মারজিয়া প্রভা:
“আমাকে কি এখন অপুর মতো নায়িকা নিতে হবে? অপুর এখন নায়িকা হবার মতো শারীরিক অবস্থা আছে? আজ যে অপুকে দেখেছে সবাই, তাকে নায়িকা নেওয়া যায়?”
নাম্বার ওয়ান শাকিব খানের বক্তব্য। সন্তান জন্মের পর স্বভাবজাত মোটা হয়ে যাওয়া অভিনেত্রীকে নায়িকা বানানো যায় কি, বলেন? আবার সন্তানটা তার নিজেরই!
অনেকেই বলছে, মানে নারীবাদের বিরোধীরা বলছে, (যারা নারীবাদকে কিটিবাদ বলে) এইবার অঙ্গে অঙ্গে জ্বলে উঠবে এরা! তা উঠবো নাই বা কেন? শাকিব খান, যে সুপার স্টারকে দেশের সবাই এক কথায় হিরো মানে সে যদি ধুম করে বলে উঠে, “এই অপু বিশ্বাসকে নায়িকা করা যায় না?” তাহলে কি খুব অপরিচিত লাগে? আমার এই দেশে, এই আমিই তো কতো শিক্ষিত লোকের কাছে শুনে এলাম, “আমার ফিগারের জন্য জব পাবো না”। “মেধা ফেধা কিচ্ছু না, ফিগার না হলে লোকে দাম দেবে না” কিংবা “তোমাকে প্রেজেন্ট করা যায় না আমার বন্ধুদের সামনে”। শাকিব খান তাদের প্রতিনিধি মাত্র, অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ না।
কিন্তু দেশের সিনেমার যখন দিনবদলের সময়, তখন কতদিন শাকিব খান খালি শোপিসের মত নায়িকা দেখিয়ে ছবি চালাতে পারবে? ভাই প্লেবয় ম্যাগাজিন পর্যন্ত পাঁয়তারা গুটিয়েছে। কারণ দিনশেষে এখনো মানুষ কন্টেন্ট দেখে, মেকিং দেখে। এক আলুভাজি যতরকম মসলা দিয়েই খাওয়ান! সেটা আলুভাজিই থাকে। তাই আয়নাবাজি গত দশবছরের বাংলা সিনেমার ইতিহাসে বেস্ট মুভি হয়, যেটা নাম্বার ওয়ান শাকিব খান করতে পারলো না।
আমি সিনেমা নিয়ে কিছু বলব না। এই ইন্ডাস্ট্রি এখনো লকলকে নায়িকা খুঁজে। তাই লকলকে নায়িকাকে দেখার জন্য অনেকে সিনেমা হলে গেলেও ইন্টারভেলের সময় দৌড়ে পালায়। লকলকে আর কতক্ষণ দেখা যায় বলুন?
উইনফ্রে অপরাহকে বলুন কিংবা হ্যাং অভার খ্যাত মেলিসা ম্যাকার্থির কথা বলি! আচ্ছা দূর দেশ বাদ! পাশের দেশের বিদ্যা বালানের অযাচিত ফিগার নিয়ে করা মুভিগুলো দেখি কিনা আমরা? সেটা জানতে চাই! সেই মুভিগুলো আমাদের শাকিব খান দেখেছেন কিনা জানি না। দেখলে হয়তো অপুর ফিগার নিয়ে মরতো না। অপু যখন সঠিক ফিগারেও ছিল, তখনো তার অভিনয় আমাকে টেনেছে, এখনো তাই টানবে। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শাবনুরের পরে অপুর মতো ডমিন্যান্ট অভিনেত্রী আর কেউ আসেনি।
আমি জানি না, কেন তারা বিয়ে গোপন করল? গোপন করলে বিয়ে করল ক্যান? আবার বাচ্চার জন্য সিন ছেড়ে কেন অপুকে পালাতে হলো? কেন শাকিব খান পালালো না? শাকিব-অপু জুটিই শাকিবকে এই জায়গা দিয়েছে। তাই শাকিব এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য যতটা, অপুও তো তাই।
অপু সাহস করে টিভির সামনে এলো বলেই না শাকিবের অমনধারা রূপ দেখতে পেলাম। হিরো তো সে পর্দার, রিয়েল লাইফের নয়। তাই আশাহত হইনি!
শুধু এইটুকু জিজ্ঞাসা, এই সাহস করে পর্দার সামনে আসা কি অপুর মত মিষ্টি অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার শেষ করে দিবে? নাকি আমার দেশীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এই মেধাবী অভিনেত্রীকে আরও আরও জায়গা করে দিবে? কে না জানে, এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ৩০ এর পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (ব্যতিক্রম আছে)। সারাজীবন নায়িকা হয়ে থাকা মেয়েটি কি খুব সহজে অন্য পেশাতে আর যেতে পারবে? প্রশ্ন তো সেটাও!
অপু একা বাঁচুক। ওর ছেলেকে নিয়ে। সেটাই সবচেয়ে বড় জবাব হবে এই সমাজের কাছে।
শাকিব এর মধ্যে পরীমনির সঙ্গেও অভিনয় করেছে, মাহীর সঙ্গে করেছে। অপু বিশ্বাস যদি কারও সাথে শাকিব খানকে অভিনয় না করতেই দিত! তাহলে তাদের সাথে অভিনয় করলো কী করে! নারীর পসেসিভনেস নিয়ে এই খোঁড়া যুক্তি বহুত লোকেই দেয়! কিন্তু কেন দেয়? নিজের দোষ ঢাকতে?
শাকিব খান হিরো বলে যদি পার পায়। কাল থেকে আরও ছেলে গোপনে বিয়ে করবে। বাচ্চা হবার সময় বউকে বিদেশে পাঠিয়ে দিবে। বাচ্চা নিয়ে এলে বউকে বলবে, “তোমাকে আর দরকার নেই! তোমার ফিগার এখন আমার জন্য উপযুক্ত না। আমি বাচ্চার দায়িত্ব নিব, তবে তোমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই”। (যেটা বছর তিনেক আগে পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক করেছিল, সানিয়া মির্জাকে বিয়ে করার সময়ে)
সেলুকাস হিরো সাহেব!