রাহাত মুস্তাফিজ:
‘কুকুরেরও ভাদ্র মাস ফুরোয়, ফুরোয় না পুরুষের’ – এই শিরোনামে উইমেন চ্যাপ্টারে Shashwatee Biplob এর একটি লেখা প্রকাশিত হয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরল প্রতিবাদ হিসেবে লেখাটিকে চিহ্নিত করা যায়। গোল বেঁধেছে অন্যখানে। আমাদের অনলাইনের পরিচিত শিক্ষিত এবং অতি অবশ্যই সচেতন(!) মধ্যবিত্ত শ্রেণির পুরুষদের একটা অংশ প্রচণ্ডভাবে ক্ষেপে উঠেছেন শিরোনামটি পাঠ করে।
অভিযোগ গুরুতর! কী, পুরুষকে কুকুরের সাথে তুলনা করা, তাও আবার ভাদ্র মাসের কুকুরের সাথে!!! বৈশাখ – জৈষ্ঠ মাসের কুকুর হলে না হয় কথা ছিল! তাছাড়া সব পুরুষকে ঢালাওভাবে দোষী করা কেনো?
দোষের বিষয় যখন এসেই গেলো তাহলে একটু শিরোনামটির দিকে ভালকরে তাকিয়ে দেখি। ভাদ্র মাস কুকুরের মেটিং সিজন। কুকুর কুকুরীর এ সময় মিলন আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়। একটা মাস ধরে চলে তাদের মিলন পর্ব। মাসান্তে আবার অপেক্ষা পরবর্তী ভাদ্র মাসের। মনুষ্য সমাজে এ ব্যবস্থা নেই। বারমাস ব্যেপে মানুষের যৌন সঙ্গমকাল। এই সঙ্গমের মধ্যে এক প্রকারের সঙ্গম আছে যা অনুষ্ঠিত হয় নারীর অমতে জোরপূর্বক। একে বলা হয় ধর্ষণ। উল্লেখিত শিরোনামটিতে লেখক সম্ভবত বলতে চেয়েছেন কুকুরের এক মাসের সঙ্গম সময় অতিবাহিত হলেও পুরুষের ওই সময়কাল চলতেই থাকে। এখানে সঙ্গম বলতে লেখক চূড়ান্ত যৌন লালসা ধর্ষণকে বুঝিয়েছেন, অবশ্য কুকুরশ্য সমাজে ধর্ষণের বালাই নেই বলেই আমরা জানি।
এক্ষেত্রে শিরোনামটির যথার্থতা নিয়ে মানুষের চেয়ে বরং কুকুরের তীব্র আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ আছে। ভাগ্যিস কুকুরেরা মানুষের এসব কায় কারবার একদমই পাত্তা দেয় না।
কিন্তু পুরুষকূলের লেজে আগুন ধরে গেছে। লেজ খোয়ানোর আশঙ্কায় কী না জানি না ইতোমধ্যে বীর পুঙ্গবেরা সারা পাড়া মাথায় তুলে ফেলেছে। তারা সংঘবদ্ধ সংকল্পে বলিয়ান হয়ে উল্লেখিত শিরোনামের লেখক ও এর প্রকাশক উইমেন চ্যাপ্টারের বিরুদ্ধে মামলা করার পায়তারা করছে। এই ধরণের পোর্টাল না কী সমাজের নারী পুরুষকে মুখোমুখি বিরোধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলার পথে প্রবল অন্তরায় হিসেবে এরা দাঁড়িয়েছে। পারিবারিক অশান্তির কারণ অর্থ নয়, বিত্ত নয়, হিন্দি সিরিয়াল নয়; কারণ একটাই – ‘উইমেন চ্যাপ্টার’ এবং সেই সাথে এর সম্পাদক ও স্যাডিস্ট প্রতিক্রিয়াশীল নারীবাদী লেখকগণ।
আর তাই আমাদের সচেতন শিক্ষিত ভায়েরা এবং কিছু কিছু বোনেরা ‘চিত্ত ভরিয়া’ বৈচিত্র্যময় কায়দায় ভার্চুয়াল রেইপ অব্যাহত রেখেছেন। লেখক কেনো সব পুরুষকে ধর্ষক বানালো। সবাই কী ধর্ষক সাফাত, নাঈম কিংবা সাদমান?
জ্বি না। সব পুরুষ ধর্ষক নহেন। বোধকরি লেখকও সে কথা বলেননি। আপনাদের দশা হয়েছে কাভার পড়েই বই পাঠ করা হয়ে গেছে মনে করার ফিচেল অভ্যাস। আরে ভাই কনটেক্সটটা তো পড়ুন। তারপর না হয় লেখককে প্রাণভরে গালিগালাজ করুন।
তর্কের খাতিরে মানছি, শিরোনামটি অত্যন্ত পুরুষ বিদ্বেষী হয়েছে, আপনাদের উত্থিত পুরুষানুভূতিতে আঘাত লেগেছে। ঠিক আছে তালগাছটাও আপনাদের। এখন বলুন, ভেতরে যা লেখা হয়েছে সেসব বাদ দিয়ে এক লাইনের একটা হেডিং এর পেছনে লাগলেন কেনো?
আমি যদি বলি আপনারা পেছনে লেগেছেন তাঁর কারণ আপনাদের ওই প্রথাসিদ্ধ, গোঁড়া, প্রতিক্রিয়াশীল, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে দেখে ভীত হয়ে পড়েছেন? যদি বলি আপনারা এক একজন ভেকধারী প্রগতিশীল, আপনারা আসলেই চান না নারী পুরুষের সাম্যতা, ন্যায্যতা ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে তৈরি হোক এই সমাজ। এবং চান না বলেই নারীর নিঃসংকোচ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, ছিদ্র খুঁজে বের করেন, দলবদ্ধ আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মামলার ভয় দেখিয়ে নারীর কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চান।
কিন্তু দিন বদলাইছে বাহে। আপনাদের আবহমানকালের দেখা রসুইঘরের নারীরা কথা বলতে শুরু করেছে। আর জানেন তো নারী কথা বলতে শুরু করলে মুখ লুকোবার জায়গা খুঁজে পাবেন না। সেই ভয়েই কী আতঙ্কিত হে গর্বিত পুরুষগণ?