শোয়ার পরে ধর্ম লাগে না, মানবতা লাগে!

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি:

একাত্তর টিভিতে সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান অপু বিশ্বাস আর শাকিব খানের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হতে এসেছিলেন। আমি বসে বসে তামাশা দেখলাম। কারণ যিনি শাকিব খানকে এতো পরামর্শ দিয়ে লেকচার কপচাচ্ছেন, সেই তিনিই যে লেখক তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে তার যে সন্তানটি ছিল, তার হত্যাকারী ছিলেন- সেটি কে বলবে? (এসবই তো আমরা তসলিমা নাসরিনের বই থেকে জেনেছি। কই, এর প্রতিবাদ তো চোখে পড়েনি কোথাও!)

কে যে এই লোকটিকে আমন্ত্রণ করে একাত্তরের লাইভ অনুষ্ঠানে এনেছেন, তা তিনিই বলতে পারবেন। তবে তসলিমা নাসরিন তার ‘ক’ বইতে শুধুমাত্র সন্দেহের জন্য তার পেটের সন্তানটিকে হত্যা করার দায় যাকে দিয়েছেন, সেই লোকটিই শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের সন্তানের প্রতি করণীয় কী, সেই পরামর্শ দেয় কীভাবে, আমি বুঝতে পারি না।   

বাংলা সিনেমার প্রডিউসার আর ডিরেক্টরদের কাড়ি কাড়ি টাকার মুখ দেখানো সম্ভবত সবচেয়ে সফল নায়িকা অপু বিশ্বাস নামের অভিনেত্রীটি যখন তার সন্তানের পরিচয় ভিক্ষে করতে এলেন মিডিয়ার কাছে তখনই বুঝলাম- এদেশ হয়তো বা স্বাধীন হয়েছে, এদেশের মেয়েরা স্বাধীন হয়নি। এখনো সন্তানের পিতৃপরিচয় ছাড়া স্বীকৃতি মেলে না!

অপু বিশ্বাসের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারটি যখন চলছে, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই সাক্ষাৎকারটির লিঙ্কে চলছে কমেন্ট কমেন্ট খেলা। আমি হুবুহু কিছু কমেন্ট তুলে দিচ্ছি-

১। অপুর বুকে কোনো কাপড় নাই কেন?

২। বাচ্চাটার ডিএনএ টেস্ট করা দরকার, সত্যিই এইটা সাকিব খানের কিনা

৩। অপু আরও কয়জনের সাথে শুইছে?

৪। সাকিব খান ঠিক করছে, মাগীর শিক্ষা হইছে

৫। আরও কয়টা বাচ্চা আছে, বাচ্চার বাপ আছে ওর?

এরকম হাজারে হাজারে কমেন্ট। দেখে ঘৃণায় গা-টা রিরি করে উঠলো। ঠিক এই সমাজটিতেই আমি থাকি, যেখানে নারী অধিকার দিয়ে লেকচার দেওয়া চলে। নারী অধিকার নিয়ে সারাক্ষণ সভা সমিতিতে চেঁচিয়ে এসে বাসার নারীটির অধিকার প্রতিনিয়ত নানাভাবে ক্ষুণ্ণ করা চলে। আর মিডিয়ার মেয়েদেরকে তো প্রকাশ্যে বেশ্যা বলে ডাকা হয়! কাজেই আর ভয় কি?

একজন নারী যখন মিডিয়ার কাছে নিজের ন্যায্য অধিকারটুকু সন্তানের স্বার্থে প্রার্থনা করতে আসেন, তখন সহানুভূতির ছলে তার চরিত্র নিয়ে, তার পোশাক, তার কান্না, তার কষ্টও নিলামে তুলে দেওয়া হয়, তার ওপর কলঙ্ক মাখানো হয়। সেই পুরুষতান্ত্রিক কলঙ্ক থেকে হয়তো বা অপু বিশ্বাস নামের জনপ্রিয় অভিনেত্রীটি রক্ষা পেলেন না। কিন্তু মা হিসেবে সন্তানের পরিচয়ের দায় থেকে তিনি যেটি করেছেন সেটি আমার কাছে প্রশংসনীয়। কারণ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কাপুরুষ পুরুষ নারীর যে দুর্বলতার সুযোগ নেয় সেটি মাতৃত্ব।

একটা মেয়েকে সন্তানের কথা বলে, সন্তানের ভালো’র কথা বলে, নিজের ক্যারিয়ারের কথা বলে সহজেই কাবু করে ফেলা যায়, দিনের পর দিন প্রতারণা করা যায়।

যতদূর জেনেছি শাকিব খান নামের পুরুষটি শিশুটির পিতৃত্বের দায় নিয়েছেন, কিন্তু দায় নেননি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের বিয়ে নামক সম্পরকটির! সেই পুরানো পুরুষতান্ত্রিক জেদ, যে করেই হয় একটা মেয়েকে অসতী, বেশ্যা, চরিত্রহীন প্রমাণ করে নিজেকে পুরুষ মহারাজা সাজিয়ে রাখা!

না, শাকিব খান! সম্পর্ক মানে যে ছেলেখেলা, প্রতারণা, মিথ্যাচার- এগুলি করে আপনি দাবার চালে হেরে গিয়েছেন। কারণ সম্পর্কটির বয়স এক দিন নয়, নয়টি বছরের। সন্তানের দায় নিতে সম্পর্কটিকে স্বীকার করার মানসিকতা খুবই জরুরী। জেনেছি, আপনি অপু বিশ্বাস মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত করেছেন। কিন্তু নিজের ধর্ম কি বদলে ফেলতে পেরেছেন? আসল ধর্ম তো মানবতা। ওতে হেরে বসে আছেন। শোয়ার সময় আপনার ধর্ম লাগেনি, ধর্ম লেগেছে একটি সম্পর্ক স্বীকার করে নেওয়ার সময়?

এই খেলার শেষ দানে আপনি নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন মানবতার ধর্মটি ভুলে গিয়ে প্রতারণার বর্ম পরে ও গায়ের জোরে সেটি হালাল করতে গিয়ে। শেষদানে তাই বোরে এগিয়ে দিলাম। কিস্তি! আপনার জন্য একরাশ ঘৃণা!  

শেয়ার করুন: