চৈতী সাহা:

বন্ধু বললো, যখন এরকম মনে হবে তখন কিছু খেতে চাইবি। দেখবি মরার ইচ্ছা চলে যাবে। কথাটার তখন গুরুত্ব দিইনি। গত দুইদিন ধরে নিজেকে সময় দিচ্ছি। অনেক অবজার্ভ করার পর খেয়াল করলাম, মুখ নাড়ানোটা খুবই জরুরি। হয় কথা বলতে হবে, না হয় কিছু খেতে হবে এবং এমন খাবার খেতে হবে, যেটা দীর্ঘক্ষণ মুখের মধ্যে নাড়াচাড়া করা যায়। মুখ দীর্ঘসময় বন্ধ থাকলে, স্থির থাকলে অবসন্নতা ঘিরে ধরে। আর কথা বলতে বলতে যদি অনেক জোরে শব্দ করে হেসে ওঠা যায়, তাহলে অবসন্নতা, হতাশা অনেকটাই ঝেড়ে ফেলা সম্ভব।
এই কথাগুলো আজই যে মনে হলো, এমনটা না। আগে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় মনে হয়েছে। কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে ভাবনাগুলোকে এক জায়গায় করা হয়নি। সারাদিন চেষ্টার বেনিংটনের আত্মহত্যা নিয়ে পোস্টগুলো দেখেছি। একটু আগে আসিফ মহিউদ্দীনের পোস্টে দুটো লাইন নজর কাড়ল। ঠিক এই কথাটাই আমি একসময় খুব বলতাম আর একজন মানুষও সেটা পছন্দ করেনি। আমার কথাটা এতোটা সংক্ষিপ্ত আর পরিমার্জিত ছিল না। অর্থটা এক ছিল।
“জীবনের উপর অধিকার কেবল তোমার, না রাষ্ট্রের,না ধর্মের, না সমাজের। এ জীবন তুমি রাখবে কী রাখবে না সে সিদ্ধান্তও তোমার হওয়া উচিৎ।”
ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য আমি নিজে একটা কথা বলে থাকি, যদি কোন বিশেষ শক্তিই জন্ম বা মৃত্যুর কারণ হয়, যদি তার ইশারা ছাড়া সত্যিই গাছের পাতাও না নড়ে তবে একজন আত্মহত্যা করে কীভাবে? সে এই চেষ্টায় ব্যর্থ হতে পারতো। অনেকেই ব্যর্থ হয়। তাহলে নিশ্চয়ই তার মৃত্যুটাও এভাবেই সেই বিশেষ শক্তির ইশারাতেই হয়েছে।
বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যুসংবাদ শুনে যখন সবাই হা হুতাশ করে, বা এরপরের জীবনের শুভকামনায় অভ্যস্ত ভদ্রতা করে, তখন আমি মনে মনে বলি বেঁচে গেল। যদি মৃত ব্যক্তির উপর কেউ অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে নির্ভরশীল থাকে, তবে অবশ্যই জীবিত মানুষগুলোর জন্য দুঃখ পাই। প্রকাশ করি না, কারণ করতে পারি না এবং করাটা খুব কাজেরও মনে হয় না।
অনেক বছর বাঁচতে বাঁচতে পৃথিবীর প্রতি মায়া পড়ে গেছে। মৃত্যুতেই যখন সব শেষ, তখন বেঁচে থেকে দেখাই যাক পৃথিবীর মানুষগুলোকে। যদি আমি পৃথিবীকে দেখি, পৃথিবীর কাছে কিছু আশা না করি,নিজেকে শুধুমাত্র একজন দর্শক মনে করি তবে যতদূর অব্দি সহ্য করা যায় ততদূর অব্দি বেঁচে থাকাটাই অপেক্ষাকৃত লাভজনক বলে এখন মনে হয়। মৃত্যুকে বেছে নেয়ার হাজারটা কারণ আছে,বেঁচে থাকার জন্য কেবল একটা কারণ আছে, ‘যেহেতু মৃত্যুতেই সব শেষ,তাই আর যে ক’টা দিন বেশি বেঁচে থাকা যায়!’
শেয়ার করুন: