রাবিয়া আনজুম:
প্রবন্ধের শিরোনামটাই হয়ে গেলো একটু জগাখিচুড়ি টাইপ। কিন্তু শিরোনামের বিষয় দু’টো নিয়ে আলাদা করে লিখতে বসলে মূল এসেন্সটা হারিয়ে যেতে পারে বলে একসাথে করেই লিখতে বসলাম। অনেকদিন ধরেই এ বিষয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু লেখার বিষয়বস্তু পাঠক সমাজে কতটা প্রসঙ্গিক বা প্রয়োজনীয় হবে সেসব ভেবে লেখার সাহস পাইনি। ইদানিং এখানের বেশ কিছু লেখা আর তাতে পাঠকদের সাড়া আর আগ্রহ দেখে ভাবলাম আমার ভাবনাগুলোও লিখে ফেলা দরকার।
আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের সম্পর্ককে সবসময়ই একটা কঠোর বিধিনিষেধে রাখা হয়েছে। এরপর যখন যৌনতার প্রসঙ্গ আছে তখন যেন তা একেবারেই নিষিদ্ধ কিছু। যদিওবা তা কিছুটা এ্যালাউড হয়ও সেটা শুধু ছেলেদের জন্যই। মেয়েদের এ বিষয়ে কোন আলাপচারিতা রীতিমত দুশ্চরিত্রার আলামত। অথচ তিন বেলা খাবার গ্রহণের মতই সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথে ভারসাম্যপূর্ণ স্বাভাবিক যৌনতা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার একটা নিতান্ত প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ মাত্র, আর সাথে বংশবিস্তারের প্রয়োজন তো আছেই।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে যৌনতাকে নানা অবয়বের প্রলেপ দিয়ে এটাকে করা হয়েছে নিষিদ্ধ কোন আলোচনা, গালগপ্পের বিষয়। একটা বিষয় কেন ভুলে যাই, আপনার আমার সকলের জন্ম রহস্যই কিন্তু নিহিত রয়েছে একটি স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের মাঝে। সেটাতে কেন রসিয়ে রসিয়ে এতো নানা রংয়ের প্রলেপ দিতে হবে। ক্ষুধা পেলে যেমন খেতে হয়, তেমনি যৌন চাহিদাও সকল নর-নারীর আছে থাকবে, আর সেটা সবাই যার যার ব্যাক্তিগত অভিরুচি অনুযায়ী নিবারণ করবে। এটাকে ছাইচাপা দিয়ে রাখতে গেলেই বরং সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকবে।
এখনো শিরোনামের বিষয়েই কিছু লেখা হলো না ভুমিকা পর্ব সারতে সারতেই। শিরোনামের প্রথমাংশে যা বলতে চেয়েছি তা হলো দাম্পত্য যৌনতা নিয়ে আমাদের সমাজে গোপন কোন সার্ভে করা গেলে দেখা যাবে, বেশীরভাগ মিলনের সময়েই নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছা, তাৎক্ষণিক শারীরিক কন্ডিশন ইত্যাদি বিষয়ের কোন খোঁজখবর নেয়ারই প্রয়োজন বোধ বা নূন্যতম সৌজন্যতা প্রকাশের ধার ধারেন না তার পুরুষবরটি। নিজের প্রয়োজনটি মেটানোর জন্য দু’মিনিটের তোড়জোড় শেষেই নিস্তেজ পুরুষের অন্যপাশ হয়ে গভীর সুখনিদ্রা। নারী সঙ্গীনির আর কোন খোঁজই নেন না।
একটু স্টাডি করেন আপনারা। সব কাজে নিজেদের তো বিশাল জ্ঞানী বলে জাহির করেন, যেকোনো বিষয়েই দু’পৃষ্ঠার স্ট্যাটাস দিয়ে দিতে পারেন সহজেই, যৌনতা নিয়ে গালগপ্প করাতেও পুরুষেরাই এগিয়ে থাকেন। অথচ নিজ গৃহে নারীটি কোনভাবে বঞ্চিত, অতৃপ্ত থেকে যাচ্ছে কিনা, তা কোনদিনও জানতেও পারেন না।
আমি হলফ করে বলতে পারি আপনারা নিজ নিজ সঙ্গীনিকে যদি সঠিকভাবে বুঝতে পারেন, তাকে সঠিকভাবে প্রজ্জ্বলিত করাতে পারেন, তবে সেই হবে আপনার শয্যায় সবচেয়ে আবেদনময়ী। প্রাকৃতিকভাবেই নারী পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের ভিন্নতা রয়েছে, আছে কিছু ফাংশনাল ডিফারেন্স। প্রজনন তন্ত্রের বাইরেও একমাত্র নারীদেহেই রয়েছে ডেডিকেটেড ইন্দ্রিয় যা শুধুমাত্র যৌনমিলনের তৃপ্তি উপভোগ করার জন্য।