দু’পয়সার পাহাড়ি রমেল বিখ্যাত, সেনাবাহিনীকে পুরস্কৃত করুন    

গোধূলি খান: 

ওহে বিবেকহীন বাঙ্গালী কবে বুঝবে যে রমেল চাকমার পুরো ৫৬ পূর্ব পরুষ অনেক পুণ্যি করেছিল। আর সে কারণেই একচোখে না দেখতে পাওয়া রমেল দেশের এলিট বাহিনীর হাতে মারা গেছে। আরে বাবা, রমেলের বংশের সবাই তো এখন বিখ্যাত হয়ে গেল। 

দেশে আমজনতার মূল্য কতো? বড়জোর একটা ছাগলের মূল্যের সমান। সেখানে তো রমেলের একটা চোখ নাই। তাহলে ওর মূল্য তো আরও কম। সেনাবাহিনীর কেউ মারা গেলে পায় ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। পাহাড়ি ছাগল মানে আদিবাসী মানুষের জীবনের দাম আর কত? বড় জোর ৪০০/ ৫০০ টাকা বা আরও কম!  

মানুষ বিখ্যাত হবার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে। জাতির বিবেক বা সমাজের দর্পণ থেকে শুরু করে অধিকাংশ  মানুষ ব্যাংক লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, অসৎ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীএম পিদের, নষ্ট পচে যাওয়া মানসিকতার একদল শিল্পীকালো টাকার মালিকদের সাথে নিজেদের ঘনিষ্ঠতা করতে তাদের নষ্ট চোরা স্রোতে গা ভাসাচ্ছে। সেই সাথে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণে  ইদানীং সেলফির ছড়াছড়ি। সেখানে রমেল বিনা পয়সায় জগৎ জোড়া পরিচিত হলো তার জন্য তো সেনাবাহিনীকে কুর্নিশ করতে হবে, উল্টা তাদের গালমন্দ করা হচ্ছে।

আসলে বাঙালী খুব ঈর্ষাকাতর জাতি। বড়ই কৃপণ, এতো বড় কাজের প্রশংসা তো করছেই না, উল্টা তাদের পশ্চাৎদেশে বাম্বু দিতে চাইছে। দশবিশ লাখ টাকা দামি মানুষজনের হাতে একজন কয়েকশ টাকা মূল্যের মানুষের মৃত্যু কতো বিশাল বড় সম্মানের, এই কথাটা কেন একদল মানুষ বুঝতে চাইছে না! এদের কাজ নাই খালি সরকার, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীসহ সব পেশাজীবীর অন্যায় খুঁজে বেড়ায়।

হা রে তোরা বুঝলি না, সেনাবাহিনী বলে কথা। আমাদের দেশের সরকার মাতাজিও তাদের ট্যাক্স দিয়ে চলে। সেনাবাহিনীর উপরের কথা বলেন না। কী করেভুলে যায় এ জাতি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীর ইন্টার পাশ মেজররাও কী ধৃষ্ট্তার সাথে দেশের প্রধানকে ধমকে ধমকে কথা বলছিল। এখনো সেই ভয়েস টেপ ইউটিউবে পাওয়া যায়, কেউ তার প্রতিবাদ করার সাহস রাখে না। 

আসল কথা তো এইটা না। আসল কথা হইলো বাঙ্গালীর বিবেক নাই। এই যে ছেলেটারে পিটাইটে পিটাইতে মেরে ফেললো, সেনাবাহিনীর সেই সদস্যদের কি ঘরে ছেলে, ছোট ভাই বা ভাগ্নেভাস্তে নাই। আছে মারতে মারতে নিশ্চয় ওদের নিজের সন্তানের, ভাইয়ের, ভাগ্নের চেহারাটা ভেসে উঠেছিল। ওদের কি হাত কাঁপেনিবুকটা কি ধক করে ওঠেনিহু হু বাবা, তারপরও ওরা একচোখে দেখতে না পাওয়া মাত্র কৈশোর পার হওয়া সদ্য যুবককে অমানুষের মতো মেরেছে। মেরে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে। ওই অবস্থায় বন্দি করে রেখেছে। এরপর তো ইতিহাস, মাত্র ২০ বছরই সারা পৃথিবীর কাছে রমেল  ফেমাস হয়ে গেল। যার পুরো কৃতিত্ব সেনা সদস্যদেরএকটা পাহাড়ি ছাগলকে থুক্কু আদিবাসি মানুষকে পরিচিতি এনে দিলো, হোক না অমানবিক, অমানুষিক প্রক্রিয়ায়, তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে চলছে ক্ষোভ, প্রতিবাদ! হায়, বাঙালী, তোমরা জেলাস

বড্ড অভব্য বাঙ্গালী! কী করবো এদের নিয়ে! কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়। খালি ভুল ধরে। খালি পিছনে লাগে কারো ভালো দেখতে পারে না। আর সেনাবাহিনী হলে তো কথাই নাই। সরকার, আইন আদালত সব চুপ, চুপ বাকি রাজনৈতিক দলগুলোও। আর এই আমজনতার একটা দল সারাক্ষণই আছে পিছনে লেগে। কী রে তোদের কি কোনো কাজ নাই! কাজ না থাকলে ভাবো আমবাঙ্গালী, এখানে সেনাবাহিনীর দোষ কোথায়? আরে বাবা, একটা ট্রাকের দাম কত্তো টাকা বলুন তো? কয়েক লাখ তাই না? আর রমেলের মূল্য কত? বড় জোর ৩০০ থেকে ৫০০। ক্ষেত্র বিশেষ তো ২০ টাকা মূল্যও জোটে না। তাহলে পাহাড়ের ছিচকে আদিবাসীকে শায়েস্তা করতে যেয়ে, মেরে ফেলেছে, কী এমন ক্ষতি হয়েছে তাতে? ওর বাবা-মার হাতে একটা ছাগল, না হলে শ পাঁচেক টাকা ধরিয়ে দিলেই তো হবে। 

কিন্তু মহা মূল্যবান ট্রাকটা যে আগুনে পুড়ে গেল। ধীরে ধীরে আগুন পুড়লো পুরো  ট্রাক। আহা! কী কষ্টই না পেলো ট্রাক বেচারী, চারটে চাকা, কাঠের বডি, স্টিয়ারিং সব পুড়ে গেল। আহা কার এতো বড় সর্বনাশ হলো? রমেল আগুন লাগায়নি ট্রাকে তো কী হয়েছে? অন্য কোনো আদিবাসীর বাচ্চারা তো লাগিয়েছে। আরে কত্তো বড় বুকের পাটা, হ্যাঁ! আদিবাসী হয়ে বিক্ষোভ করিস, আবার যানবাহন পোড়াস! অবশ্যই তোদের শাস্তি পেতে হবে।

বাঙ্গালী খালি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা দেখে, ওদের আন্তরিকতাটা দেখলো না! আরে বাবা নিজেদের বদনাম করে যে ওরা রমেলকে মেরে বিখ্যাত করে দিল! তার মূল্য বুঝলি না। আবার পুড়িয়ে ছাই করে দিল, যাতে রমেলের পরিবারকে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে ওর ক্ষতবিক্ষত লাশটা দেখতে না হয়। প্রাণপ্রিয় ছেলের এমন চেহারা দেখলে যেকোনো বাবামার আত্মা খাঁচা ছেড়ে উড়ে যেতে পারতো, মা-বাবা শোকে স্থাণু হয়ে যেতে পারত! আমাদের রাজসিক বাহিনী তা প্রতিরোধ করেছে সন্তানের লাশ না দিয়ে। আবার পুড়িয়ে দিল। সেই সাথে রমেলের পরিবারের দাহ খরচও বেঁচে গেল। কত্তো ভাল আর সুইট আমাদের সেনাবাহিনী। তাদের পিছনে না লাগলেই কি না! 

