সালমা লুনা:
আমি জানি প্রিয় ভগ্নিরা আমার এই লেখাটিকে কিছুতেই নারীদের পক্ষে বলবেন না। বরং আমাকে নারী শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করতে আগ্রহী হবেন। কিন্তু একেবারেই যে না বলেও পারা যাচ্ছে না! এটি নারীদের জন্যই বরং জরুরী পুরুষদের চেয়েও। নারীদের সম্মান জীবন এবং অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে আরো বেশি জরুরি।
পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। আত্মহত্যা- নারী পুরুষ দুতরফেই। বলা হয় নারীরা শিকার পুরুষের। পুরুষও কি কখনোই শিকার হয় না নারীর?
তাহলে এক যাত্রায় পৃথক ফলই বা কেন হবে? সুবিচার ও নীতি নৈতিকতার প্রশ্নে এটিও কি চরম অন্যায় নয়?
একজন আবৃত্তির মানুষ, একজন স্থপতি সম্প্রতি মারা গেলেন। মৃত্যুর আগে তার পরকীয়া এবং পরকীয়া জনিত কারণে এক নারী – একজন কবির মৃত্যু সম্পর্কে না জানলেও মৃত্যুর পরপর বেশ জোরেশোরেই শোনা গেলো , জানা হলো। স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো না,আত্মহত্যা ছিলো এটি। তারা একটি সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। দুজনারই ঘরসংসার বাচ্চারা ছিলো । তবুও তারা সম্পর্কে জড়িয়েছেন । জড়িয়েছেন সব জেনেই । তাদের একটি গোপন জীবন ছিলো , সে জীবনে পুরুষটির আশ্বাস ছিলো বিয়ে করবেন নারীকে । এই চুক্তির বলে নারী মিশেছেন তার সাথে। স্বামীকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তারপর পুরুষটি বিয়ে করার সেই চুক্তি ভঙ্গ করলে নারীটি তাকে উচিত শিক্ষা দেবার জন্য আত্মহত্যা করেন।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরিরত এক নারীর সাথে এমনই সম্পর্কে জড়িয়ে নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে অবশেষে অস্বাভাবিক মৃত্যুকেই বরণ করলেন – এই তো, বেশিদিন হয়নি। রেখে গেলেন বিহ্বল স্ত্রী এবং কন্যাকে। অনুমান করি তাদের বিপর্যস্ত জীবনকেও যা অনেকদিন তাদের কষ্টে জর্জরিত করবে। পরকীয়ার এমন অসংখ্য ঘটনা আছে। আমরা যদি ভুলে না গিয়ে থাকি, এক সচ্ছল পরিবারের মা তার দুই সন্তান সহ আত্মহত্যা করেছিলো।
আছে , এমন অসংখ্য ঘটনা আছে।
আমরা খুব বেশি মাত্রায় আধুনিক হয়ে বলতেই পারি দুজন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী পুরুষ পরস্পরের সম্মতিক্রমে একটি সম্পর্কে লিপ্ত হবে, তারপর হোটেলে কক্সবাজারে কিংবা ব্যাংকক গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে যা খুশি তাই করবে, এতে কার কী!
এটি তাদের স্বাধীনতা। দুজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ স্বেচ্ছা সম্মতিতে যদি একটা সম্পর্কে জড়ায় তবে তাদের যে কারো পূর্ণ অধিকার আছে সেই সম্পর্কটিকে ভেঙে দেবারও! এটিও তো স্বাধীনতা। তবে কেন একজন আরেকজনকে দোষারোপ ! কেন শিক্ষা দেবার জন্য আত্মহত্যা! কেন মদ্যপান! কেন প্রতিশ্রুতি ভঙের দায়ে প্রতারক বলা! কেনই বা প্রতিশ্রুতি বলে দেহভোগের অভিযোগ আরোপ!
যেখানে এই সম্পর্কটিই আরো দুটি মানুষের সাথে, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিশ্রুতি বদ্ধ সম্পর্কের সাথে এবং সন্তানাদির সাথেও প্রতারণার উপর প্রতিষ্ঠিত! দুজনেই একটা গোপন সম্পর্কের মাঝে থাকার যা যা সমস্যা, তা পাড়ি দিয়ে আসতে পারলে সেই সম্পর্কটি ভেঙে দেবার হ্যাপা সইতে না পারার কারণটি কী হতে পারে?
একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ফিরে গিয়ে বিবাহিত সঙ্গীর কাছে পূর্ব মর্যাদা না পাওয়া । সম্মানহানী – যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীর হয়। অথবা বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে ঘরত্যাগের নির্দেশ।যেহেতু নারীর নিজের ঘর নেই – ঘরটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষের । আবার এ সমস্যা পুরুষের তুলনামূলক কম। তবুও অনেক সচেতন নারী এইরূপ বিশ্বাস ঘাতক সঙ্গীর সাথে থাকতে না চেয়ে বেরিয়ে আসেন। তবে এ সংখ্যা নগণ্য। দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগী কম আর বেশি দুজনেই হতে পারেন। তবুও আমরা শুধুই পুরুষদের দোষ দেই। এর ফলে আবার নারীরাই লজ্জা ঘৃণা অপমান এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠে পুরুষকে চরম শাস্তি দেয়ার অক্ষম চেষ্টায় আত্মহত্যার পথে পা বাড়ান।
নিজে যদি আত্মসমালোচনা করতেন তবে নিশ্চয়ই বুঝতেন সমপরিমাণ দোষ থাকার পরও এইরকম আর কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো চলে না। আত্মহত্যা তো দূর!
আর আমাদেরও ভেবে দেখা উচিত পরকীয়াজনিত কারণে একজন নারীকে আত্মহত্যা করতে দেখেই যদি আমরা ক্রোধে গর্জে উঠি তার প্রেমিক পুরুষটির উপর। তবে সেই নারীর প্রতি আমার সহানুভূতি কোথায়, যে নারীটি তার স্বামীর পরকীয়ার সহযোগী আত্মঘাতী নারীটির কৃতকর্মেরও ভূক্তভোগী ! প্রেম কিংবা পরকীয়া, দায় তো দুজনেরই হওয়া উচিত|