ছেলে আর মেয়ে, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

আফসানা শারমিন ইভা:

ছেলেদের মুখে এমনটা তো অহরহ শোনা যায় যে মেয়েরা খারাপ, মেয়েদের মুখেও একথা নতুন নয় যে, ছেলেরা এক একটা আস্ত বদমাশ!

দিন আগে অবসর সময়ে কিছু গয়নার অনলাইন পেইজে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। মজার ব্যাপার হলো প্রায় অনেক ছবিতেই এক ধাঁচের কিছু মন্তব্য দেখলাম, “বাবু/জান, আমাকে এটা কিনে দিবা?/কিনে দিতে হবে!/দিবা কিন্তু প্লিজ!!” অতঃপর, ছেলে নামধারী কিছু আইডিকে মেনশন করা।

এ ধরনের দৃশ্য অবশ্য নতুন কিছু নয়, ছেলেবন্ধু বা স্বামীকে নিয়ে খেতে বসে বা শপিংয়ে গিয়ে কজন মেয়ে নিজে বিল পরিশোধ করেন? আমাদের মা-খালা বা নানী-দাদীর আমলে এমন দৃশ্য স্বাভাবিক ছিলো, কেননা সে সময় স্বাবলম্বী নারীর সংখ্যা ছিলো হাতে গোণা কয়েকজন। নারীরা তখন ভরণ-পোষণের জন্যে পুরুষের উপর নির্ভর করতেন। পড়াশোনার গণ্ডিও তাদের বেশিদূর ছিলো না বলে পরনির্ভর হওয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় ছিলো না।

কেটে গেছে বহু বছর। জল গড়িয়েছে অনেক দূর। এখন আমরা মেয়েরা নিজেদের অধিকার সচেতন। আত্মসম্মানবোধ প্রখর আমাদের। এসবের পেছনে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা একটি অন্যতম কারণ। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা নিজেদের সম-অধিকারের কথা বলবো, কেন তবে বিল মেটানোর বেলায় নির্লজ্জের মতো পুরুষের মুখাপেক্ষী হবো?

উপহারের ব্যাপার আলাদা,  আমি বলছিলাম সাধারণ প্রেক্ষাপটের কথা। ছেলেরা এসব মেয়ের জন্যেই জোর গলায় বলতে পারে, “মেয়েরা তো শুধু টাকা চিনে!” সত্যি কি সব মেয়েরা শুধু টাকা চেনে? সংসারগুলো শুধুই কি এই টাকার জন্যে টিকে আছে?

এমন অনেক মেয়ে আছে যারা আত্মসম্মান শব্দটার নিগূঢ় অর্থ উপলব্ধি করে। বিল মেটানোর ক্ষেত্রে ভাগাভাগি করে নেয়। লেডিস সিটে পুরুষকে বসে থাকতে দেখে তাকে বলতে যায় না, “এই যে, সিটটা ছাড়ুন, এটা মহিলা সিট!” বলতে যাবেই বা কেন, সিট তো শুধু মহিলাদের নয়, শিশু আর প্রতিবন্ধীদের জন্যেও বরাদ্দ যে!

এবার একটু ছেলেদের দিকে দৃষ্টিপাত করি।

এমন ছেলে হরহামেশাই দেখা যায়, যারা প্রেম করে চকচকে চামড়া, ফিটফাট ফিগার আর মেক-আপ এক্সপার্ট মেয়ে দেখে, যাতে বন্ধু মহলে বাহবা নেওয়া যায়, “দেখ দোস্ত, আমার গার্লফ্রেন্ডটা কতো সুন্দরী!” “গার্লফ্রেন্ড”কে বিছানায় নিয়ে যেতে পারাই তাদের কাছে জীবনের লক্ষ্য।

এইসব ছেলেই আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে কায়দা করে পূর্বোক্ত মেয়েটাকে খসিয়ে বাবা-মায়ের পছন্দে সাধারণ সুন্দরী আর সংসারী মেয়ে খুঁজে নেয়, যে তার অতীত নিয়ে মাথা ঘামাবে না, যার কাজ হবে কিছু সন্তান এনে দেওয়া! এ ধরনের ছেলেরাই সাধারণত মেয়েদেরকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের সুযোগ পেলে ছাড়ে না। আর তাদের পূর্বোক্ত বান্ধবীগুলো তাদের সম্পর্কে ছেড়ে কথা বলে না। কী অসুস্থ অবস্থা!

পক্ষান্তরে এমন ছেলেও দেখেছি, যে তার বৌয়ের জন্যে হাত পুড়িয়ে রান্না করে,  বৌয়ের সাথে সংসারের কাজ ভাগ করে নেয়াকে আত্মসম্মানহানি হিসেবে বিবেচনা করেন না। মেয়েরা যে শোপিস নয়,  এটা তাদের বুঝিয়ে বলতে হয় না,  একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকু তারা সঙ্গিনীকে দেন।

সব মুদ্রার দুপিঠ থাকে। ফলাও করে এটা কখনোই বলা সম্ভব নয় যে ছেলেরা/মেয়েরা খারাপ

একে অন্যের প্রতি এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে যখন আমরা একে অন্যকে সম্মান করবো,  আত্মসম্মান বোধ সম্পর্কে আরো সচেতন হবো,  ভালোবাসা কথাটাকে বায়বীয় না ধরে সত্যি মেনে নিবো, সংসার তখনই সুখের হবে, প্রেম তখনই নির্ভেজাল হবে।


লেখক: আফসানা শারমিন ইভা
School Of Law, BRAC University
ঢাকা, বাংলাদেশ

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.