পরকীয়া কোনো সমাধান না

ফড়িং ক্যামেলিয়া:

আমি ভাবছিলাম পুরুষদের জন্য বেশ্যালয় আছে, তবে নারীদের জন্য বেশ্যালয় নেই কেন? পরে মনে হলো, খুব অন্যায় চাওয়া। দুটোই নির্যাতন। বেশ্যালয় থাকাই উচিৎ না। কারও আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়ে তাকে বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করা ক্রাইম।

অবশ্য কেউ যদি স্ব-ইচ্ছায় যৌনতা বিক্রি করতে চায়, সেক্ষেত্রে আপত্তি নেই। সুইডেনে একটা চমৎকার আইন আছে, সেটা হলো, কেউ যদি যৌনতা বিক্রি করে তবে সেটা বৈধ, কিন্তু কেউ যদি কেনে তবে সেটা অবৈধ! তার মানে হলো, এখানে বেশ্যালয়ের সুযোগ নেই। 

এখন প্রশ্ন হলো যৌন সঙ্গী পাবার উপায় কী? আর কেউ যদি জীবনসঙ্গীর সাথে সুখী না হয়, অথবা সে কোনো ধরনের মানসিক বন্ধনে না গিয়ে শুধু শারীরিক সম্পর্কেই যেতে চায়, সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, কোন কিছু অর্জনের জন্য যেমন চেষ্টা করতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়, ঠিক তেমন মনের মতো সঙ্গীর জন্যও নিজেকে গড়ে তোলা খুব জরুরি। ধরুন, আপনার ইচ্ছে জাস্টিন বিবারের মত সঙ্গী পাবার, তাহলে অন্তত আপনাকে সেলিনা হতে হবে। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। মূল বক্তব্য হলো, সঙ্গী চাইলে নিজেকে সঙ্গীর যোগ্য করে তুলতে হবে এবং সঙ্গীকে যোগ্যতা বলে জয় করে নিতে হবে। সেটা নারী হোক কিংবা পুরুষ, উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে , কেউ যদি কোনো ধরনের মানসিক বন্ধনে না গিয়ে শুধু শারীরিক সম্পর্কেই যেতে চায়, তাহলে এই বিষয়ে করণীয় হলো, স্পষ্টবাদী হওয়া। ইউরোপে যেটা হয়, এখানে আপনি যে কোনো ছেলে কিংবা মেয়েকে নাচের প্রস্তাব দিতে পারবেন, খাবারের বিল দিতে পারবেন, এবং তার সাথে কোনো ধরনের মানসিক এটাচমেন্ট এ না গিয়েও খুব ভদ্রভাবে তাকে আপনার বাসায় নেবার প্রস্তাব করতে পারবেন। হয় সে খুবই ভদ্রভাবে রিফিউজ করবে, অথবা আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করবে। এটা বলা জরুরি যে এই ক্ষেত্রে এরা প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। আপনি গেলেন, আর সঙ্গী পেয়ে যাবেন, এই সব ভাবে শুধু বলদ সম্প্রদায়।

যেহেতু আমাদের দেশে ছেলেমেয়ে উভয়ই মানসিক এটাচমেন্ট এর আগে শারীরিক বিষয়ে যেতে অভ্যস্ত না, আবার তাদের কাছে লিটনের ফ্ল্যাটও প্রচণ্ড আকর্ষণীয়, সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে করণীয় হলো দুজন দুজনার কাছে স্পষ্টবাদী হওয়া। ভালবাসি বলে ছল করা অন্যায়। একজন চাইছে, অন্য জন চাইছে না, সেটা হবে না। আর সম্পর্ক ভেঙে গেলে…. ও আমাকে ব্যবহার করেছে; কিংবা, আমি ওকে ব্যবহার করেছি- টাইপ মানসিকতা পরিহার করা।

দুজনের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হলে ছেলেটা হিরো আর মেয়ে ইউজ হয়ে গেছে, এই মানসিকতা থাকলে সম্পর্কে যাবারই দরকার নাই। দুইজনকে-ই এই সম্পর্কের দায় নিতে হবে। সময়টা যেহেতু দুজনার ছিল, দায় একজন কেন নেবে?
প্রসঙ্গ যখন পরকীয়া, সেক্ষেত্রে বিয়ে নামক সম্পর্কের মধ্যে থেকে অন্য কোন সম্পর্কে যাওয়া মোটেও কোন সমাধান না। তার চেয়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে নতুন সম্পর্কে জড়ালে অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অনেকে বলে সামজিক কারণে চাইলেও বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসা যায় না, তার চেয়ে পরকীয়া ভালো। প্রশ্ন হলো, ধরে নিলাম সাময়িক ভালো, কিন্তু যে সঙ্গীর সাথে নিত্যবাস তাকে যদি ভাল-ই না লাগে, তবে জীবন এমনিতেই দুর্বিষহ হয়ে যায়। সেখানে থাকার কোনো মানেই হয় না। এর সমাধান হিসেবে পরকীয়াকে বেছে নিলে এক সময় সেটা সামনে আসবেই, তখন জটিলতা আরও বাড়বে। তাই সমাজের দোহাই দিয়ে সমস্যা থেকে লুকিয়ে, নতুন সমস্যা তৈরি করা কোনো সমাধান না। এটা বরং অন্যায়। তার চেয়ে আলাদা হওয়ার সাহস করুন।

আর যারা মুরুব্বিদের পছন্দ করা ছেলে মেয়ে বিয়ে করতে চান তাদের ক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্নই আসে না ।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.