তামান্না ইসলাম:
হ্যাঁ, অপু বিশ্বাসকে আমি এই নামেই ডাকতে চাই। এর চেয়ে বড় কোনো পরিচয়ের যোগ্য আসলে সে নয়। কদিন ধরেই মিডিয়ায় তুলকালাম চলছে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটি শাকিব-অপুকে নিয়ে। বেশিরভাগই ধুয়ে ফেলছে শাকিব খানকে। ধুয়ে ফেলারই কথা।

কিন্তু অপু বিশ্বাস কী করেছেন? চোখের জলে ভেসে মানুষের কাছে করুণা ভিক্ষা করতে এসেছেন? একজন শক্তিশালী জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিয়ে করে, স্বামী বললেই তার কথায় সেই বিয়েকে লুকিয়ে রাখতে রাজি হবেন কেন? তার কী তখন একবারও মনে হয়নি যেই ব্যক্তি তাকে স্ত্রী’র পরিচয় দিতে রাজি নয়, সে আসলে তাকে কতখানি অমর্যাদা করছেন? তাকে আসলে ঠিক কতখানি বিশ্বাস করা যায়?
তিনি বারবার বলছেন, ‘শাকিবের ক্যারিয়ারের জন্য আমি এটা করেছি।’ এই কথাটাও আমার কাছে খুব হাস্যকর মনে হয়েছে। আমরা সবাই জানি বিয়ের পরে নায়কদের নয়, বরং নায়িকাদের চাহিদাই কমে যায়। তার মানে কী এই দাঁড়ায় না আসলে নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবেই তিনি বিয়ের কথাটা গোপন করেছেন! আর সেজন্যই অমর্যাদার ব্যাপারটা তার মাথায় আসেনি?
একজন প্রতিষ্ঠিত নায়িকা যদি বলেন ‘আমার শাকিবকে ঠিক রাখতে হবে, তাই আমি ক্যরিয়ারের কথা ভাবিনি।’ সেইসব নায়িকারা আসলে সমাজে মেয়েদেরকে কী মেসেজ দিচ্ছে? বিয়ের জন্য ক্যারিয়ারকে লাথি মারো? এই অপু বিশ্বাস আসলে নিজেকে একজন মেয়েমানুষই ভাবে, মানুষ নয়। নিজেও সেকথা বলেছেন, ‘আমি তো একজন মেয়ে মানুষ।’
আমি নিজেও মা, তাই আমি জানি একা একা একটা সন্তানকে জন্ম দেওয়া কতখানি কঠিন কাজ হতে পারে এবং শুধুমাত্র একজন অমানুষ বাবাই পারবে কোনো হবু মাকে এই পথে ঠেলে দিতে। কেন অপু সেটা মেনে নিলেন? শাকিবের সাথে বিয়ে বাঁচাতে? যেই স্বামী আট বছর ধরে স্ত্রীকে স্ত্রী হিসাবে মর্যাদাই দিলো না, তার জন্য এতো প্রেম?
অপুর তো একটা বাচ্চাকে নিজে বড় করার মতো যথেষ্ট সঙ্গতি ছিল। তাহলে কীসের এতো দায়? বাচ্চার বাবার পরিচয়ের জন্য? অপু শাকিবকে ত্যাগ করলেও কিন্তু বাচ্চার মা যেমন অপু, তেমনি বাচ্চার বাবাও শাকিবই থাকতো এবং থাকবে। যে স্বামী বা বাবা লাখ লাখ টাকা দিয়ে দায়িত্ব সারে, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখতে যায় না, এমনকি সন্তানের জন্মের সময় উপস্থিত থাকার প্রয়োজনটুকুও বোধ করে না, সেই কাগুজে স্বামী বা বাবার কী এতো প্রয়োজন?
অপু নিজেও কিন্তু নিজের কাছে পরিষ্কার ছিল না তার বা তার বাচ্চার জীবনে আসলে শাকিব খানের প্রয়োজন কতোটা। যদি সে নিশ্চিত হতো, প্লেন থেকে নেমেই সে সংবাদ সম্মেলন করতো, কোর্টে যেত। তা না করে সে অন্তরালেই লুকিয়ে রাখলো তাদের সন্তানকে। এবং তারপর যখন শাকিব খান তার মতের বিরুদ্ধে গেছে, ‘রংবাজ’ ছবিতে তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বুবলিকে নিয়েছে, তার ভাসা ভাসা সন্দেহ শক্তপোক্ত হয়েছে, তার মনে হয়েছে আমও গেলো, ছালাও গেলো, কাগুজে স্বামী হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, ক্যারিয়ারেও আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী, তার নিজের ভাষায় ‘আমাকে কেন ও ছোট করলো’ ঠিক তখনই সে মোক্ষম অস্ত্রের ব্যবহার করলো।
দুর্বল নারীর চিরায়ত অস্ত্র, চোখের পানি আর কোলে শিশু। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য, ধারালো অস্ত্র আর কী হতে পারে? তার স্বামী তাকে আট বছর স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দেননি, তার আসন্ন মাতৃত্বকে সম্মান করেনি, তার সন্তানকেও পরিচয় দেননি কারো সামনে, তাতে তাকে ছোট করা হয়নি, ছোট করা হয়েছে জনৈকা নায়িকাকে সে না করা সত্ত্বেও একটি সিনেমায় নেওয়াতে।
হায়রে বাঙ্গালি নারী। তুমি কী আসলে ছোট আর বড়’র পার্থক্য বোঝো? নাকি সেটুকু বোঝার বোধশক্তিটুকুও কেড়ে নিয়েছে সমাজ তোমার কাছ থেকে? আর কতোকাল নিজেকে এতো অসহায় ভাববে তুমি?
সর্বশেষ নাটক। শাকিব খান ছেলে মেনে নিল, অপুকে নয়, তখনো তিনি আদুরে গলায় বলছেন, ‘আরও দুই একটা দিন দেখি।’ লক্ষ কোটি মানুষের সামনে আদর্শ, নির্ভরশীল, দুর্বল বাঙ্গালি স্ত্রী হয়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসে আছেন ‘আমাকে একটু করুণা করো শাকিব খান।’ এবং মিডিয়ার চাপে যখন শাকিব খান তাকে মেনে নিলেন অবশেষে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করলেন।
ধিক তোমাকে মিসেস শাকিব খান। ওই পরিচয়টুকু ধুয়ে তুমি পানি খাও। প্রতিষ্ঠিত, আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিত্বময়ী নারীর মুকুট তোমাকে মানায় না।
শেয়ার করুন: