ঋদ্ধ অনিন্দ্য:
নারায়ণগঞ্জে নয় মাসের শিশুকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলেছে একজন বাবা। জানি “বাবা” শব্দটা বেমানান এক্ষেত্রে, কিন্তু এই ব্যক্তি যে এই সন্তানের জনক, তা বোঝানোর আর কোনো প্রচলিত শব্দ খুঁজে পেলাম না।
কন্যা সন্তান জন্মেছে দেখে স্ত্রী’র ওপর অত্যাচারের খবর অনেক পুরনো। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে একটা নয় মাসের শিশুকে গায়ে পেট্রোল ঢেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলার কথা আমি কখনো শুনিনি।
আমি আজকে ভীষণভাবে লজ্জিত যে আমি একজন পুরুষ মানুষ। আমি ওই কুলাঙ্গারটার স্বজাতি! আমি যখন খুব মন দিয়ে ফেইসবুকে বসে ফেমিনিজম অথবা এলজিবিটি রাইটস কবচাই, ঠিক তখন আমার দেশের কোনো এক কোণায় নারী হয়ে জন্মানোর “অপরাধে” আগুনে পুড়ে মারা যায় নয় মাসের কোনো এক শিশু।
এই ক্ষুদ্র দেশ আর তার খর্বাকৃতির মানুষগুলো এই কারণেই বিচিত্র। এই লোকটাকে ঠিক এই শিশুটির ‘বাবা’ বলে ডাকা যায় কিনা আমি জানি না। আমি অন্তত এই ব্যক্তিকে কারো পিতা, কারো স্বামী বলে স্বীকার করতে নারাজ। আমাদের এই “সুন্দর” পৃথিবীতে এই যে একটি শিশুর নয় মাসের যাত্রা, সেই যাত্রায় আমি বা আপনি তাকে কী দিয়েছি ভেবে দেখুন তো! আমাদের দুনিয়ায় এসে এই যে এই শিশুটি এভাবে হত্যার শিকার হলো, তার দায়ভার কি আমার আপনার নেয়ার এতোটুকু প্রয়োজন নেই?
আমরা, এই দেশের প্রতিটা নাগরিক কি এই নয় মাসের মৃত শিশুটির কাছে অপরাধী নই? বাংলাদেশে ঘটনার কোনো অভাব নেই। কাল নতুন কোনো ঘটনা এসে ঢেকে দিয়ে চলে যাবে এই ঘটনাটিকে। অন্য সবার মতো আমিও হয়তো এই শিশুটিকে ভুলে যাবো। এখন আর কোনো ঘটনার বিচার চাই না। চাইতে লজ্জা করে। শুধু ভয় পাই, কারণ এই লোকটাকে ফাঁসির দড়িতে না ঝুলালে এমন আরও অনেক ঘটনা রোজ ঘটবে আমি জানি।
একটি ঘটনা নিয়ে খবর হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি, না জানি এমন আরও কত দুর্ভাগা কন্যাসন্তান রোজ জন্মায় এ বঙ্গে। আমাদের কারো কিচ্ছু এসে যাবে না আমি জানি। জীবন সেভাবেই চলতে থাকবে হাজার বছরের নিয়মে। কেউ মাঝরাত্তিরে একটা শিশুকণ্ঠের কান্না শুনতে পাবে না। কেউ জানবে না এই দেশ কত অভাগা। আমরা ক্ষমা করে দেবো নিজেদের এবং জানবো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়েও এ নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। এরকম হাজার ঘটনা রোজ ঘটলেও তার কোনো দায়ভার আমাদের নেয়ার প্রয়োজন নেই।
আমি চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগেই। এখন শরীর হয়ে গেছে অবশ। মস্তিষ্ক ক্ষয়ে যাচ্ছে ধীরগতিতে। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছি দ্রুত এবং ভীত হচ্ছি চারপাশ দেখে। এমন জীবন, এমন সমাজ চাইনি। বাঁচার ইচ্ছেটুকু হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।