ওহে গোল্ড ফিস মেমোরির জাতি, খুব তো তনু তনু করেছিলি, কী হলো কিছু? সেনাবাহিনীর কিছুও কি ছেঁড়া গেল? রমেল রমেল করেও কিছু হবে না, সেনাবাহিনীর একটা কেশও বাঁকা হবে না। কারণ সরকার তাদের মাথায় ছাতা ধরে আছে। ক্ষমতার চেয়ারের পায়া শক্ত করতে দেশের কাজ না করলে চলে, আমজনতার জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না করলেও চলে। কিন্তু এই  বাহিনীর সব দাবী না মানলে চলবে না। অন্যথায় ঐ চেয়ারে আগুন ধরে যেতে পারে। আরে বাবা দেশ বড়, না ক্ষমতার চেয়ার বড়!

সেনাবিহিনীর জন্য ক্ষমতা? না ক্ষমতার জন্য সেনাবাহিনী? তাই ১/১১র সময় এতো কেচ্ছাকাহিনীর পর বাবারা দিব্যি রসে-বসে, আমেদুধে, পোলাওকোর্মায় লাল পানি, তেঁতুল পানিতে মজাছে আছে। কী দরকার এদের পিছনে হুড়ো দিতে যাওয়া! পাহাড়ের কান্না কোনদিনই মনে হয় বন্ধ হবে না। সেনাবাহিনী ও সেটলার থেকে শুরু করে যে যেভাবে পারছে, একহাত নিয়ে নিচ্ছে পাহাড়ীদের। 

আহারে সেনাবাহিনীর হাতে কোনো কাজ নাই, বেচারারা খালি পিটি প্যারেড করে। খায় দায়শুয়ে বসে থাকে। গলফ খেলে, পার্টি করে। কাজের প্রপার প্রাকটিস না থাকায় রাস্তায় বের হলে ভুলভাল করে ফেলে। যদিও ভুলগুলা ওদের পূর্বপুরুষ পাকিস্তানিদের মতোই ভয়ানক, বীভৎস আর নিষ্ঠুরতায় ভরপুর হয়। তবে এর একটা ভাল দিকও আছে। আমাদের সেনাবাহিনীর কারণে এই প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, জানেনি, তাদেরকে বোঝাতে সুবিধা যে, একাত্তরে পাকিস্তানি আর্মি আমাদের বাঙ্গালীর উপর কী ধরনের অত্যাচার করেছিল! এই যে দেখো, ঠিক এভাবেই।

এতো গুনের আধারের দলবল যদি একটু-আধটু দেশসেবা দেশসেবা খেলতে যেয়ে মিসটেক করে, তাতে এতো ইমোশনাল হবার কী আছে! আরে এই ইমোশনের জন্যই বাঙালী জাতির কিচছু হলো না। বুদ্ধি ওদের যেখানেই থাকুক, ক্ষমতাবানদের কিন্তু পকেটে পুরে রেখেছে। তাই চুপ থাকো। লাখ টাকার হাতির পায়ের নিচে ইঁদুর মারা পরলে কী আর হাতির দোষ হয়! দোষ হয় নিরাপরাধ ইঁদুরের।

এ কদিনের পেপার পত্রিকা আর টকশো এর কল্যাণে মনে হলোসেনাবাহিনী বড্ড দয়াবান, দায় সবই আমাদের সহ্য করে  যাওয়া জাতির, যাদের মেমোরি জাস্ট গোল্ড ফিসের। তাই এই সেনাবাহিনীর জন্য প্রাউড হোন। দুই পয়সার রমেলকে বিখ্যাত করে দেবার জন্য সেনাবাহিনীকে তিরস্কার না করে বরং বীরের সম্মাননা দিয়ে পুরস্কৃত করুন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.