মেয়েকে ধর্ষণের পথে ঠেলে দিচ্ছেন না তো!

শিপ্ত বড়ুয়া:

আপনার মেয়ে আছে, দেখতে শুনতে খুব ভালো। সবেমাত্র ক্লাস নাইন অথবা টেন এ পড়ছে। আপনার মেয়ে, দায়িত্ব আপনার যতদিন না সে নিজেকে বুঝতে শিখছে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হচ্ছে। ছোটকাল থেকে কত টাকা-পয়সা খরচ করে মেয়েকে বড় করে তুললেন নিশ্চয়ই তার একটি সুন্দর জীবন তাকে উপহার দেওয়ার জন্য।

মনে আছে? ছোটবেলায় মেয়ের একটু অসুখ হলে কিংবা কেউ তাকে টিজ করলে আপনি কতটুকু চিন্তিত হতেন! এখন প্রশ্ন সে মেয়েকে আপনি ধর্ষণের পথে ঠেলে দিচ্ছেন কিনা? বুঝতে পারেননি কী বলছি আমি?

হঠাৎ ১০ কার্টুন মিষ্টি, ২ কেজি আপেল, ৩ কেজি কমলা আর ২-৫ জন মানুষ আপনার বাড়িতে বেড়াতে এলো। বয়স্ক নারী আর বয়স্ক পুরুষ সাথে দু’একজন ইয়াং ছেলেমেয়ে, কিন্তু আপনি তাদের চিনেন না, সাথে আপনার এলাকার এক পরিচিত আত্মীয় আছে। নিশ্চয়ই আপনি তাদের ঘর থেকে চলে যেতে বলবেন না, কারণ আপনার এলাকার এক মহিলাও তাদের সাথে আছে। তো, তাদের বসতে দিলেন, তাদের হাত থেকে খাবারগুলো ভেতরে নিয়ে রাখলেন। আপনি এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন তারা কেনো এসেছে!
এখনো কি বুঝতে পারছেন না?

আচ্ছা। কিছু অতিথি যেহেতু বাসায় এসেছে আপনিও তাদের সাথে গিয়ে আপনাদের দামি সোফায় বসলেন, আর হাসিমুখে পরিচিত হতে লাগলেন। হঠাৎ দেখলেন তারাও ঘেরা-বেড়া পার হয়ে আপনার আত্মীয় হয়ে বসে আছে। প্রায় এরকম আধ-ঘন্টা পার হওয়ার পর অতিথিদের মধ্য থেকে একটু বয়স্ক নারী আলোচনার টপিক আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসলো।

“আমার ছেলে ফ্রান্সে থাকে, সেখানে মেলা টাকাকড়ি কামাচ্ছে আর ফ্রান্সের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে। আমরা তো আর বেশিদিন বাঁচবো না, ছেলের একটা বৌ আমরা দেখে যেতে চাই, তাছাড়া তার বাবাও অসুস্থ”। সেই মুহূর্তে আপনার গ্রামের পরিচিত নারীটি বলে উঠলেন আমার ভাইয়ের মেয়ে খুব ভালো, লেখাপড়ায় সে দুর্দান্ত আর দেখতে মাশাল্লা!!

আপনার মেয়ের কথা বলছিলো আপনার গ্রামের আপনার আত্মীয়টি, আর ছেলের টাকাকড়ির কথা শুনে এখন আপনিও বলা শুরু করলেন, হ্যাঁ, আমার মেয়ে খুব ভালো, দেখতে অনেক সুন্দরী, তাছাড়া ব্লা ব্লা ব্লা…। মেয়েকে ভেতর থেকে ডাক দিলেন, সুখো সুখো, মা একটু বাইরে আয় তো! মেয়ে আপনার এখনও ছোট, ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে, তেমন কিছুই বোঝে না। অগোছালো হয়ে সে ভেতর থেকে বেরিয়ে আপনার পাশের সোফায় বসলো। তখনই বয়স্ক অপরিচিত ওই নারী আপনার মেয়ের নাম, কী করে না করে জিজ্ঞাসা করলো। সবশেষে আপনার মেয়েকে আবারও পাঠিয়ে দিলো রুমের ভেতর। মাশাল্লা, এই মেয়ে তো আমার ছেলের বৌ হিসেবে দারুণ মানাবে। এবার নিশ্চয়ই সব বুঝলেন কেনো তারা অপরিচিত হয়েও আপনার বাড়িতে এতো হাতি-ঘোড়া নিয়ে বেড়াতে এসেছে?

আপনার ক্লাস নাইন-টেনে পড়া সুখোকে তারা তাদের ৩৫ বছর বয়সী ফ্রান্সের পেঁয়াজ কাটার ছেলের বৌ করে নিয়ে যেতে চায়। আপনি তো এসব বোঝেন না! রাতে ঘরে আপনার স্বামী আসলো, বিছানায় শুয়ে পান খেতে খেতে বললেন, এই আজকে না সুখোকে দেখতে এসেছিলো। ছেলে ফ্রান্সে থাকে, মেলা টাকাকড়ি কামায়, বিয়ের পরে আমাদের মেয়েকেও ফ্রান্স নিয়ে যাবে। বেশ!!
আপনার গাধা স্বামীটাও ফ্রান্স বনে গেলো। রাজী হয়ে তার কয়েকদিন পরে টেলিফোনে ছেলের মা-বাবাকে খবর দিলেন আপনার বাড়িতে আসতে, মেয়ের বিয়ের পাকা কথা বলতে।

মেয়েকে এখনো বললেনই না, তার কয়েকদিন পর বিয়ে দিয়ে দিবেন! তাকে চলে যেতে হবে তার পিতার ঘর ছেড়ে। তার অজান্তেই কিছুদিন পর তুলে দিবেন একজন অপরিচিত, দ্বিগুণ বয়সী, বলা চলে একজন ধর্ষকের হাতে। ছেলের মা – বাবা এলো আবারও এক গাদা জিনিষ পত্র নিয়ে, বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা শেষ। তারা এবার চলে গেলে মেয়েকে বললেন, ‘মা তুই খুব সুখে থাকবি, তোরে ফ্রান্স নিয়ে যাবে এই সেই এবং ছেলের ভালো ভালো সার্টিফিকেট দিলো। মেয়ে আপনার এখনো ক্লাস নাইন- টেনে পড়ছে, কী আর বলবে! জীবনের মানেই বা কতোটুকু বোঝে! 
বললো, তোমরা যা ভালো মনে করো।

ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন, শ শ লোক খাওয়ালেন, আর বিপুল খুশি হলেন। কিন্তু একবারও বোঝার চেষ্টা করেননি আপনার মেয়ে এখনও কত ছোটো, আর যার সাথে বিয়ে দিচ্ছেন সে কতো বুড়ো, আপনার মেয়ের জননেন্দ্রিয়ই এখনও গড়ে উঠেনি ঠিকমতো, ফলে পুরুষটির পুরুষাঙ্গ আপনার মেয়ের যোনি ছিঁড়ে খান খান করে দিবে! তা আপনি একবারও ভাবেননি।

আপনার মেয়ে জন্মেছে, দায়িত্ব বিয়ে দেওয়া, তাই ক্লাস নাইন-টেনে ওঠামাত্র বিয়ে দিয়ে দিলেন মেয়ের সুখের লোভে। অথচ সুখো আপনার সুখীই হলো না, অসহ্য যন্ত্রণা নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে তাকে। কিছুই বলতে পারছে না সুখো। ১৮ বছর পার হতে পারেনি এখনও সুখো, কিন্তু হয়তো কয়েক মাস পরেই সে মা হবে, সবাই বৌ বৌ করে ডাকবে। প্রতিদিন প্রতিরাত সুখোর অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে শুতে হবে তার স্বামীর সাথে।

আমরা জানি ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়া তার সারাজীবনের জন্য অভিশাপস্বরুপ। ১৮ বছরের কম বয়সে মা হলে তার জীবন – মৃত্যুর সাথে চলতে হয়। এও জানা আছে, একজনের ইচ্ছায় অন্যের অনিচ্ছায় বিছানায় যাওয়া আর ধর্ষণ একই কথা।

প্রতিরাতে আপনার মেয়ে হয়তো তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু তার স্বামী তাকে বাধ্য করবে, কিছুই বলতে পারবে না আপনার মেয়ে, কারণ এই ধর্ষণের লাইসেন্সটা মা-বাবা হয়ে আপনারাই দিয়েছেন। সুতরাং মেয়ের সুখের লোভে পড়ে ধর্ষকের হাতে তুলে দিচ্ছেন কিনা তার একটু খেয়াল রাখুন। না হয় এতো যত্ন করে গড়ে তোলা ঘরের একমাত্র মেয়েটিকে সারাজীবন ধর্ষণ করবে ধর্ষক পুরুষটি।

লেখক: ছাত্র, আইন বিভাগ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.