মনোরমা বিশ্বাস:
কোনো নেতিবাচক কথা লিখতে মন সায় দেয় না। কিছু-কিছু ঘটনা চারপাশে ঘটে চলেছে যা আমাকে ভাবায়, এগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আমি মানুষের সাথে আগে খুব যোগাযোগ রাখতাম। সবসময় বিভিন্নজনের সাথে কথা বলতাম, এরা বেশির ভাগই দুঃখী, খুব দুঃখের জীবনযাপন তাদের- যা আমাকে রীতিমতো ভাবিয়ে তোলে। যতদূর পারি, পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করি। আগে বেশি করতাম। আমার নিজের ছেলে অর্ক স্যুইসাইড করতে গেল- তখন থেকে আমি নিজেকে গুটিয়ে ফেললাম। আমার সংগ্রাম অন্যদিকে মোড় নিল।
(০১) আমার এক বড় আপা- এক পিকনিকে গিয়ে পরিচয়, খুব ভালো ব্যবহার তাঁর। নিজে থেকে এসে আলাপ করলেন। এরপর প্রায়ই ফোনে কথা বলতাম আমরা। আমার নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে তাঁর দুঃখের কথা শুনলাম, তাঁর সমস্যার কাছে দেখলাম আমার সমস্যা কিছুই না। এই আপা দেশে থাকতে সরকারি কলেজের টিচার ছিলেন। দুটো মেয়ে নিয়ে এই দেশে আসেন অন্যের বউ সেজে। স্বামী আগে থেকেই এদেশে থাকতেন। কেন অন্যের বউ সেজে নিজের স্বামীর কাছে আসতে হলো, তা আমি জিজ্ঞেস করিনি। তাঁর স্বামী কীভাবে তাঁর উপর মানসিক টর্চার চালাতেন, তা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বলেছেন আমাকে। তিনি এদেশে এসে প্রথমে দোকানে চাকরি নিলেন। স্বামী সেই দোকানে গিয়ে বলে আসতেন তাঁর বউকে যেন চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। আবার বউয়ের বেতনের টাকা ছলেবলে কৌশলে নিয়ে নিতেন। আপা না দিয়ে পারতেন না। এদেশে নিজের বড় বোন থাকে, স্বামী কখনো সেই বোনের বাসায় যেতে দেননি। বোন ক্যান্সারে মারা গেছেন। আমাকে কাঁদতে-কাঁদতে বলেছেন, ‘তুমি কিন্তু আমার মতো হয়ো না’। এ রকম আরও অনেক ঘটনা আমাকে বলেছেন তিনি।
এই আপার প্রতিবেশীও কিছু কথা বলেছেন, যা থেকে জেনেছি, এই আপার স্বামী কীভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। আপা আরও বলেছেন, বাসায় এসে স্বামী যদি দেখেন ভালো কিছু রান্না হয়েছে, তখন তিনি বউকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। বাসার আনাচে-কানাচে খুঁজতেন কোনো পুরুষের উপস্থিতির চিহ্ন পাওয়া যায় কি না। শুধু তা-ই নয়, অনেক বাজে কথা বলে তাঁর সন্দেহের কথা প্রকাশ করতেন।
(০২) এবার আসি এক দিদির ঘটনায়। এই দিদি অনেক আগে এদেশে এসেছে। তিন ছেলে-মেয়ে। স্বামী তার উপার্জিত টাকা নিয়ে নেয়, না দিলে অনেক খারাপ আচরণ করে, ঝগড়া করে। শান্তি রক্ষার জন্য দিদি টাকা দিয়ে দেয়। এদেশে আসার প্রথম দিকে কাজ করতে দিতো না। এমন-কী বাইরে বেরোনো পর্যন্ত নিষেধ ছিল। স্বামী কাজে গেলে কিছুক্ষণ পর-পরই ফোন করে খোঁজ নিতো। বাচ্চা আনতে স্কুলে যেত, ফিরে শুনতে পেতো ফোন বেজেই চলেছে, দৌঁড়ে এসে ফোন ধরতো, আর স্বামীর ধমকানি শুনতে হত।
‘কেন এতো দেরি হলো ফোন ধরতে’? স্বামী বাসায় এসে খাটের নিচে, বাথরুম চেক করতো কোনো পুরুষ বাসায় এসেছিল কি না। দিদির ছোট বোন থাকে নিউইয়র্কে, কিন্তু সে বোনের বাসায় যেতে পারে না। ছোট বোনের স্বামীকে নিয়ে এতো নোংরা কথা বলে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আরও অনেক ঘটনা বলেছে, আমি একদিন বিরক্ত হয়ে বলেই ফেলেছি, ‘এই লোকটা অসুস্থ’।
(৩) এটা আমার এক বান্ধবীর ঘটনা। সে ঘরে থাকে। খুব সুন্দরী, স্মার্ট, খুব সুন্দর করে কথা বলে। আমি তো তার কথা শোনার জন্যই বন্ধুত্ব করেছি। ফোনে অনেক কথা বলেছে সে। তার স্বামী ট্যাক্সি চালায়, রাতে। স্বামী তার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। স্বামী তাকে সন্দেহ করে। কারও সাথে কথা বলতে দেখলেই তাকে নিয়ে খুব নোংরা কথা বলে। একদিন জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ রকম কেন করে’?
উত্তরে সে বললো, ‘মেয়েদের যদি ঘায়েল করতে হয়, তা হলে তার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বললেই ঘায়েল করা হয়ে যায়’। আমার বান্ধবী কাজ করছে, সাংসারিক কাজ। স্বামী রাতে ট্যাক্সি চালাতে গেছে। হঠাৎ দেখে স্বামী তার পেছনে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। সে তো ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। স্বামীর কাছে বাড়ির চাবি আছে, রাতে দেখতে আসে বউ তার অনুপস্থিতিতে পরপুরুষের সাথে কিছু করছে কি না।