শিক্ষা ও সংস্কৃতির আধুনিকায়নই ধর্ষণ রোধের হাতিয়ার

শাকিল মাহমুদ:

ধর্ষণ কেন হয়?
এর কারণ কী?
এমন প্রশ্নে স্বাভাবিক উত্তর, নারীর উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা, অশ্লীল পোশাক পরা ইত্যাদি।
আচ্ছা, নারী কিভাবে উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করে?
এই প্রশ্নের জবাবটাও বেশ স্বাভাবিক-ই দেয়া হয়।
নারী কেন রাতে রাস্তায় চলাচল করবে? নারী যদি সূর্য ডোবার আগেই ঘরে চলে যায়, তবে তো আর ধর্ষণের শিকার হয় না!

সত্যিই কি তাই?
নারী রাত দশটা অব্দি বাইরে থাকে বলেই পুরুষের কামভাব জাগ্রত হয় এবং নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পরে ধর্ষণ করে?
একজন পুরুষও তো অনেক রাত অব্দি রাস্তায় চলাফেরা করে। কই আজ পর্যন্ত কোনো নারী কি কোনো পুরুষকে ধর্ষণ করেছে?

ধর্ষণের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, কোনো পুরুষকে দেখে কি কোনো নারী নিপীড়নমূলক কোনো বাক্য উচ্চারণ করে, যাতে কোনো পুরুষ মনে করে সে ওই নারীর উচ্চারিত বাক্যে নিপীড়িত! নিজেকে ‘অপমানিত বা অসম্মানিত’ ভাবে?
কোনো পুরুষ-ই বলতে পারবে না গভীর রাতে বাইরে একা পেয়ে কোনো নারী বা নারী গ্যাং নিপীড়ন করেছে। কেননা নারীর মানসিকতা যৌনতায় সীমাবদ্ধ নয়। সেখানে আরও অনেক ‘বোধ’ কাজ করে, যা পুরুষের ধারণারও অতীত।

একজন পুরুষ তার যৌনতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কেননা তারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা দ্বারা এমনভাবে গড়ে ওঠে যেখানে নারীকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, নারী মানেই যৌন পণ্য। যাদের কেবল ভোগ করাই পুরুষের জন্মগত অধিকার। তা হোক ঘরে কিংবা বাইরে। পেলো, ধরলো, খুললো, খেলো!

এবার আসি পোষাকের বিষয়ে। নারী অশ্লীল পোষাক পরে। অশ্লীল পোষাক! সংস্কৃতি দ্বারা বিবেচনা করলে বলতে হয়, বাঙালী সংস্কৃতিতে বাঙালী নারীর পোষাক শাড়ী, ব্লাউজ। সচরাচর বাঙালী নারীরা শাড়ী-ব্লাউজ পরিধান করে। এখন শাড়ী-ব্লাউজ পরিহিত নারী ধর্ষণের শিকার হলো,পোষাক তার জন্য দায়ী। অতএব বাঙালী সংস্কৃতি অশ্লীল! তাইতো?

আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে দেখতে পাই নারীরা বিকিনি পরে সমুদ্র সৈকতে চলাচল করে। বিকিনি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে অশ্লীল পোষাক। এই অশ্লীল পোষাক পরিধান করে পশ্চিমা নারীরা চলাচল করলেও তাদের পুরুষদের কোনো সমস্যা হয় না। কেননা নারীর শরীর তাদের (পুরুষের) মতোই। সুতরাং বিকিনি পরা পশ্চিমা নারীরা নগ্ন কিংবা অর্ধ-নগ্ন হয়ে চলাচল করলেও পুরুষদের লালসার শিকার হয়ে কোনো নারী ধর্ষিত হয় না। কেননা শরীরের প্রতি লালসা নয়, বরং নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরই মানুষীয় শরীর।

এখন প্রশ্ন করবেন, আমি কি পশ্চিমা সংস্কৃতি বাঙলায় আনার কথা বলছি? মোটেও নয়। তবে একজন নারী তার ইচ্ছানুযায়ী বিকিনি পরলো, না শাড়ী-ব্লাউজ পরলো, না নগ্ন হয়ে চললো, তা একান্তই তার ব্যক্তিগত। তবে নারীর শরীর দেখে তোমার কাম উদয় হবে, আর তা নিবারণ করতে পশুর ন্যায় ঝাঁপিয়ে পরে ধর্ষণ করবে, আর তারপর নারীর পোষাককে দায়ী করবে!

আচ্ছা, একজন পুরুষ যখন শার্টের বোতাম খুলে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তখন কোনো নারী কি তার বুক দেখে কামোত্তেজনায় ছটফট করে? এবং কাম নিবারণে ঝাঁপিয়ে পরে ধর্ষণ করে!(?) না করে না, কারণ পোষাক নয়, পুরুষতান্ত্রিকতা পশুবৃত্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিধায় নারীরা নিপীড়িত, ধর্ষিত।

পরিশেষে নারীর উচ্ছৃঙ্খল চলাচল কিংবা পোষাক ধর্ষণের জন্য দায়ী নয়। দায়ী পশুবৃত্তিসম্পন্ন মানসিকতা। যা নারীকে করে রেখেছে ভোগ্যপণ্য। অতএব ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন পশুবৃত্তি সম্পন্ন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও শিক্ষায় আধুনিকায়ন ঘটানো।

শেয়ার করুন: