ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী:
আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম। আমি কোনো কনফারেন্স এটেইন করতে যাইনি। আমি কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এখন তুমি যা যা ধারণা করছো, সব সত্যি। আমি একা যাইনি। মৌরীকে নিয়ে গিয়েছিলেম। আর আমরা হাজবেন্ড-ওয়াইফ হিসেবেই ছিলাম। যা নিয়ে তোমার এতো সংশয়! সেভারেল টাইম আমরা ফিজিক্যালি মিট করেছি! রাতভর সমুদ্রের পাশে বসে পূর্ণিমা দেখেছি। ঘন্টার পর ঘন্টা মুভি দেখেছি। গল্প করেছি।

তুমি বড়লোকের মেয়ে! ভালো জব করতে! তুমি চমৎকার ছবি আঁকো! কী চমৎকার তোমার রান্নার হাত! আমার রেজাল্ট ভালো না। টেনেটুনে পাস! হল থেকে বের হতে হলো। আশ্রয় ছিল না। তোমার বাবার একটা ফ্ল্যাট আমাকে আশ্রয় দিল।টাকা ছিল না। তোমার বেতন আমার ভরণপোষন দিল। তোমার রান্না আমার ভোজন রসিক মনটাকে আরাম দিল। যদি বলো শারীরিক নিড! সেটাও পূরণ হতো!
কিন্তু তুমি কালো! ভীষণ কালো। তুমি বেঁটে! তুমি মোটা! থাইরয়েডে প্রবলেম! তুমি আমার ভালবাসা ছিলে না। প্রয়োজন ছিলে! তোমার থাইরয়েড প্রবলেম তোমাকে মা হতে দেয়নি! আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আজ আমাদের সন্তান থাকলে আমাকে প্রতারক হতে হতো! তোমাকে প্রতারণা করিনি। ডিল করেছি। পাঁচটা বছর আমি তোমাকে সঙ্গ দিয়েছি। বিনিময়ে আমার ক্যারিয়ারটা গড়ে নিয়েছি। এবার গুড বাই। শীঘ্রই ডিভোর্সের নোটিশ পাবে। কষ্ট করে সাইনটা করে দিও।
আধো অন্ধকার ঘরে খিঁচুনী রুগীর মত ঠক ঠক করে কাঁপছে মুনা। কত ঘন্টা হয়েছে সুমন চলে গেছে, ওর মনে নেই। যাওয়া থেকে ঠাঁয় বসে আছে ও! মুনা তো জানতো এমন একটা দিন আসবে! রাতভর গোপন প্রেমালাপ, ঐ এডাল্ট ম্যাসেজ আদান প্রদান! কিংবা ঘুমের ভান করে শোনা ফোনোসেক্স! মেয়েটি যে ওর কলিগের বোন মৌরী, তাও তো জানতো মুনা।তবে কেন এতো কষ্ট হচ্ছে! পৃথিবীটা ভেঙ্গে চুরে যাচ্ছে। কত অকপটে বলে গেল কঠিন তিক্ত সত্যগুলো! এতোদিনের এতো স্মৃতি! সব মিথ্যা? সব ডিল? ছবি আঁকা! রান্না করা! কার জন্য? আর কি জীবনে আঁকতে পারবে? আর কি পারবে তুলি ধরতে মুনা?
ওয়ার্ডরোবের শেষ তাক থেকে জমানো ঘুমের বড়ির কৌটাটা বের করলো মুনা। এ জীবনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে! তাকে মরতে হবে! মরতেই হবে! কলিং বেলের শব্দে সম্বিৎ ফিরলো মুনার। ক্ষীণ আশা নিয়ে দরজা খুললো। রুশা দাঁড়িয়ে! ছোটবেলার বান্ধবীকে জড়িয়ে হাউমাউ কেঁদে উঠলো মুনা। সব শুনলো!! হাসলো রুশা।
– এমন কিছু হবে জানতাম! যে পুরুষ পর্ন হিরোইন ভেবে তোমার শরীরকে ভোগ করে, এটা ভালবাসা নয়। যে পুরুষ রবীন্দ্র সংগীত শুনে তোমার মুখখানা ভাবে, সেই তোমায় ভালবাসে! অনেক বলেছি! শুনিসনি!
– তার মানে?
– হুম! ঠিক ধরেছিস! বহুবার আমার সাথে ইন্টিমেট হবার ট্রাই করতো সুমন! এইজন্যেই তোর বাসায় আসা ছেড়েছি। মুনা, প্লিজ! জীবনে চলার পথে ভুল মানুষের আগমন ঘটতেই পারে। তাতে নিজেকে দোষ দিচ্ছিস কেন? কষ্ট পাচ্ছিস কেন? যে প্রতারণা করেছে, সে পাপী। তুই শাস্তি পাবি কেন? তুই আবার ছবি আঁকবি! তোর ছবির প্রদর্শনী হবে! দেশ-বিদেশে ছবি বিক্রি হবে!! আপাতত আমার জন্য ফাটাফাটি রান্না বসা! তোর হাতে মুগের ডাল আর কালি ভুনা যে খেয়েছে, জীবনে ভুলবে না!আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি!
কিচেনে যেতে যেতে ঘুমের বড়ির কৌটাটা দেখলো মুনা। গত দু বছর ধরে জমানো! কৌটার সবগুলো ট্যাবলেট কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিল সে। এই মুনা অন্য মুনা! মিসেস মুনা নয়! এক স্বাধীন চিত্রশিল্পী! রন্ধনশিল্পী মুনা। মৃত্যুকে ধরাশায়ী করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন চোখে মুনা!
শেয়ার করুন: