জেসিকা ইরফান:
বেশ কয়েকদিন ধরে ফেসবুকের ওয়াল অন্য অনেক ইস্যুর সাথে তোলপাড় করছে পরকীয়া কি জায়েজ? নাকি না-জায়েজ? আসলে বিয়েটাই বা কী? সকলের জানার জন্য বলছি, আইনের ভাষায় ‘ইটস অ্যা পিউর এন্ড পিউর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট বিটুইন অ্যা ম্যান এন্ড অ্যা উইম্যান। (মুসলিম আইন) কমন ল’তেও তাই। হিন্দু আইন অনুযায়ী (দায়ভাগা) এটা একটা ঐশ্বরিক বন্ধন। কোনো একজনের মৃত্যু ব্যতিত এই বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না। (এখন অবশ্য লিগ্যাল সেপারেসন হচ্ছে, তবে ওটা সম্পূর্ণ ডিভোর্স নয়)।
সুতরাং এটা যেহেতু পিউর কন্ট্রাক্ট সেহেতু অন্য সব কন্ট্রাক্টের মতোই এরও কিছু নিয়ম কানুন ও বাধ্য-বাধকতা আছে বিবাহিত পুরুষ ও নারীর ওপর। এগুলো মেনে চলতে উভয়পক্ষই বাধ্য আইনগতভাবে ও সামাজিকভাবে। না মানলে আইনে শাস্তির বিধান আছে দুই পক্ষের জন্যই প্রমাণ সাপেক্ষে। এখন আসি পরকীয়া শব্দের অর্থ কী? এর অভিধানিক অর্থ হলো পরপত্নী, কুমারী, যে প্রণয়িনী পরপত্নী বা কুমারী, নায়িকা বিশেষ। পরকীয়া একটি শব্দ। এটাকে পর + কিয়া অর্থাৎ আলাদা করে দেখানোর কোনো অবকাশ নেই বাংলা ভাষায়।
বিয়ে এখনো একটা ইন্সটিটিউশন আমাদের সমাজে। এটা এই কারণে বলছি কারণ উত্তারিধিকার নির্ণয়ের জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো পন্থা এখনও আমরা খুঁজে পাইনি। অদূর ভবিষ্যতে পেলেও তা হবে অত্যন্ত জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ। জগাখিচুড়িও বলতে পারেন। এবার আসি নৈতিকতার প্রশ্নে। আপনার নৈতিকতা, শিক্ষা, সংস্কার, এথিক্স, ভ্যালুজ কী বলে? এটা কি খুব ভালো কাজ? আপনি আপনার ধর্মগ্রন্থকে সাক্ষী রেখে কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। কিছুদিন পর ওকে যেকোনো কারণে পছন্দ না হলে, বা বনিবনা না হলে, বা মতের অমিল হলে বা যে কোনো পক্ষের দ্বারা অত্যাচারিত হলে আপনি পরকীয়ার আশ্রয় নেবেন? আইনত আপনি তা করতে পারেন না, কারণ এটা এবসোলিউট ব্রিজ অফ কন্ট্রাক্ট।
আপনি সমাজ না মানুন, আপনাকে দেশের আইন মানতে হবে। হবেই। আপনার স্বামী বা স্ত্রী করছে বলে কি আপনাকেও করতে হবে? তাহলে ওর আর আপনার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কোথায় আপনার নৈতিকতা, শিক্ষা, সংস্কার, এথিক্স, ভ্যালুজ ও কমিটমেনট? পথ তো আপনার সামনে খোলাই আছে। তালাক দিন। তারপর করুন আপনার যা খুশি, আপনাকে কেউ না বলতে আসবে না। কিন্তু আপনি ঘরেরও খাবেন, তলারটাও কুড়াবেন, তাতো হওয়ার নয়। এতো স্বাধীনতার অপব্যবহার! অনৈতিকতা!
আমি অনেককে দেখেছি ফ্রাই পেনের গরম থেকে বাঁচতে গিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিতে। নারী বা পুরুষ কি একা একা পরকীয়া করতে পারে, যদি দুই পক্ষের সম্মতি না থাকে? সুতরাং বলছি এটা একটা মারাত্মক ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ। সঙ্গীর বিশ্বাস নিয়ে খেলবেন না। আজ আপনি খেলছেন, কাল আপনার সঙ্গীও খেলবে। যার সাথে খেলছেন, সে যে বিশ্বাসী তারই বা গ্যারান্টি কোথায়?
এখন আসি সাম্প্রতিক সমালোচনা নিয়ে। উইমেন চ্যাপ্টার হয়তো কোনো একটা লেখা ছাপিয়েছে, এখানে সম্পাদকের দোষ কোথায়? নানান জনের নানান মত থাকতেই পারে। উনি তো সবার মতই ছাপান। তো, উনাকে গালাগালি কেন? গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসবে কোনটা উচিৎ ও কোনটা উচিৎ নয়। আপনারা মেয়েরা কিছু বললেই বস্তির ভাষায় গালাগালি শুরু করে দেবেন, এ কেমন ব্যবহার?
অথচ প্রতিদিন সকাল-বিকাল রুটিন করে ধর্ষণ হচ্ছে, কচি শিশু থেকে শুরু করে কেউ বাদ যাচ্ছে না, কই কাউকে তো দেখলাম না রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে!