সালমা লুনা:
এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট নামক এক পেইজে দেখলাম সৌদি আরব থেকে গৃহকর্মীর কাজ করে আগত এক নারীর কিছু টাকা অভিনব উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক। নারীর বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতার ফলে সেই প্রতারক অবশ্য ধরাও পড়েছে। হয়তো তার বিচার হবে সাজাও হবে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেলো যে টাকা খোয়া গিয়েছিলো তার পরিমাণ 431 রিয়াল, অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় মাত্র নয় হাজার টাকা এবং এটি ওই নারীর প্রবাসের কর্মজীবনের ছ’মাস বাইশ দিনের বেতন!
শুনে অবাক হলাম। প্রায় সাতমাসে তার আরব মালিক তাকে এই ক’টি টাকা আর আসার বিমান টিকিট ধরিয়ে দিয়ে বিদেয় করেছে! যা মাসিক বেতনে হিসেব করলে মাত্র তের থেকে চৌদ্দশ টাকা! মাত্র এই কটি টাকার জন্য আরব দেশে নারী শ্রমিক অর্থাৎ গৃহকর্মী পাঠানো হয় সরকারিভাবে!
ওখান থেকেই আরো জানলাম সরকারি প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি চটকদার বিজ্ঞাপনও নাকি প্রচার করা হয় নারীদের আগ্রহী করতে।
আমরা এখন সবাই মোটামুটি জানি এই নারীদের সাথে প্রবাসজীবনে কী কী ঘটে থাকে। নানারকম শারীরিক মানসিক নির্যাতন ছাড়াও নিয়মিত যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তারা। এমনও জানা গেছে যে ক্রমাগত নির্যাতিত হতে হতে কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়েও দেশে ফিরে এসেছে।
বছর তিন আগে আমার বাসায় উনিশ-কুড়ি বছরের একটি মেয়ে কাজে এসেছিলো। একবছর থেকেই চলে গেছে। তার চলে যাবার কারণ ছিলো সৌদি ফেরত তার মায়ের অসুস্থতা। জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছিলাম তার মা ছ’সাত মাস আগে সৌদি গিয়েছিলো সেখানে ‘কী যেন’ সমস্যা হয়েছে বলে কোনো টাকাই পাঠাতে পারে নাই। উল্টো ধারকর্জ করে টাকা পাঠিয়ে তাকে আনা হয়েছে। এবং সেই টাকার বন্দোবস্ত করতেই তার আমার বাসায় আগমন। উল্লেখ্য তার মা সৌদি থেকে খুবই অসুস্থ হয়ে ফিরেছিলো যার অন্যতম উপসর্গ ছিলো তীব্র মাথাব্যথা। ওই ব্যাথায় নাকি সে প্রায় পাগল হয়ে যায়। আমি জিজ্ঞাসাবাদ করলেও মেয়েটি তেমন কিছু বলতো না। মুখ গোঁজ করে নিরুত্তর থাকতো।
এ তো আমার জানা কেবল একটি ঘটনা এবং অনুমানমাত্র। আরো অসংখ্য ঘটনা আছে যা হরহামেশাই শোনা যায়। পত্রপত্রিকায় খবরে আসে।
আমার অবাক হওয়া না হওয়ায় যদিও কিছু যায় আসেনা তবু বুঝে আসে না যেখানে দেশেই গৃহকর্মীর সংকট আছে এবং প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী গৃহকর্মীর মাসিক বেতন এখন আমার জানামতে নুন্যতম 4000/5000 টাকা এবং উর্ধে 18,000 টাকা পর্যন্ত। সেখানে ওই নামমাত্র বেতনে বিদেশ বিঁভূইয়ে মেয়েগুলোকে পাঠানো কেন? বিশেষত যেখানে মোটাদাগে অভিযোগ উঠেছে প্রায় প্রতিটি মেয়ে যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। তাহলে সরকারিভাবে এই পতিতাবৃত্তি চালানোর কৌশল কেন? কার সুবিধা হচ্ছে এতে? কারাই বা উদ্ভাবন করলো এই জিনিস? আর এতোকিছু জানার পরও কেউ মুখ খুলছে না, তীব্র প্রতিবাদ করছে না কেন? ক্ষুন্তিপোড়া দেখলে যারা গালির তুবড়ি ছুটিয়ে গৃমকর্মী রেখে কেন গৃহিনীরা আয়েশ করে বলে গলা ফাটায় সেই শ্রেণীও তো চুপ এক্ষেত্রে!
দেশে থাকলে যে নারী সাতমাসে কম করেও 35,000/ টাকা পেতো সে বিদেশে মাত্র 9,000/ টাকার জন্য কাজে গেলো কাদের বদান্যতায়? কাদের কোন সুবিধা হলো তাতে?
উত্তর আসলে আমরা চাই না। আমারা হয়তো একদিন ঠিক জানবো এর পেছনের কাহিনী। কিন্তু এটা কি ফেরানো দরকার না? মেয়েগুলো দেশে থেকেই ভালো অংকের টাকা দিব্যি রোজগার করতে পারে। পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারে, যোগাযোগ রাখতে পারে। দেশে সে কোন ধরনের অন্যায়ের শিকার হলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারে।
যে বা যারা নিজের পকেট ভারি করতে এই কাজে সহায়তা করছেন তারা অবশ্যই পকেট ভারি করতে পারবেন ।
তারা বিদেশে না পাঠিয়ে এই মেয়েগুলোকে বরং গৃহকর্মের ট্রেনিং দিন। সবধরনের কাজের ট্রেনিং। বৃদ্ধ বাচ্চাদের দেখাশোনা থেকে শুরু করে রান্না পরিচ্ছন্নতা ইলেকট্রিক গেজেটের ব্যবহার নিরাপত্তা ইত্যাদির উপর ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ কর্মী বানিয়ে এজেন্সি খুলুন। ভালো গৃহকর্মীদের আকালের যুগে সবাই তাদের নিজেদের প্রয়োজন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী আপনার এজেন্সি থেকে গৃহকর্মী নিয়ে যাবে। বিনিময়ে আপনি অবশ্যি চার্জ বাবদ পাবেন মোটা টাকা। ট্রেনিং দেয়ানো থেকেও নিশ্চিত পাবেন।
শুধু আপনার পরকালের হিসেবে তখন পতিতাবৃত্তির দালাল কথাটা উল্লেখ হবে না। নিজের বিবেকের কাছেও থাকবেন পরিষ্কার ।