মুনতাহা বৃত্তা সাচী:
ইংলিশে ব্রেসিয়ার, সংস্কৃতে কঞ্চলিকা আর বাংলায় স্তনাবরক বস্ত্র, কাঁচুলি ও বক্ষবাস (হৃদয় বাস হলে কী মিষ্টি লাগতো শুনতে!) আমি আমার ২১ বছর যাবত সেভাবে কাঁচুলি পরতাম না। প্রয়োজন কিনা ভাবতাম না, কিন্তু পরতে ভালো লাগতো না। অস্বস্তি হয়নি-রাস্তায় হেঁটেছি, ট্যাক্সিতে উঠেছি, ট্রামে চেপেছি, ট্রেন ভ্রমণ, প্লেনে পাড়ি দিয়েছি। দিব্যি আমি তো আমিই ছিলাম। এর আগে আমার কাঁচুলি ছিল না, এমন নয়। অন্য মেয়েদের মতো আমারও বয়ো:সন্ধির কিছু পর থেকেই ছিল (স্পোর্টস হৃদয় বন্ধন) পরতে পরতে এখন আমি অভ্যস্ত।
স্বস্তির কথা থাক, অস্বস্তি হয় না কারণ মানুষের বাজে অভ্যেস, অভ্যস্ত হয়ে পড়া। পছন্দ করে যেমন ডেনিম কিনি, কাঁচুলিও তাই। নানা রং নানা ধরন। শুধু নিজে দেখবো বলে আরো বেশি সুন্দর কিনি। ভেতরটা যে বেশি সুন্দর রাখতে হবে। নারীদের শক্ত করে শুধু কাঁচুলি বাঁধতে হয় না। চোখ শক্ত করে, জীবন শক্ত করে বেঁচে থাকতে হয়। গালগুলো যেন পাথর। তবুও সেখানে কেউ ছুঁয়ে দিলে, পাথর গড়িয়ে জল পড়ে, চিবুক ছুঁয়ে স্তনে এসে ভিড়ে।
সমাজ তুমি কি টের পাও? আমরা এইরকমভাবে বেঁচে আছি! উপহাস হলেও সত্যি। নারী হয়ে জন্মেছো? মূল্যবোধ জীবন বোধের চেয়ে বড় শিক্ষা সমাজ বোধ! সমাজ কী চায়! আমাদের বিপরীত লিঙ্গ(পুরুষ) যদি এসব শিখতো! তাদের মতোই আমরা আমাদের পছন্দমতো ড্রেস কোড করে নিতে পারতাম।
সবার নিশ্চই মনে পড়ে হিস্ট্রি বইয়ে আমরা পড়েছি আদিম যুগের মানুষ পাথর ঘষে একরকম অস্ত্র তৈরি করতো। তার মধ্যে একটি নাম হলো ফলা। কিছুটা আবছা ভি আকৃতির মতো এবং ধারালো। এক সময় পুরানো দিনের নায়িকারা আকর্ষণীয় নাচে গানে এক ধরনের ব্লাউজ বা টপস পরতো। স্তন দেখতে অমন ধারালো হয়ে থাকতো। আমার এক পুরুষ বন্ধু অনেক আগে বলেছিলো, “ছোটবেলায় ভাবতাম মেয়েদের স্তন বোধ হয় এমন।” বায়োলজিক্যালি স্তন এমন ধারালো হবার কথা না। ওটা টপস বা ব্লাউজের কাটিং প্যাটার্নের জন্য এমন দেখায়।
অনেকে কন্যা সন্তান হলে সান্ত্বনার বাণীর মতো একটা কথা বলে থাকেন -‘মেয়ে সন্তান হওয়া বিধাতার রহমত।’ ইস বিধাতা যদি আর একটু রহমত করতেন। নারীর ফলার মতো স্তন দিতেন। পুরুষ ভয়ে ওইদিকে তাকাতো না। কেননা তারা ঘেঁষতে আসলেই ওই ফলা তাদের হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ভেদ করতো। সমাজ দেখতো ছেলেটির মতো মেয়েটিরও রক্ত লাল।
ছেলেরা বড় হয়ে গেলে নাকি মাকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা পায়। এমন মায়েরা সাবধান। মানুষ তৈরি করুন। ছেলে নয়। লজ্জা কেন আসবে? কোন ফিলিংস থেকে? সে মাকে নিয়ে অমন কেন ভাববে! আমি চাইবো, ছেলেরা বড় হোক তেমন করে, যখন তখন মমতা ভরে মাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরবে। চাইলে জাপটে ধরে চুমু। মাকে মা ভাববে, প্রেমিকাকে প্রেমিকা… আর রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মেয়েটির বুকে ওড়না আছে কিনা, কাঁচুলির মাপ কতো, পরলো কিনা… তাতে তার কিছু এসে যাবে না।
সে বুঝবে স্বাধীনতা শব্দটি পুরুষের মতো নারীরও। ঢিলেঢালা ভাবে হেলে-দুলে স্বস্তিতে থাকতে চাই। বেঁচে থাকার আরাম ও আনন্দ চাই।