কুকুরেরও ভাদ্র মাস ফুরায়, ফুরায় না পুরুষের (পর্ব – ২)

শাশ্বতী বিপ্লব:

এক সৎ বাবা মেয়েকে আট বছর ধরে ধর্ষণ করেছে শুনে অনেকেই খুব কষ্ট পেয়েছেন। ঘৃণা প্রকাশের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে অনেকের। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলুনতো, সত্যিই কি খুব অবাক হয়েছেন? এরকম ঘটনা কি আগেও আপনারা শুনেননি? দেখেননি? এমনকি আপন বাবার হাতেও কন্যা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাও কি আমরা প্রকাশ হতে দেখিনি প্রত্রিকায়, ফেসবুকে?

সম্ভবত, দুই বছর আগে নিজের বাবার হাতে ধর্ষিত হওয়ার একটা ঘটনা নিয়ে নিউজ হয়েছিলো। মা মেয়েকে বাবার হাত থেকে বাঁচাতে না পেরে থানায় গিয়েছিল। আমি আমার টাইমলাইন ধরে খুঁজলে পেয়ে যাবো নিশ্চিত।

এইতো, ৯ জুলাই শাকির মাটি নামে একজনের স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলাম। যেখানে রাব্বি নামে এক বখে যাওয়া কিশোরের গল্প ছিলো। যার বোনকে তার চোখের সামনে, মায়ের চোখের সামনে ধর্ষণ করতো তার সৎ বাবা। কিছু করতে না পেরে ছোট্ট রাব্বি বাড়ি থেকে পালিয়েছিলো। এখন ডান্ডি আর গাঁজার নেশা করে। ভুশভুশ করে সিগারেট খায় আর এক টিকিটে দুই ছবি দেখে।

আমার এক বন্ধুর বন্ধুর গল্প জানতাম। আরো প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। শিক্ষিত পরিবার। সৎ বাবা মেয়েকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতো। বিদেশ থেকে নানারঙের অন্তর্বাস কিনে এনে পড়ে দেখাতে বলতো। আর মেয়েটা নানা কৌশলে সেগুলো এড়িয়ে যেতো। আর সেই বান্ধবীর কাছে এসে কান্নাকাটি করতো। মাকে কখনো বলতে পারেনি। কত রকমের হিসাব করতে হয় জীবনে!!!

সেই মেয়েটা কোনরকমে পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করে চলে যায় দেশের বাইরে। এখন ভালো আছে। কিন্তু কৈশোর ও তরুণ বয়সের সেই বিভীষিকা কি তাকে তাড়া করে ফেরে না? জানিনা আমি।

৮৮ বা ৮৯ সালের কথা। আমি তখন স্কুলে পড়ি। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে একটি পরিবার থাকতো। একটি ১২/১৩ বছরের ছেলে, তার মা, বাবা আর খালা। খালাটা তরুনী ছিলো। জগন্নাথ এ পড়তো। বাবাটা রোজ রাতে খালাটাকে সকলের সামনেই ডেকে নিয়ে যেতো। রক্ষিতার মতো থাকতো সে সেখানে। বড় বোনটা তাকে রক্ষা করতে পারেনি। সেই লোকের আবার এটা দ্বিতীয় বিয়ে। প্র্রথম ঘরের বড় ছেলেও এসে মাঝে মাঝে ওই বাসায় থাকতো। সেও সব জানতো। কিন্তু কেউ কখনো প্রতিবাদ করেনি।

নিজের আপন ভাই, মামা, চাচা বা এমনি কোন আপনজনের হাতে ধর্ষিত হওয়ার, যৌন হয়রানী হওয়ার ঘটনা কি আমাদের সমাজে বিরল? নাতো।

সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধ ফরহাদ মাঝহারের কথাতো বাদই দিলাম।

এইতো নারীর জীবন, যার প্রতি  পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে এমনি সব গল্পরা। আমরা জেনেও না জানার ভান করি, বুঝেও না বোঝার ভান করি। আবার গালি দিলে “ভালো পুরুষেরা” রাগ করেন। বলেন, জেনারালাইজ করেন কেন?

আর আমি অবাক হয়ে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈনতা দেখি। আরে, আপনি গায়ে মাখেন ক্যান? আপনারে তো গালি দেই নাই। আপনি ভালো হইলে আপনার তো গায়ে লাগার কথা না!!! আপনার প্রতিক্রিয়া আপনার সম্পর্কে নীরবে কত কিছু বলে যায়, তা কি বুঝেন?

আগের পর্বটির লিংক: https://womenchapter.com/views/20571

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.