ধর্মানুভূতির তোড়ে এই ‘ডিফেন্সিভ’ জীবন

সরিতা আহমেদ:

সে এক যুগ ছিল, ছিহরি যখন তখন Go.. As you Like খেলে পৃথিবীর বুকে পাপ-পূণ্যের এন্টারটেইনমেন্ট দিতেন। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় নয়, খালি ভারতে। কারণ তখন পৃথিবী মানে খালি ইন্ডিয়া, আর ইন্ডিয়া মানে ধরিত্রী ছিল।
এখন পোস্ট- কলি কাল। ছিহরি এখন প্রধানমন্ত্রী সমাজ যোজনায় ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ এর দাবার বোড়ে। টাইলস রূপেণ সংস্থিত! অন্য কোথাও নয়, সেই ভারতেই মানে ইন্ডিয়ায় চাকরিরত!

সেদিন মঞ্জু, মানে ফ্ল্যাটের ‘কুড়াওয়ালি’ কাচড়া তুলতে এসে থমকে গেল।
— ” কী গো, সিঁড়িতে কি দেখছ অত মন দিয়ে? “
— ” ভগবান।”
— ” এ: ক্ষী!! সেকী! ”
— ” হুম, দেখনি, সিঁড়িতে ভগবান বসেছে গো। আর কেউ গন্দগী করবেক না।”

গিয়ে দেখি, সত্যিই সিঁড়িতে ‘ভগবান বসেছেন’।

‘এখানে কেউ কফ, থুতু ফেলবেন না ‘/ ‘Don’t Spit here’…
লিখলে আধুনিক জনতা বুঝবে না। দ্যাশে শিক্ষা নাই।
তাইলে উপায়, ভগবানের ফটো। কারণ দ্যাশে ধর্ম আছে ষোল আনা। শুধু ধর্মই নেই, ভয় আছে। অশিক্ষার ভয় নয়, দ্যাবতার কোপে পড়ার ভয়।

এইবার, আমার হয়েচে জ্বালা।

দ্যাবতা মে শ্রদ্ধা নাই, মুখের মধ্যে গুটখাও নাই। ফ্যাচফ্যাচ করে পিক ফেলতে পারি না, ভক্তিতে নুইতেও পারি না। কিন্তু তাও ঘরের সামনে এমন টাইলসরূপের অবতার সইতে হচ্ছে।

সারা বছর মর্নিং স্কুল।
এলার্ম বাজার আগেই “আল্লাহু উ উ উ আক..বর…” চোটে ভোরের ঘুম চটকে চমচম, তারপর পাশের ফ্ল্যাটের গুপ্তাজীদের টুনটুনি ঘন্টা বাজিয়ে প্রাতঃ প্রণাম শোনা, এপাশের বাড়িতে ডোরবেল কাকভোর থেকে মাঝরাত অব্ধি গায়ত্রী মন্ত্র শোনাচ্ছে, সেসব ইগ্নোর করে একরাশ ল্যাদ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে গুটখার দাগে টাইলস রূপের ছটায় ভগবানের বিশ্বরূপ দর্শন। আর ছয়মাস অন্তর কীর্তনের মাইকিং যন্ত্রণা তো বলাইবাহুল্য ।

স্কুলের রাস্তায় গোটা তিনেক মাদ্রাসার তাবলিগদের জটলা, হিজাবিদের ভিড়.. এড়িয়ে ড্রাইভ করা, স্কুল গেটে একটা রক্ষাকালী মন্দির (যেখানে রোজ নানা শব্দে ভক্তি মাপা হয়, আবার প্রতি মঙ্গল-শনিবারে পাঁঠা কাটা হয় ভক্তির শক্তি দেখাতে।) আর একটা (সুরক্ষা) দূর্গামন্দির পেরোনো…. মানে নাস্তিকের ভাবানুভূতির দফারফা!
চারদিক কেবল ধর্মানুভূতির পাহারাদার এটেনশান মোডে খাড়া।

তার মধ্যেই একটু ড্রিবল, একটু ডজ করে, খানিক হেডপাঞ্চ করেই যাবতীয় অনুভূতি, অবিশ্বাসীর মানবাধিকার ইত্যাদি বাঁচাতে হচ্ছে।

একটা ‘সনু নিগম’ আর একটা ‘আজান’ নিয়ে চারদিক হুলুস্থুল। একগাদা আর্জি, ফতোয়া, নেড়ামুণ্ড নিয়ে মিডিয়া তথা ফেসবুক টুইটার উত্তাল।
তা, আমরা মানে ম্যাঙ্গো-পাব্লিক যে রোজদিন আজান, ঘন্টা, মিলাদ, কীর্তন, সত্যপীরের ভজন, (মিথ্যে) পীরের জলসার ঝংকার… এতোসব ধর্মানুভূতি সামলে দাঁতে দাঁত চেপে ডিফেন্সিভ জীবন কাটাচ্ছি, তার বেলা!! এর জন্য কোনো প্রাইজ মানি থাকবে না কেন?

সত্য সেনোরিটা, ভগবানেশ্বরাল্লার রোজগার চিরন্তন ভাবে অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর রাজনীতির হাতে ন্যস্ত ছিল, এখন ‘প্রধানমন্ত্রী রোজগার যোজনা’য় টাইলস স্টাইলে ঝাড়ুদার পোস্ট জুটেছে। আর বেকার মানুষ এদের তোল্লাই দিয়ে ‘সহিষ্ণুতার থিওরি’ মাড়িয়ে খামচাখামচি করে মরছে।

এটুকু বোঝে না, অবিশ্বাসীদের সহিষ্ণুতার উপরই তাবত ঐশ্বরিক অত্যাচার টিকে আছে। নইলে ছি:হরির ঝাড়ুদার পোস্টটাও ফস্কে যাবে!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.