শাফিনুর শাফিন:
আমাদের আলোচনার টপিক প্রতি দুইদিনে বদলায়। নিত্য নতুন বিষয়ে আমরা ঝড় তুলে ফেলি। কিন্তু ধৈর্য এতো কম যে কোনটাই সমাধান হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকি না। দুটো বিষয় ঘুরেফিরে আসে কিছুদিন পরপর। পাহাড়ি হত্যা নির্যাতন এবং ধর্ষণ। এই দুটোতে কেবল নতুন মুখ যুক্ত হয়, কিন্তু অপরাধ একই থাকে। এবং অবশ্যই কোনটাই বিচারের আওতাধীন নয়। কিংবা বিচার শুরু হলেও থেমে যায়।
অনেকে লিখছেন, মসজিদে কি করে ইমাম ধর্ষণ করলেন! এই আফসোস দেখে মনে হচ্ছে, মসজিদ ছাড়া পাটক্ষেত বা হোটেল সবখানে ধর্ষণ করা জায়েজ ! মসজিদ কিংবা মক্তবে বাচ্চা মেয়েদের ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন প্রাচীন প্র্যাক্টিস। আপনার আশপাশের মসজিদে যদি বিকেলে বা সকালে আরবি পড়ানো হয়, নিশ্চিত থাকুন প্রতি ১০ জনে ৮ জন বাচ্চাই নিয়মিত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর হ্যাঁ কেন হয় জানেন তো? মসজিদে এমন ঘটনা ঘটতেই পারেনা আপনাদের এই অসম্ভব বিশ্বাস মসজিদ মাদ্রাসা মক্তব কিংবা আরসব ধর্মীয় স্থানকে ধর্ষণের নিরাপদ স্থান করে তুলেছে মূলত।
হোটেলে পুরুষ বন্ধুর আমন্ত্রণে পার্টিতে যে মেয়ে যায়, তার চরিত্র আগে থেকে দূষিত। সুতরাং তাকে ধর্ষণ করাই যায়! তাই না? ব্যাপারটা এমন না যে কিংবা সমালোচনার জায়গাটা এমন কখনোই হবে না, বন্ধু ডেকে নিয়ে বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কিভাবে এমন অন্যায় করলো!?
গত বছরের একটা ঘটনা, আমেরিকান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব জনপ্রিয় এক সাঁতারু ছাত্র পার্টিশেষে মদ্যপ এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে, এরপর সারাদেশ ক্ষেপে উঠে। ইউএসের মতো দেশেও মেয়েটাকে সামাজিক হেনস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেকেই বলে কেন এতো মদ খেলো যে হুশ থাকে না! মেয়েটাকে স্লাট বলে অনেকেই। আসামীর উকিল দাবী করেন এবং নানাভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, ব্যাপারটা ধর্ষণ নয় বরং মিউচুয়াল ছিল।
সব নেগেটিভ ফোর্স কাজ করার পরেও যেটা চমৎকার দৃষ্টান্ত ছিল তা হলো, দ্রুত বিচার আদালতের মাধ্যমে আসামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এই বিচার পেতে মেয়েটাকে মাত্র কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমেরিকায় বসবাসকারী সুবুদ্ধিযুক্ত মগজধারী সব মানুষ মেয়েটার পক্ষে ছিল। বিচার না হওয়া পর্যন্ত কেউই বিষয়টা দুইদিনের হটকেক নিউজ বলে ছেড়ে দেয়নি। শেষ দেখে তবেই ছেড়েছে! বলে রাখা ভালো, ধর্ষক প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ছিল এবং ধর্ষকের বাবা রায় শোনার পরে মিডিয়াকে বলেন, মাত্র ২০ মিনিটের এক্টিভিটির জন্য তার ছেলের ২০ বছর কারাদণ্ড বেশি রূঢ় হয়ে যায়! সব ধর্ষকের পিতা বা ধর্ষকামী মানসিকতার সকলেই এমনই বলবে জানা কথা।
যে দুজন বাংলাদেশী ছাত্রী থানায় অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরকে নিয়েও নানা কথা উঠছে। উঠতে থাকবে এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাকিসব ধর্ষণের মতো বিচারবিহীন অবস্থায় এটাও হারিয়ে যাবে। যদি বাংলাদেশের সুশীল প্রগতিশীল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের একটু, অল্প একটু ধৈর্য কুলায় তাহলে আশা করা যায় অন্তত একটা ধর্ষণের বিচার না হওয়া অব্ধি তারা সবাই একসাথে লড়ে যাবেন।