শারমিন শামস্:
পরকীয়া একটি ব্যক্তিগত পছন্দ, ইচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত। পরকীয়াকে জাস্টিফাই করার কিছু নাই। আবার পরকীয়াকে জাজ করারও কিছু নাই। কারো ব্যক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্ত ও আচরণকে আপনি আমি খারাপ অথবা ভালো বলে রায় দিয়ে দিতে পারি না।
নৈতিকতার মানদণ্ডে পরকীয়া সঙ্গীর সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। কিন্তু যে পরকীয়া করছে, সে এই প্রতারণার পক্ষে কোন না কোন যুক্তি দাঁড় করাবে এবং কখনও কখনও কারো কারো কোন কোন যুক্তি আপনাকেও ভাবনায় ফেলে দিতে পারে।
যে সমাজে বিবাহকে চূড়ান্ত এবং আজীবন বহনে বাধ্য সামাজিক পারিবারিক সিদ্ধান্ত বলে গণ্য করা হয়, সেই সমাজে পরকীয়ার মাত্রা বেশি হবে, এটাই সত্যি। মানুষ কোনো প্লাস্টিক বা সিরামিকে তৈরি পাত্র নয়, ফ্যাশন হাউজে ঝুলিয়ে রাখা জামা নয়, সুদৃশ্য শোপিসও নয়। মানুষ বিচিত্র। বিচিত্র তার মনোজগৎ, তারো চেয়ে বিচিত্র তার চাহিদার পরিধি। তাই দীর্ঘ জীবনযাপনে সে কখন কীভাবে কোনদিকে নিজের মনোভূমিকে ছড়িয়ে বিছিয়ে দিয়ে সুখি হতে চাইবে, তা কেউ বলতে পারে না।
পরকীয়ার ক্ষেত্রে শরীরের বিষয়টি হয়তো অনেক মুখ্য হয়ে ওঠে। আর শরীরের বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠাটাও কোন অপরাধ নয়। যদি মানসিকভাবে সুখি হওয়ার চাহিদা আপনার মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে এটিও সম্ভব যে আপনি শারীরিকভাবেও সুখি হতে চাইতে পারেন। সেটি আপনার সঙ্গে জুড়ে দেয়া সঙ্গীর দ্বারা না ঘটলে আপনি নতুন সঙ্গী খুঁজবেন। সকলেই যে খুঁজবে, তাও না। কিন্তু খুঁজুক আর নাই খুঁজুক, দুই পক্ষের ভিতরেই অতৃপ্তি থেকে যাবে। শারীরিক বা মানসিক সে যাই হোক। একে আপনি চাইলে স্বীকার করতে পারেন, না চাইলে করবেন না- সেও আপনারই ইচ্ছে। একে কেউ জাজ বা জাস্টিফাই কোনটাই করতে পারে না।
সমস্যা হলো, বিবাহকে আমরা অধিকাংশই ধারণ করি না। বিবাহ একটি নিয়ম, বিবাহ করতে হয় এবং আমরা বিবাহ করি। তারপর সেই বিবাহকে আমরা বয়ে নিয়ে যাই জীবনের শেষ অব্দি। সন্তান আসার পর সেই বিবাহকে আমরা সুপার গ্লু দিয়ে নিজেদের সাথে আটকায়া দিই।
এখন চূড়ান্ত অপছন্দ, অনৈক্যের পরও এই বিবাহকে ভাঙ্গার বা ছাড়ার শক্তি, সামর্থ আমাদের নাই। বিবাহ দুইটি মানুষের হয় না। এই সমাজে বিবাহ হয় দুই পরিবারে। আবার মেয়েরা বিবাহ করে না, বিবাহ তাদের হয়, কারণ বিবাহের ভিত্রেই তাদের স্ট্যাবলিশমেন্ট নির্ভর করে। তারা ভাবে, বিবাহে তাদের গতি হয়। আর্থিক গতি, নিরাপত্তজনিত গতি। আবার বিবাহ মানুষের বহুগামিতার উপ্রে একটা রশি বেঁধে নিয়ন্ত্রণ করার একটা চেষ্টা।
তো বিবাহের নানারকম উদ্দেশ্য ও উপযোগিতা আছে। সেইসব উদ্দেশ্য ও উপযোগিতা ছাপায়া সঙ্গীর খোঁজেই মূলত মানুষ বিবাহ করে। কিন্তু সেই সঙ্গী তার আনন্দ বেদনার সঙ্গী না হয়া নিত্য যন্ত্রণা হয়া উঠলেও এই সমাজে সেই যন্ত্রণাকেই ঠেলে খুঁজে নিয়া যাওয়াটাকেই নিয়ম হিসাবে ধরা হয়। তাই এ সমাজে পরকীয়া বেশি।
এখন এই পরকীয়ারে আপনে যদি আপনার নিজস্ব ধ্যানধারণা ও রুচি চিন্তা দিয়া কোন ফরম্যাটে ফালায়া এর কাটা ছেঁড়া করতে চান, সে আপনে করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখা উচিত, কোনো সম্পর্কের গভীরতার ভিত্রে তৃতীয় পক্ষ আইসা আসলে মূল জায়গায় কোনকালেই ঢুকতে পারে না। আপনে বাণী দিবেন, আপনে উপদেশ বর্ষণ করবেন, সব ঠিক আছে। কিন্তু হৃদয় বা শরীরের টানে যে যার মতো যাবে।
দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় প্রেমে পড়লে, সেক্ষেত্রে কে কার, কে কোথায়, জগৎ সংসার সব বিলুপ্ত হয়। তাই পরকীয়া যে করে, সে আপনার বাণীই কানে তুলবে না।
তো যাই হোক, যে কারণে এ কাহিনী লিখলাম, সেইটা হইলো, বহুকাল আগে (সম্ভবত বছরখানেক আগে) সাদিয়া নাসরিন একটা লেখা লিখছিলেন- পরকীয়া না, স্বকীয়া করি। সেটা ছাপা হইছিল উইমেন চ্যাপ্টারে। সেই লেখা আজ হঠাৎ কোন অন্ধকার থেকে কে জানি টাইনা বের কইরা শিরোনাম চেইঞ্জ কইরা একটা রগরগা শিরোনাম দিয়া বাংলামেইল নামের এক অখ্যাত পোর্টালে ছাপাইছে লেখিকা বা উইমেন চ্যাপ্টার কারো অনুমতির তোয়াক্কা না কইরা। তো বরাবর যা হয়, লেখা না পইড়া, শিরোনাম দেইখাই নারীবাদীদের গালাইয়া লাত্থাইয়া হস্তমৈথুনের বিকল্প সুখ আহরণ শুরু হয়া গেছে। শুরু হইসে নারীবাদরে গালি হিসাবে ধইরা নিয়া মূর্খ অকথ্য কথন। পুরুষতন্ত্র বস্তুটাকে পুরুষের দোষ ধইরা নিয়া ছাগলামি।
এইসব দেইখা আমার কোনো জ্বালা যন্ত্রণা হয় না। যে কোনো রেভ্যুলুশানে অংশগ্রহণকারীরা রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিবেন এটাই স্বাভাবিক ও সত্য। রক্তপাত ছাড়া আপনি কিছুই অর্জন করতে পারবেন না। যদি পারেন, তবে সেই অর্জন হবে ভুয়া অর্জন। রক্তপাত হইতেসে, অতএব ঠিক পথে আছেন।
শুধু একটা কথাই বলবার। আমাদের ঐক্য, আমাদের পরস্পরিক ভালোবাসা, আমাদের বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, আমাদের প্রেম যেন আরো অটুট আরো কঠিন, আরো মজবুত হয়। আমাদের একে অপরকে জড়িয়ে মড়িয়ে ধরে থাকার শক্তিকেই ওরা সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে। আর ভয় পাচ্ছে বলেই ওরা এতো তড়পায়, ওদের এতো ভ্যা ভ্যা দশদিক মাতায়।
ভালোবাসা- জগতের সকল নারীবাদীর জয় হোক।