ইসলামের ‘ঝাণ্ডাধারীদের’ বলছি …

ফারজানা আকসা জহুরা:

মেজাজটা চরমে। যখনই বাংলাদেশের খুব বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, সাধারণ জনগণ যখন বিপদের মুখে থাকে, ঠিক তখনই একদল লোক ইসলামের ঝাণ্ডা নিয়ে অন্য কোনো ইস্যু তৈরির চেষ্টা করে। যা সাধারণ জনগণের মূল সমস্যা থেকে শুধু ভিন্ন-ই না, অবান্তরও বটে!

সাধারণ জনগণ পারে না চুপচাপ বসে থাকতে। তাও তাদের বসে থাকতেই হয়। সব ব্যাপারে তাদের কথা বলা নিষেধ। তারা যে খুব ভালো আছে তা কিন্তু না। একদল মানুষের কাছে ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই নাই। এরা উঠতে ক্রিকেট, বসতে ক্রিকেট। আর থাকবেই বা কী করে? অন্য কিছু নিয়ে কী কথা বলা যায়? না সমালোচনা?

অন্য আরেক দল গেছে সুন্দরবন রক্ষা করতে। পারবে না, তাও হুদাই চিল্লাচিল্লি করে। একদল মানুষ হলো দেশান্তরি। বিদেশে থাকে, আর কামলাগিরি করে সরকারের কোষাগার ভরছে। আরেক দল সারা দিনরাত কারখানায় পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে। আর অন্য দল সারাদিন মাঠে-ঘাটে কাজ করে আমাদের পেট ভরাচ্ছে।

সাধারণ মানুষরা গুম হচ্ছে, তাদের মেয়েরা হচ্ছে ধর্ষিত  … ছেলেরা হচ্ছে খুন …. এমনকি ছোট ছোট শিশুদেরও নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। দিন আনে দিন খাই মানুষগুলি দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মেলাতে পারছে না। এতো শত কষ্টের মাঝে তারা আজ প্রতিবাদের ভাষাটিও হারিয়ে ফেলেছে।

ঠিক এই সুযোগে একদল সরকারি লোক আছেন, যারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। আর একদল সরকারি লোক তেল-গ্যাস বিদেশিদের কাছে বিক্রি করেছে এবং দফায় দফায় তেল বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। ভণ্ড দেশপ্রেমিকরা দেশের সম্পদ বিক্রি আর ধ্বংসে ব্যস্ত। এরা এখন সুন্দরবন ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে।

চারিদিকে যখন এতো শত সমস্যা, ঠিক তখন এই ইসলামপন্থী দল বিদ্যমান ইস্যুর বাইরে, জনস্বার্থের বাইরে ধর্মীয় ইস্যু তৈরি করছে। দেশের অন্যান্য সমস্যার বিরুদ্ধে তাদের কোনো আন্দোলনের খোঁজ থাকে না। কিন্তু যখনই সাধারণ জনগণ রাস্তায় নামে আনন্দ করতে কিংবা আন্দোলন করতে, ঠিক তখন এই দল ইসলামী ঝাণ্ডা উঠিয়ে ধর্মের ইস্যু বানিয়ে মাঠে নামে।

তারা আসলে ঠিক কী রক্ষা করে? কাদের স্বার্থ রক্ষা করে? আমরা আসলেই বুঝি না …..

আচ্ছা, ইসলাম মানে কী?

দেশপ্রেম কি ঈমানের অঙ্গ?

ঈমান ছাড়া কি ইসলাম হয়?

সুন্দরবন কি আমাদের দেশের সম্পত্তি?

তেল গ্যাস কি আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি?

মানবতা কি ইসলামের অংশ?

যদি তাই হয়, তাহলে যখন সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লুন্ঠিত হয়, তখন আপনারা কই থাকেন? যখন বাসে রাস্তায় মেয়েদের শরীরে হাত দেয়া হয়, তখন আপনার ইসলাম কই থাকে ? যখন শতকরা ৯২ মুসলিম দেশে নারীরা ধর্ষিত হয় তখন আপনার ইসলাম কই যায়  ? যখন ছোট ছোট শিশুদের যখন হত্যা করা হয় তখন আপনার ধর্ম ইসলাম চুপ থাকে কেন ?

আপনাদেয় ইসলাম কী শুধু পহেলা বৈশাখে জাগ্রত হয়? আপনাদের কী শুধু ভাস্কর্য আর দেব-দেবী দেখলেই গায়ে জ্বর আসে? আপনাদের কাছে কেবল মাত্র  বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতিকেই হারাম বলে মনে হয়? আর বাকি সব দুই নাম্বারী কাজ সবই জায়েজ?

অথচ যখন যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে শত শত মানুষ মরে যায়, তখন আপনার মানবতার ধর্ম কই থাকে? তখন আপনারা কী নাকে তেল দিয়ে ঘুমান?

যখন দাড়িওয়ালা টুপি পরা লোকেরা হজ্ব করে এসে ঘুষ নেয়, যৌতুক নেয়, তখন কী আপনার ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয় না? নাকি এই হারাম টাকা আপনাদের কাজে জমজমের পানি মনে হয়? যখন আপনার শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম দেশে নারীরা ধর্ষিত হয়… তখন কী আপনার ইসলাম লজ্জিত হয় না? নাকি তখন তাদের গণিমতের মাল মনে হয়?

থামেন ভাই থামেন, আপনাদের দ্বারা তো ইসলাম রক্ষা দূরের কথা, নিজেদের ঈমান রক্ষা করাই সম্ভব না। আর আপনাদের মত ভণ্ড ধার্মিকরা করবেন ইসলাম রক্ষা? আগে আপনারা নিজেদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করুন, পরে না হয় আমাদের হেফাজত করবেন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.