন দিন বোধহয় আসছে মেয়েরা আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। এই ভালোবাসাহীন পৃথিবীতে পুরুষ কিভাবে থাকবে, তারা কি ভেবেছে একবারও?
নারায়ণগঞ্জে নয়মাসের শিশুকন্যাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে ‘বাবা’। শিশুটির অপরাধ মেয়ে হয়ে জন্মানো। এই জনককে কি বাবা বলা যায়! চার বছরের শিশুকন্যা নিজের বাবার দ্বারা ধর্ষিত, দুই সন্তান নিয়ে এক কামরার জীবনে ছোট শিশুটিকে নিয়ে মা যখন খাটে ঘুমিয়ে কন্যাটি তখন বাবার সাথে মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে, মাঝরাত্তিরে গোঙানির আওয়াজে লাইট জ্বালিয়ে মা দেখতে পায় মুখ চেপে ধরে বাবা ধর্ষণ করছে একমাত্র ছোট্ট মেয়েটিকে, বিশ বছর বয়সী মেয়েটি আজ মানসিক রোগী, পড়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, সবাই ভাবে খেয়ালী। কিন্তু সে জানে সেই কৈশোর পেরোবার পর থেকে নীরবে ঘটে যাওয়া জীবনের পাশবিক ঘটনা। দিনের পর দিন নিজের বাবার কাছে ধর্ষিত হওয়ার সেই কুৎসিত ঘটনার সাক্ষী সে নিজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেও যে ছাড়া পায়নি, খরচ চালাবার জন্য নিয়মিত প্রতিমাসে হাজিরা দিতে হয়েছে নিজের ‘বাবা’ নামক ধর্ষকের কাছে।
সৎ বাবার কাছে আট বছর ধর্ষিত হবার ঘটনা তো আমরা সেদিন জানলাম। কয়েকদিন আগে ফারিয়ার ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখলাম। ‘পিতৃত্ব’ তবে কি শুধু একটি নাম হয়ে যাচ্ছে? পিতারা, পুরুষেরা আপনাদের কি একটুও লজ্জা হয় না এই অসম্মান নিতে?
এক ভদ্রমহিলা সেদিন বলছিলেন, স্বামীকে নিষেধ করেছেন দুই বছর বয়সী মেয়ের ডায়াপার না পাল্টাতে। স্বামী অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছেন, কেন? উত্তরে স্ত্রীটি বলেছেন, মেয়ে বড় হচ্ছে, আর স্বামীটি স্ত্রীকে বলেছেন তার মাথা ঠিক আছে তো? এই অবিশ্বাসের জন্য তো ওই নারীটি দায়ী নয়। চারপাশের কত অবিশ্বাস্য ঘটনা তার এই অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে তা সে জানে! আর নিরপরাধ একজন বাবা হয়তো এই অবিশ্বাসে অপমানিত হচ্ছেন। একটি সন্তান জন্মদানে মায়ের সাথে সাথে একবুক ভালোবাসা নিয়ে যে বাবাটিও অপেক্ষা করে, জন্মের পর যে ভালোবাসা দিয়ে সন্তানটিকে বড় করেন সেসব তো মিথ্যা নয়। সন্তান কখন মেয়েসন্তান হয়ে যায় আর তার প্রতি কখন কামনার থাবা বাড়িয়ে দেবে একজন পুরুষ জনক হয়েও, তা তো মায়ের অজানা। বিশ্বাস অথবা এমনটা ঘটার আশঙ্কাই যেখানে ছিল না সেখানে এমন ঘটনা ঘটলে সতর্ক হবেন বৈকি মায়েরা। এতে তো তাদের দোষ দেয়া যাবে না। 
সত্যিকারের বাবা, আর জনক বাবা সবাই সচেতন হোন, এমনিভাবে চলতে থাকলে পুরুষেরা মেয়েশিশুর পিতৃত্ব হারাবেন অচিরেই।।
শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.