ডিপ্রেশন নিয়ে কিছু কথা

অভয়ারণ্য কবীর:
উইমেন চ্যাপ্টারে সম্প্রতি সীমান্তিকা হিরণ্য নামে একজন একটা লেখা লিখেছেন ডিপ্রেশন ও স্যাডনেস নিয়ে। যেখানে তিনি দুটো ব্যাপারকে পার্থক্য করেছেন। এটা ভালো দিক। আসলে আমাদের পার্থক্য করা দরকার কোনটা ডিপ্রেশন আর কোনটা স্যাডনেস। এর জন্য তিনি ধন্যবাদ পেতেই পারেন!
বাট! তার পুরো লেখাটায় সমাজ বাস্তবতা থাকলেও সমাজ বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করার ব্যাপার নাই। আর সেখানেই আমার জিজ্ঞাসা।
পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি মহান ও ব্যক্তি থেকেই যাবতীয় সমস্যাকে দেখার প্রবণতা থাকে। এই লেখাটিতেও তিনি তাই করেছেন।ব্যক্তিকে সামনে এনে সমাধান দিয়েছেন। অথচ তিনি নিজেই লেখায় দেখালেন যে, সুইসাইড শুধু একজনের ব্যাপার না, বা ব্যক্তির ব্যাপার না। এর সাথে তার আশেপাশের বন্ধুরা থাকে।
আবার আমি মনে করি সুইসাইড বা ডিপ্রেশন আমাদের মতো দেশগুলোতে যেখানে কিনা ব্যক্তির স্বাধীনতা নেই, সেখানে ব্যক্তির কারণে যতো না হয়, তার চেয়েও বেশি হয় পারিপার্শ্বিক চাপে। তাই  ব্যক্তির সমস্ত কারণকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখাতেও সমস্যা থেকে যায়। এতে পুরো ব্যবস্থা আড়াল হয়ে যায়, আপনি চান বা না চান।
আমাদের মতো দেশে ডিপ্রেশন তৈরি হয় সমাজ কর্তৃক। কারণ সমাজ এমন কিছু মিথ আমাদের সামনে দাঁড় করায় যাকে ভিত্তি করেই আমরা ডিপ্রেশনে ভুগি। ডিপ্রেশন এখানে ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে বিরাজ করে না।
যেমন ধরুন, পরীক্ষায় ফেল করলেই মানুষ কেন ডিপ্রেশনে ভূগে বা সুইসাইড করতে চায়?
কারণ রাষ্ট্র এখানে পাশ ফেলের মধ্যে তার নাগরিকের সামগ্রিকতা বিচার করে। আর যখন কোনো ছাত্রছাত্রী এই ক্ষেত্রে ফেল করে, তখন সে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়, ও সমাজ পরিবার তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করে। যার ফলে একজন ব্যক্তি সুইসাইড করতে প্রবৃত্ত হয়। ডিপ্রেশন নিয়ে আলাপ করতে হলে এই বিষয় নিয়ে আপনাকে আলাপ করতেই হবে। না হলে এখানে আবারও আপনি নিজেও একই ভুল করবেন। ডিপ্রেশনের জন্যে নিজেকেই দায়ী করবেন। আড়ালে থেকে যাবে মূল কারণ।
এজন্য ডিপ্রেশনের সমাধান হিসেবে অবশ্যই সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাপারটা আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে। সমাজ পরিবর্তন না হলে এই সমস্যার আমূল সমাধান সম্ভব নয়। তরুণ লেখকদের এটা অনুধাবন করতে হবে। যারা কিনা সামনে আমাদের পথ দেখাতে পারেন।
তাই কেউ যদি ডিপ্রেশন নিয়ে কোনো সাজেশন দেন, তাহলে অবশ্যই এর জন্য সমাজকে দায়ী করেই সমাধান বের করতে হবে। নইলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াবে যে, অসুখ প্রতিরোধের চেয়ে অসুখের পরে ঔষধ শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে!
শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.