কাজী রত্না:
গত কয়েকদিন ধরে আমি ‘পাঠাও’ (মোটর বাইক সার্ভিস) এবং ‘উবার’ এ নারীদের সাথে অসহনশীল এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনার কথা পড়ছি। এদিকে লাস্ট এক সপ্তাহ আমি দেশে এবং দেশের বাইরে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর সাহায্যেই ঘুরে বেড়িয়েছি। দুটো অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করছি।
ব্যাংকক এ উবার ড্রাইভার যারা, তাদের বেশিরভাগই অন্য কোথাও না কোথাও কাজ করেন, প্রচুরসংখ্যক মেয়ে সংসারের পাশাপাশি উবার চালান। একজন মেয়ে উবার ড্রাইভার তার ভাঙা ভাঙা ইংরেজীতে জানালো, সে প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসে চার ঘন্টা এই কাজ করেন। এক উবার ড্রাইভার তো রাস্তায় জ্যাম এর মধ্যে জিজ্ঞাসা করলো আমি দুপুরে লাঞ্চ করেছি কিনা, ‘করিনি’ শোনার পর নিজে গাড়ি থেকে বিস্কুটের টিন বের করলেন, কফি দিলেন, বললেন খান। সেইসাথে এটাও বললেন, ‘আপনি যে আমার সাথে সুন্দর করে হেসে কথা বলেছেন, বলেছেন অসুবিধা নাই আপনি আসেন আমি অপেক্ষা করছি.. এতেই আমার ভালো লেগেছে’। সেই ভদ্রলোক একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এর একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার। অফিস শেষে এই সার্ভিস দেন।
আমাদের দেশে পাঠাও বা কোনো উবারে উঠলে আমি তো অনেক গল্প করি তাদের সাথে .. কেমন রেসপন্স, কত টাকা ইনকাম, মালিক কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। কোনোদিন তো ভয় লাগে না। কিন্তু কিছুদিন ধরে নানা ধরনের হয়রানিগুলোর কথা শুনে আমার ভিতরে একধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
মনে হয়েছে, যাত্রী হিসেবে আমরাও তো তেমন মানে উঠতে পারিনি। একজন চালকের যেমন, তেমনি একজন যাত্রীরও আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সেটা কি আমরা জানি? আমাদের কোনো শিক্ষাই কি আজ কোনো কাজে দিচ্ছে? নৈতিক অধ:পতন যেখানে নিত্যকার চিত্র, সেখানে উবার বা পাঠাও সার্ভিসকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করে বেকারদের কর্মসংস্থানের পথটি যেন বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকেও আমাদের নজর দেয়া উচিত।
প্রবলেম হলো, আমরা মেয়েরা প্রথমেই ধরে নেই যে, আমরা মেয়ে এবং আমাদের ভয় পেতে হবে। যেমন পরশু আমার উবার ড্রাইভার আমাকে বললো, আপা, সেদিন শুনলাম এক লোক নাকি এক গেস্টকে হেনস্থা করছে! আমাদের তো ট্রেনিং এ বলেই দিছে, গেস্ট যেদিক দিয়ে যেতে বলবে, সেদিক দিয়েই যাবো। যত জ্যামই হোক না কেন। যদি উনি বলেন, আপনার যেদিক দিয়ে ভালো সেদিকে যান, তখন আমি আমার ইচ্ছামতো যাবো। আমার তো সমস্যা নেই। জ্যাম থাকলে ওয়েটিং চার্জ তো আছেই, আমার তো লস নাই.. তাইলে ওই লোক কেন এরকম করলো? আমাদের নামে কমপ্লেইন এলে দেখা যাবে, কোনদিন ড্রাইভিং লাইসেন্স ক্যান্সেল হয়ে যাবে।
এখানে একটি কথা আছে, পাঠাও বা উবার যারা ব্যবহার করে, তারা তো গুগল ম্যাপ সম্পর্কে ধারণা রাখে.. সেটার হেল্প নিলে তো আর ওরা অন্য পথে নিতে পারে না। পৃথিবীটা কখনোই আলাদা করে মেয়েদের জন্য নিরাপদ না। আবার ছেলেদের জন্যও না। তাই বলে কি আমাদের এতো ভয় পেলে চলবে?
আর অনেকের দেখলাম পাঠাও’তে গায়ে লেগে বসার ব্যাপারে এলার্জি আছে। এটা সত্যি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় স্বাভাবিক ভাবে এই বসাটাতে একটা ছেলেকে এক ধরনের প্লেজার দেয়.. কিন্তু একজন মোটর সাইকেল ড্রাইভার হিসাবে এটুকু বলতে পারি, আমরা যখন কাউকে এগিয়ে বসতে বলি, সেটার একমাত্র কারণ আমাদের গাড়ির ব্যালান্স এর জন্য। এতে আমার যৌবন নড়ে-চড়ে উঠে না। যাদের ওঠে, তাদের সব সময় ওঠে।
একবার এক রিকশাওয়ালা আমার সামনে দিয়ে বার বার চক্কর কাটছিলো, আর তার শিশ্ন ধরে নাড়াচাড়া করছিল, কষে ধমক দিতে পালিয়ে গেল, যদিও মাইর দেয়াই দরকার ছিল। আবার একবার তো বাসে পাশের সিটে বসে কোলের উপর পত্রিকা রেখে তার ব্যক্তিগত জিনিস নাড়াচাড়া করতে করতে ভিজিয়েই ফেললো। এরকম ঘটনা দৈনন্দিন, এদেরকে একটা গালি দেয়া বা সুযোগ পেলে একটা চড় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। যৌবন কন্ট্রোলে চলে আসবে।
চেহারায় যতো নারী হিসাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করবেন, হায় হায় ও আমাকে দেখে তার কামনা পূরণ করলো, আর এতে আমি রেপড হয়ে গেলাম, এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই। ছিনতাই হবার ভয় কিন্তু আমাদের সবারই থাকে। এমনকি উবার বা পাঠাও ড্রাইভারদেরও থাকে.. কোনো এক গলিতে নিয়ে গিয়ে গাড়ি রেখে দিতে পারে। এমনকি তাদের খুন করেও গাড়ি নিয়ে যেতে পারে। যে দেশে ‘মানুষ মাত্রেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে নারী-পুরুষ কী!’
একবার একজন উবার চালককে বলছিলাম, ‘আমরা মেয়েরাও উবার সার্ভিসে কাজ করবো’। শুনে ছেলেটি বললো, ‘চালাবেন? সত্যি? খুবই ভালো খবর। তবে মেয়েদের তো অনেক সমস্যা।’
কী সমস্যা?
– ‘না, মানে, কে না কে গাড়িতে উঠবে, সে যদি ভালো মানুষ না হয়, আপনি সামনে বসে সেটা নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে?’
ভেবে দেখলাম, কথাটা নেহায়েতই ফেলনা না। আমি গাড়ি চালাবো, নাকি যাত্রী খেয়াল রাখবো!
সো, এগুলোকে পেছনে ফেলেই এগিয়ে চলতে হবে। প্রয়োজন ব্যক্তি নিরাপত্তা, এবং সেটা দেবার মালিক রাষ্ট্র। আমরা শুধু একটু সতর্ক থাকবো। অযথা সন্দেহ না করাই ভালো। আর ভালো আচরণ এবং ভালো ব্যবহারের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, যিনি পাঠাও বা উবার চালাচ্ছেন, তিনি এটাকে পেশা হিসেবে নিতেই পথে নেমেছেন, আর পেশা হচ্ছে লক্ষ্মী।
আর যারা পাঠাও চালান বা উবার চালান, তাদের বলছি, প্লিজ কন্ট্রোল ইউর যৌবন.. নইলে এই সুন্দর এবং সৎপথের ইনকামটাও বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে এমনিতেই কাজের যে আকাল …!