“মানসিক অত্যাচারটা যদি দৃশ্যমান হতো…!”

নুসরাত জাহান:

আজ ১০ দিন হলো ও আমার সাথে কথা বলে না। বলে, কিন্তু আমাকে বলতে দেয় না ঠিকমতো। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বা হোয়াটসঅ্যাপে নিজের মত োকরে কিছু আজেবাজে কথা বলে আবার ব্লক করে দেয়। কী মানসিক চাপ রে বাবা! আমার দোষ, আমি আমার অন্যান্য কো-স্টার্টআপ ও তাদের ফ্যামিলির সাথে সিলেট ঘুরতে গিয়েছি, যা ওকে যাওয়ার আগের দিন জানিয়েছি। ও হয়তো চেয়েছিল আমি ওকে একমাস আগে থেকে অনুরোধ, অনুমতি প্রার্থনা করবো, আর আবেদন মঞ্জুর হলে তারপর ঘুরতে যাবো। তা হয়নি। অন্যদিকে, সন্দেহ বাতিক তো আছেই।

আমরা দুজন দুই জায়গায় থাকি। একসাথেই সংসার শুরু করেছিলাম জার্মানিতে। আমার একটা ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি আছে (ডান হাত কাজ করতে অক্ষম)। তা উপেক্ষা করে বাইরে সব কাজ এক হাতে করাটা কঠিন ছিল। সে সময় আমি আমার স্বামীর যথেষ্ট সাপোর্ট পাইনি। উল্টো নানাবিধ কারণে ঝগড়া- বিবাদ লেগেই থাকতো। আমি আর পারছিলাম না। অনেকটা বাধ্য হয়েই চলে আসা বাংলাদেশে।

ভেবেছিলাম, একটা গ্যাপ পড়লে সম্পর্কটা নতুন করে সুন্দর হবে। ও ওর একাকীত্ব থেকে আবার আমাকে ফিরে পেতে চাইবে, পড়া শেষে দেশে চলে আসবে। হলো তার উল্টো। বাংলাদেশে এসে বেশ ভালো একটা জব শুরু করার দুই মাসের মাথায় আমাকে সে জব ছেড়ে চলে যেতে বলে। কিন্তু আমি রাজী হইনি, কেননা সে আমাকে যাওয়ার পর সাপোর্ট দিতে অসম্মতি প্রকাশ করে, এবং শুরু থেকেই আমি চাইনি দেশের বাইরে স্যাটেলড হই, কেননা জার্মানি যাওয়ার কয়েক মাসের মাথায় আমার বাবাকে হারাই। মা-ও অসুস্থ।

যাই হোক, নতুন করে আবার ঝামেলার সৃষ্টি হয় এবং আমাদের কথা বন্ধ থাকে অনেকদিন। সে জানায়, বাইরে না গেলে ডিভোর্স দেবে এবং অবশেষে ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে উপনীত হই আমরা। কয়েক মাস চলে যায় এভাবেই…তারপর একদিন…! রাত দুইটার সময় একটা মেয়ে কল করে আমার মোবাইলে। জানতে পারি, আমি চলে আসার তিন মাসের মাথায় আমার স্বামী তার এক্স-প্রেমিকার সাথে নতুন করে সম্পর্কে জড়ায়।

আশ্চর্যজনকভাবে স্বামীর প্রতি ঘৃণার পরিবর্তে কোত্থেকে এত্তো ভালোবাসা কাজ করেছিল, জানি না। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। (মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে) এত্তো ভালো মানুষ জানি যাকে, সে এতো তাড়াতাড়ি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে? বিলিভ করিনি। আমি বোকা বলেই হয়তো। গত বছর অক্টোবরের কথা।

ছুটে যাই ওর কাছে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে।……হ্যাঁ। ঘটনা সত্যি। ওর মোবাইলে কিছু আপত্তিকর ছবি পাই, যা দেখে আমার ভতরটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। ভুলটা আমি এখানেই করি। সব মেনে নিয়ে ওকে মাফ করে দিয়ে চলে আসি বাংলাদেশে, আর ওকে চেষ্টা করি দেশে ফিরিয়ে আনার। এরই মধ্যে খুব বড় একটা সুযোগ পাই আমি। স্টার্ট-আপ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সারাদেশে শীর্ষ দশে স্থানলাভ করি এবং সরকার থেকে ফ্রি অফিস ও সিড-ফান্ড পাই। এখন আমি একটা কোম্পানির ফাউন্ডার।

গত নভেম্বর থেকে গত সপ্তাহের আগ পর্যন্ত বেশ ভালই চলছিল সব। এই তো মার্চ মাসে বিজনেসের কাজে জার্মানি গিয়ে ওর সাথে আরও এক্সট্রা সময় থেকে আসি। ঘুরে আসি নেদারল্যান্ডের একটা সী-বিচ থেকে। বেশ ভালো সময় কাটিয়েছি আমরা। কিন্তু হ্যাঁ…আমার প্রতি ওর সন্দেহ কাটেনি কখনও। ওর ধারণা আমার কারো সাথে সম্পর্ক আছে বলেই আমি বাংলাদেশে চলে এসেছি। সব ছেড়ে চলে যেতে বলছিল এই সেদিনও। আমার ক্যারিয়ার, এতো কষ্টের অর্জন ওর কাছে মূল্যহীন।

এই মুহূর্তে ভীষণ মানসিক চাপ আর অস্থিরতায় আমি বিজনেসের দিকে এতোটুকু মনোযোগ দিতে পারছি না। কত যুদ্ধ করে বড় হয়েছি সেটা বলে শেষ করা যাবে না।

একটু আগের দেয়া ওর ম্যাসেজ “আই হেট ইউ”। হয়তো আবারো ডিভোর্সের কথা ভাবছে। কী অদ্ভুত! কোথায় ওকে ঘৃণা করার কথা আমার, আর সে নাকি আমাকে ঘৃণা করে!!…কেন সব উল্টা হয় আমার জীবনে? উল্টা জন্ম হয়েছে বলে?

কী যে মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দিন! কেন ও যা বলবে সেটাই সত্যি আর আমার কথা সব মিথ্যা? কোনো কারণ ছাড়া কেন ও আমাকে অবিশ্বাস করে? তবে কি নিজে অসৎ বলেই আমাকে অসৎ ভাবে?

…আমার চারপাশ জানে, আমি কত্ত ভালো আছি।  সবাই জানে যে আমি খুব ভালো আছি, অথচ আমি নেই – এই চাপটাও কম না।

মানসিক অত্যাচারটা যদি দৃশ্যমান হতো…!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.