অপু বিশ্বাস, মেয়ে মানুষ নন, আপনি একজন মানুষ

ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী:
টেলিভিশনের লাইভে এসে বাচ্চা কোলে কান্নাকাটি করছেন চলচ্চিত্র শিল্পী অপু বিশ্বাস। সারা বাংলাদেশ দেখলো এই দৃশ্য। একজন পুরুষ অভিনেতার ক্ষেত্রে কল্পনা করা যায় এই দৃশ্য! 
অপু বিশ্বাসের কথা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যাকে কিং খান বানিয়েছে সেই শাকিব খানের সাথে বিয়ের কথা গোপন করতে বাধ্য হয়েছেন আট বছর ধরে । কেন? “ওর” ( শাকিবের) ক্যারিয়ারের ভালোর জন্য!  ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন নিজের সন্তান সম্ভাবনার কথা গোপন রাখতে। কেন ?
“ওর” ভালোর জন্য!  আর নিজের ক্যারিয়ার?
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেননি। কেন? শুধু “ওর” ভালো চেয়েছেন বলে ! 
অপু বিশ্বাসকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তাঁর বা শাকিব খানের ভক্তও আমি নই। কিন্তু আজকের বিশ্বে রোজগার করতে সক্ষম একজন শিল্পী তাঁর কাজ, সামাজিক জীবন, মান সম্মান খুইয়ে বাচ্চা কোলে নিজের লাঞ্ছিত হওয়ার,  প্রতারিত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করে চলেছেন, চাইছেন সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতি – অন্যদিকে এতো সব কীর্তিকলাপ করে কিং খান হয়ে মিডিয়ায় দাপিয়ে রাজত্ব করে চলেছেন অপু বিশ্বাসের সেই  ” ও “!!  বলিহারি এ সমাজ! এই দৃশ্য আমাকে ভাবায়,  বিচলিত করে। এটা কোনো কল্পকাহিনী নয়। মজা লুটবার বিষয় নয়। ফেইসবুকে ট্রল করার মতো তুচ্ছ ঘটনা নয়। অন্তত আমার কাছে। 
অপু বিশ্বাস, আমরা যারা আপনাকে বোকা,  গাধা ভাবছি তাদের মধ্যে অনেকেই এমনকি আমি নিজেও কোনো এক বয়সে আপনার মতো দিনের পর দিন কোনো কুলাঙ্গারকে  নিজের জীবনের রাজত্ব লিখে দিয়ে সুযোগের পর সুযোগ দিয়ে গেছি। বছরের পর বছর অপমান সহ্য করেছি। অযোগ্য লোকের জন্য সময় অপচয় করেছি। “স্যাক্রিফাইস”, “কম্প্রোমাইজ ”  এই ধরনের বোকা বোকা , “থ্যাংকলেস ”  কিছু শব্দ নিজের জীবনে জুড়ে দিয়ে অহেতুক সেধে শেকল পরেছি হাতে পায়ে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ধৈর্যের শেষসীমা কোথায় কে নির্ধারণ করে তা?  
এই আমরাই তো!  
আমরা মেয়েরা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরেও যখন  “ওর ” ভালো চিন্তা করি তখন আর আমাদের সর্বনাশের জন্য বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হয়না। একটা সময় যখন সম্বিৎ ফেরে, তখন বড্ড দেরী হয়ে যায়!  কেউ কেউ বের হতে চেয়েও একটা চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খায়, বেরোবার পথটা খুঁজে পায়না।
আমার বেলায় আমি দেরিতে হলেও পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। কেউ বহু চেষ্টা করেও যে পথের সন্ধান দিতে পারেনি, বিষম আবর্তে ঘুরতে  ঘুরতে পথ নিজেই পেয়ে গেছি একদিন। সেদিন এক মুহূর্ত দেরি না করে বহু বছরের অপমানিত জীবনকে লাথিয়ে বিদেয় জানিয়েছি আর কোনোদিন ফিরে তাকাইনি সেই অযোগ্য, অত্যাচারী,  অমানুষের দিকে, যে কোনো একটি দিনের জন্যেও আমার সম্মানের কথা ভাবেনি। 
অপু বিশ্বাস, আপনি নিজে একজন শিল্পী। একজন স্বতন্ত্র সত্তা। একজন মানুষ। একজন মাও। নিজেকে বা অন্য কোনো নারীকেই “মেয়েমানুষ ” বলে, ভেবে নিজেকে ছোট করা আপনার সাজে না। আপনি ” নায়িকা ” – এটা আপনার অপরাধ নয়, শাকিবকে ” সাপোর্ট ” দেয়া আপনার অপরাধ নয় কিন্তু এই ” সাপোর্ট “।
দিতে গিয়ে আপনি অনেকগুলো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছেন। এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হিংস্র থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়েছেন।  কাউকে ভালো আপনি বাসতেই পারেন। তাই বলে নিজের জীবন এভাবে বিপন্ন করতে পারেন না। যে লোক বিয়ে করে তার জীবনসংগীর পরিচয় গোপন রাখে দীর্ঘ আট / নয় বছর, যে লোক সন্তানের পরিচয় চার দরজায় বন্দী রাখতে চায় , যে লোকটি  আপনার ভালোবাসার সম্মান রাখতে ব্যর্থ আপনার অপরাধ আপনি এখনো সেই ” ওর ” ভালো চাইছেন , তার কাছে আপনি “শুধু ছোট্ট একটু সম্মান ” চেয়েছেন! বিয়ে করেও দিনের পর দিন রক্ষিতার মতো আচরণ করে , অন্য  নায়িকার কারনে, ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে দাম্পত্য সম্পর্ককে  ঠকিয়ে, গোপনে রেখে অসম্মানিত, বিতর্কিত করে তোলে যে লোক,  এসব কিছুর পরেও তার জন্য নিজের শরীরের ফিটনেস  বজায় রাখার চেষ্টা করা, ছাড় দিয়ে যাওয়া – এসবই যে ভারী অন্যায় , নিজের সাথে অন্যায়। 
অপু বিশ্বাস, আপনি ঘুরে দাঁড়ান। আপনাকে সম্মানিত বা ছোট করার অধিকার আপনার নিজের কাছে রাখুন। আপনি “মেয়ে মানুষ” নন, আপনি একজন মানুষ।
মাথা উঁচু করে মানুষ হয়ে বাঁচুন অপু বিশ্বাস।
আপনার ও আপনার সন্তানের সুন্দর জীবন কামনা করছি । 
শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.