সালমা লুনা:
পাঁচ মাস বয়সী থেকে বছর পঞ্চাশেরও নারী এদেশে ধর্ষিত হয়।
বিচারের জন্য আইনের শরণাপন্ন হয় কতজন আমরা জানি না ।
কতজন আদালত থেকে ন্যায়বিচার পান তাও জানি না।
ধর্ষণের খুব বিভৎস কিছু ঘটনা, ধর্ষণ পরবর্তী কিছু ভয়াবহ নির্দয় পরিস্থিতি ছাড়া এই সব পর্দার আড়ালেই থাকে । বড় বড় শহর আর গ্রামগঞ্জের ঘটনা ও পরিস্থিতিতেও ফোকাস পাওয়ার ক্ষেত্রে আছে ভিন্নতা । আবার বিচার চাওয়া বা না চাওয়ার ক্ষেত্রটি স্থানভেদে যেমন বদলে যায় তেমনি এর সাথে আছে ধর্ষকের সামাজিক অর্থনৈতিক এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রতিপত্তির বিষয়টিও । সুতরাং একটি ধর্ষণের ঘটনা অনেকগুলো নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যখন আইন আদালতের দরজা পর্যন্ত আসে তখন আর ন্যায়বিচার পাওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না ।
এদিকে মত প্রকাশ বা মনের ক্ষোভ বের করে দেবার একাধিক ভার্চুয়াল রাস্তা খোলা থাকায় এই ধর্ষণের ঘটনাগুলো বা ধর্ষিতার প্রতি সহানুভূতি দেখাবার জন্য নাগরিক ঝড় তোলার প্রতিবাদের পদ্ধতিগুলি আলোচনা সমালোচনাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে প্রায়শঃই ।
এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না ।
নাগরিকদের একাংশ বলবে, পোশাক , পোশাকই সমস্যা !
কেন গিয়েছিলো একা একা গো ?
আর বৃহত্তর অংশ হামলে পড়বে আট বছরের শিশুর কী আছে , কী পোশাক এমন পড়েছিলো গো !
একা একা যাবেই বা কেন ! এ কি স্বাধীন দেশ নয় !
ব্লা ব্লা ব্লা …… আমরা সবাই জানি।
একটি আট বছরের শিশু ধর্ষিত হয়েছে। শিশুটিকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষক তাকে তার বাবা-মার কাছে ফেরত দিয়ে গেছে। জানে মারেনি অবশ্য।
তারপর শুরু হয়েছে খেলা!
ইউপি চেয়ারম্যান এক হাজার টাকায় শিশুটির বাবা-মাকে আপোষ করতে বলে। রাজী না হলে তার গরু চুরি করানো হয় । পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ বলে শিশুটি ধর্ষিত হয়েছে জানা নাই। তবে তাকে জোর করে সাইকেলে করে নিয়ে যাবার সময় তার পা কেটেছে এটিই জানে। ধর্ষকের স্বজনেরা আবার মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।
খেলার শেষ হলো – এসব দেখেশুনে অসহায় বাবা তার কন্যা কে নিয়ে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়েছে। আত্মহত্যা করেছে।
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নয়, পরকীয়া করে ধোঁকা খেয়ে নয়, দারিদ্র্যের জন্য নয়, এ জীবন আলুনী লাগে বলে নয় -বাবা তার আট বছরের কন্যা সন্তানের ধর্ষকদের বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো দেখে আত্মহত্যা করেছে। কন্যাকে অপরিসীম কষ্ট দেয়ার বিচার চেয়ে বিনিময়ে ক্ষমতাবানের নগ্ন নৃত্য দেখে আত্মহত্যা করেছে। সর্বোপরি কোন বিচার হবেনা বলেই কন্যাটিকে মেরে নিজেও মরে গেছে ।
এই আত্মহত্যাটি বেশ দামী।
এই আত্মহত্যাটি যথার্থ।
এই আত্মহত্যাটির জন্য একটি রাষ্ট্রের সবাই সবকিছু, সব – সবাই দায়ী।
রাষ্ট্র নিজেও দায়ী।
নে বাবা, এবার বিচার কর!
পারিস তো নিজের বিচার আগে কর।