সুখিয়াদের জীবন: সভ্যতা কতদূরে?

রুমা মোদক:

দাঁড়াও সভ্যতা, তিষ্ঠ ক্ষণকাল। ভরসা রাখো, নিশ্চিন্ত হও আমি সাহিত্য ফাঁদতে বসিনি। কিছু প্রশ্ন রাখছি নিজের ভদ্র জীবন যাপনের কাছে। যার উত্তর জানা নেই আমার। আপনাদের জানা থাকলে জানিয়ে যাবেন প্লিজ।

এই বৃদ্ধা, শ্রাবণী রবিদাস, হাতে ব্যাগ নিয়ে তৈরি ‘মাগনে’ যেতে। একবেলা ভিক্ষায় না বের হলে ঘরে হাড়ি চড়বে না তাঁর। কেন? ১৫ দিনের ব্যবধানে পরিবারে দু’দুটি মৃত্যু, শোকাতাপ নেই তাঁর?

প্রথম মৃত্যুটি রোগেভোগে চিকিৎসার অভাবে আর দ্বিতীয় মৃত্যুটি ‘সুখিয়ার’। চিরদিনের জন্য একেবারেই মৃত সুখিয়া তার ভাইয়ের মেয়ে। দিনের যে সময়টিতে সেহরি খেয়ে পবিত্র দিন পার করার নিয়তের আয়োজন ঘরে ঘরে, সেই সময় সাইলু প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে মারছে সুখিয়াকে।

সুখিয়ার অপরাধ, দুদিন আগে লোহার রডের আঘাতে মারাত্মক আহত সে সেদিন অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো মাতাল সাইলুর সাথে দৈহিক সম্পর্কে যেতে।

দুদিন আগে সুখিয়ার মাথায় কে আঘাত করেছিলো লোহার রড দিয়ে, যে সুখিয়ার তিনটা সেলাই লেগেছিলো?
সাইলু, শিপন আর সুজনের ঝগড়া বেঁধেছিলো কে কার আগে চড়াও হবে বোনদের উপরে (সুখিয়ারা তিন বোন ছিল), এক পর্যায়ে তাদেরই হাতের লোহার রডের আঘাতে আহত হয়েছিলো সুখিয়া। সেদিন তিনবোন দৌড়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলো বাজারের দোকান ঘরের আট চালার নীচে। প্রাণের ভয়ে। সারারাত কাটিয়েছে সেই দোকান ঘরের বারান্দায়। চিৎকার করে ” মানুষ ” ডেকেছে তাদের বাঁচানোর জন্য। কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ তাঁরা “মানুষ” নয়। তাঁরা নিম্নবর্ণের ” মুচি”।

যাঁকে দিয়ে শুরু করেছিলাম, ষাটোর্ধ বৃদ্ধা শ্রাবণী রবিদাস তিনমাস নিরুদ্দেশ ছিলেন। পরিবারটির একমাত্র সহমর্মী হেলাল জানালেন, শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে পেয়ে তাঁকে ফিরিয়ে এনেছেন নিজ ঘরে। কেন পালিয়েছিলেন বৃদ্ধা?
বললেন, “আমার সামনে মেয়েগুলোরে বেইজ্জতি করে, আমার বাধা মানে না। আমার গায়ে হাত তুলে। মেয়েগুলোর চিল্লানি সহ্য হয় না তাই”। এই মেয়েগুলোকে অবশ্যই চরিত্রহীন বলা যায়। তাই না হে সভ্য সমাজ?

অভিভাবকহীন হতদরিদ্র সংখ্যালঘু নিম্নবর্ণের পরিবারটির ঘরে নির্ভয়ে ব্যবসার মাদক রাখা যায়, তাদের বাধা মানতে হয় না। সুখিয়া খুন হলে অবলীলায় তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেয়া যায়। তাইনা হে ভদ্র জনতা? 

অথচ সত্য এই, ভাইঝিদের মৃত্যুর পর তাঁর বাড়িতে যখন সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীদের সকাল বিকাল আনাগোনা তখন সে প্রস্তুত ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে, তাঁর ফুসরত নেই শোকের।

এর আগে তাঁর ভিটে দখল, উচ্ছেদ, পুনঃদখল আরো দুটি হত্যা, সাইলুদের শক্তির উৎস নিয়ে কোন প্রশ্ন আমি করবো না।পরিবারটির জন্য প্রার্থনা করবো, ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলাও।।

শেয়ার করুন: