আমার এক গ্রিক বন্ধু আছে, নাম জর্জ, একদিন দেখি ওর ভ্রুর কাছে কাটা। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে, জর্জ উত্তর দিলো, ওর মা রেগে গিয়ে অ্যাশট্রে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। কারণ কী? কারণ জর্জ সমকামী। ওর মা এটা পছন্দ করেন না।
আমার চাইনিজ বস কয়েকবছর আগে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে ক্যানাডায় ইমিগ্রেশন নিয়ে এসেছেন। তাঁর মেয়েটি কলেজে পড়ছে, ছেলেটি স্কুলে। তিনি একদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে, তাঁর ছেলে বড় হবার পর যদি দেখা যায় যে সে সমকামী, তাতে তো আর তিনি ছেলেকে ত্যাগ করতে পারবেন না। কাজেই মেনে নেবেন।
অনেকের ধারণা মানুষ ইচ্ছে করে সমকামী হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। জেনেটিক কারণে অনেকে সমকামী হতে পারে। প্রাণিজগতে অনেক ক্ষেত্রে সমকামিতা দেখা যায়। উল্লেখ্য, ভেড়া, বানর এবং সমজাতীয় প্রাণী। পর্যবেক্ষণ করে জাপানিজ মেকাক প্রজাতির বানরীর মধ্যে দেখা গেছে ওদের মধ্যে কিছু পুরুষের চেয়ে নারীকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। ভেড়ার মধ্যে দেখা যায় ছয় থেকে দশ শতাংশ সমকামী। (দ্য আটলান্টিক ডেইলি)
এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চললেও ঠিক কারণটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রফেসর Ray Blanchard একটি হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছেন যেটাকে ফ্র্যাটারনাল বার্থ অর্ডার ইফেক্ট বলা হয়। তাঁর স্টাডিতে দেখা গেছে বড় কয়েকজন ভাই থাকলে ছোট ভাইটির সমকামী হবার সম্ভাবনা দুই শতাংশ থেকে ছয় শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। এই পরিবর্তনটি আসে মাতৃগর্ভ থেকেই। সবার ক্ষেত্রেই যে এটা মিলে যাবে তা কিন্তু নয়।
সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও সমকামিতা বাড়ার কথা নয়। কারণ, যার বায়োলজিক্যালি সমকামী মনোভাব আছে শুধু সে-ই এই সম্পর্কে জড়াবে। যেহেতু দুজন পুরুষ অথবা দুজন নারী মিলে সন্তানাদি উৎপাদন সম্ভব নয়, তাই প্রায় ধর্মেই একে শুধু নিষিদ্ধই করেনি, রীতিমতো ঘৃণার চোখে দেখা হয়েছে। অথচ, ধর্ম রক্ষাকারী নিজেরাই এই সম্পর্কে অহরহ জড়িয়ে পড়ে।
অনেক চার্চের পাদ্রি আর মাদ্রাসার শিক্ষকের উদাহরণ তো আমাদের জানাই আছে। এগুলোর পেছনে যে কারণগুলো মুখ্য তা হচ্ছে, ইস্টার্ন অথবা ল্যাটিন রাইট পাদ্রির পাদ্রিত্ব গ্রহণ করার পর বিয়ে করার অধিকার থাকেনা। কিছু মাদ্রাসার শিক্ষক অথবা ইমাম প্রায় সময়েই কার্যোপলক্ষ্যে পরিবার থেকে দূরে থাকে, এদের কারো মধ্যে হোমোসেক্সুয়ালিটি থাকলে তো কথাই নেই, এদের অবদমিত কাম থেকেই এসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটে।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে, নিজেদের চেয়ে আলাদা কিছু অথবা কাউকে দেখলেই আমরা বিচার করতে বসে যাই, ঘৃণা করি। প্রকৃতিগতভাবে কেউ যদি সমকামী হয় তাকে কি আমাদের ঘৃণা করা উচিত?