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে ক্লাইটোরিস বলা হয়ে থাকে। অথচ পুরুষদের ধারণা, উপভোগের বেলায় তারাই থাকবে এগিয়ে। সহবাসের সিদ্ধান্তটাও যেন শুধু পুরুষই আগে নিবে। আমি প্রতিযোগিতার কথা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি, পুরুষদের কাম আবেদন থাকলে, নারীদেহেও সে আবেদনের কমতি নেই। বরং আপনার অজ্ঞতার কারণে আপনার সঙ্গীনি শয্যায় অতৃপ্ত থেকে গেলে সেটার দায়ভার আপনার উপরেই বর্তায়। কিন্তু আপনারা প্রতিবারেই অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা অকৃতজ্ঞের মতই শীর্ষসুখ উপভোগ করে থাকেন। সেদিক বিবেচনায় ধরলাম পুরুষদের অন্যায় আধিপত্যই থেকে যাচ্ছে।
এখন আসি শিরোনামের দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আর সেটা হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ যা আধুনিক সভ্যতায় যৌনতার অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বলতে দ্বিধা নেই যে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু প্রচলিত অধিকাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণের পন্থাসমূহ যৌনমিলনের পূর্ণ পরিতৃপ্তি গ্রহণের অন্তরায় এবং কখনো কখনো তা শরীরহানিরও কারণ, বিশেষ করে নারীদের জন্য। কারণ মিলনের সময় আর্টিফিসিয়াল বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা প্রতিদিন নিয়ম করে পিল খেয়ে যাওয়া একটি কেমন যেন একটা অসুস্থ রোগীর মতো বিষয়।
কিন্তু বেশীরভাগ পুরুষের পছন্দ থাকে তাদের স্ত্রীরা পিল খেয়ে তাদের ঝামেলাবিহীন মিলনের প্রয়োজনে সদা প্রস্তুত হয়ে থাকবেন। আধুনিক ঔষধ কোম্পানিগুলোর প্রচরণার দৌরাত্ম্যে অবশ্য বোঝা মুশকিল পিলগুলো আসলে কতখানি স্বাস্থ্যহানিকর! তারা যখন চতুর্থ প্রজন্মে পিল বিক্রি করে তখন প্রথম বা দ্বিতীয় প্রজন্মের পিলে কী কী মারাত্মক অসুবিধা ছিল, তার ফিরিস্তি দেয়, যা ঐসব আগের প্রজন্মের ঔষধ বিক্রি করার সময় কখনোই বলেনি। পঞ্চম প্রজন্মের পিল আসার পর যে চতুর্থ প্রজন্মের পিলের অজানা অসুবিধার কথা জানা যাবে না, তার কী নিশ্চয়তা! তবুও পুরুষেরা তার জীবনসঙ্গী তাদের সন্তানের মায়েদেরকে এইসব বিপদজনক পন্থা গ্রহণেই উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। খোলাখুলিভাবে বললে বলতে হয়, মূলত মিলনের সময় উত্তেজনার উষ্ণতার পরিপূর্ণ উপভোগের জন্যই এই বিপদজনক আয়োজন। আর পিল খেতে খেতে নারীদেহে পানি জমে আকর্ষণ কমে গেলে তখনো সে দায় নারীরই।
বুঝতে পারি কনডম নামের জিনিসটাতে পুরুষের আপত্তি, নারীও যে সেটাতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তাও না। আর এই পিল কনডমের দ্বন্দ্বে না থেকে পুরুষ তার নিজের আর নারীর শারীরবৃত্তিয় বিষয়গুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু ধারণা রাখলে তো এতোসব সমস্যা হয় না।
আপনারা পড়ুন, তাহলে জানবেন যে একটি মাসিক চক্রের অন্তত দশটা দিন সময় পাবেন যখন কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা, পন্থা ব্যবহার ছাড়াই মিলনে পূর্ণ সুখ পেতে পারেন গর্ভধারণের ঝুঁকি ছাড়াই। এটাকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয় ক্যালেন্ডার মেথড। তবে পূর্ণাঙ্গরূপে ধারণা নিয়েই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এই ব্যবস্থা পুরুষ এবং নারী উভয়কেই করবে পরস্পরের প্রতি আরও দায়িত্বশীল, আরো শ্রদ্ধাশীলও। জীবনটা দেখবেন হয়ে গেছে আরো উপভোগ্য, হঠাৎই নতুন।
পাঠক সাড়া পেলে ভবিষ্যৎ-এ আরো লিখবো হয়তো অন্য কোনো বিষয়ে বা এসব নিয়েই।