সাবাশ অপু বিশ্বাস, পুরো মুখোশ খুলে দিন

শান্তা মারিয়া:

বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানের জেন্ডার পরিচয় নিয়ে যেসব পাবলিকের মনে ব্যাপক সন্দেহ ছিল, তাদের সন্দেহ আজ অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। অপু বিশ্বাসের সন্তানের বাবা হওয়ার মাধ্যমে তিনি নিজের ‘পুরুষ’ পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তবে সন্তানের কথা এতোদিন গোপন রেখে এবং বিবাহিত স্ত্রীকে ‘অস্বীকার’ করে তিনি নিজেকে একই সঙ্গে কাপুরুষ হিসেবেও প্রমাণ করেছেন।

বলছিলাম শাকিব খান বনাম অপু বিশ্বাস দ্বন্দ্বের কথা। অপুর দাবি মতে, ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। সে সময় দুজনেই ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে ছিলেন। অনেক হিট ছবিতে অপু-শাকিব জুটি অভিনয় করেছেন। বলতে গেলে একসময় ইন্ডাস্ট্রিতে অপু ছিলেন শীর্ষ নায়িকা। কিন্তু আরও অনেক আবেগপ্রবণ নারীর মতো তিনি ক্যারিয়ারের চেয়ে প্রেম ও সংসারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কথা ভাবতে থাকেন। পর্দার প্রেম বাস্তবে গড়ায়। শুধু প্রেমেই থেমে না থেকে তারা বিয়ের কাজটিও সেরে ফেলেন। তবে গোপনে।

এই গোপনীয়তা কার স্বার্থে? এই গোপনীয়তা শাকিব খানের ক্যারিয়ারের স্বার্থে। বিয়ের খবর প্রকাশ হলে যদি তার নারী ভক্তরা নাখোশ হোন!

মজার বিষয় হলো, নায়িকার ক্ষেত্রে বিয়ের খবর ফাঁস হলে ক্যারিয়ারে ধ্বস নামার আশংকা থাকলেও (যদিও সেটিও খুব খারাপ প্রবণতা) এ যাবৎ কাল পর্যন্ত নায়কের বেলায় এমনটি শোনা যায়নি। হলিউডে তো নায়ক-নায়িকা কারও বেলাতেই এ ঝামেলা নেই। বলিউডেও বিবাহিত পুরুষ নায়করা দাপটের সঙ্গেই অভিনয় করছেন। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খান, হৃত্বিক রোশন থেকে শুরু করে অনেক নায়ক ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিয়ে করেছেন।

বাংলাদেশেও  রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানা থেকে শুরু করে জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, সালমান শাহসহ অনেক দারুণ জনপ্রিয় নায়কই বিয়ে করেছেন তাদের ক্যারিয়ারের শুরুতে বা তুঙ্গে থাকা অবস্থায়।

বিয়ের কারণে কারও ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এমনটি শোনা যায়নি। তাহলে শুধু শাকিবের বেলায় এ আশংকা দেখা দিল কেন? এই সময়ের আরেক জনপ্রিয় নায়ক অনন্ত জলিলও তো রীতিমতো স্ত্রীকে নিয়েই অভিনয় করেন।

বিয়েটাকে গোপন রাখা শুধু কি ক্যারিয়ারের জন্য, নাকি গোড়া থেকেই এই বিয়েকে অস্বীকার করার দুরভিসন্ধি নায়ক সাহেবের মনের ভিতরে ছিল? বিয়েকে গোপন রেখে নিজেকে ব্যাচেলর দেখিয়ে অন্য অনেক নারীর সঙ্গে ‘ফষ্টি-নষ্টি’ করার খায়েশ থেকেই তিনি এই পথ অবলম্বন করে ছিলেন কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয় বৈকি।  

এই বিয়ের ফলে শাকিব তার ক্যারিয়ারে ক্ষতি না পোহালেও  অপু বিশ্বাস কিন্তু ঠিকই স্যাক্রিফাইস করলেন। তার ক্যারিয়ার নষ্ট হলো। তিনি অভিনয় থেকে দূরে সরে গেলেন। সন্তানের গর্ভভার বহন করার সময় কাউকে পাশে পেলেন না। একা সন্তানের জন্ম দিলেন। শাকিবকে সামাজিক সমস্যা থেকে বাঁচাতে লুকিয়ে, পালিয়ে রইলেন। এমনকি বিয়ের সময় তাকে নিজের ধর্মও পরিবর্তন করতে হয়। গত পাঁচ মাস ধরে তিনি সন্তানসহ ঢাকায় এসেও প্রকাশ্যে স্ত্রীর অধিকার ও শাকিবের সন্তানের মায়ের অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাকে গণমাধ্যমে এসে সন্তানের পিতৃপরিচয় বলে নিজের অধিকার দাবি করতে হচ্ছে।

অপু বিশ্বাসকে নিয়ে শাকিব খানের অন্ধ ভক্তরা যত তীর্যক মন্তব্যই করুক না কেন, আমি তার কান্নার মধ্যে একজন অসহায় মাকেই দেখেছি। দেখেছি একজন প্রতারিত স্ত্রীকে, একজন বিশ্বাসহত প্রেমিকাকে।

আবার গণমাধ্যমে এসে নিজের সন্তানের পিতৃপরিচয় ও বিবাহিত স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করে যে সাহসের পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তাতে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এই সাহসটি যদি তিনি আরও আগে করতেন তো আরও ভালো হতো। ভণ্ড স্বামীর মিষ্টি কথায় ভুলে এতোদিন বসে না থাকলেই ভালো করতেন।

আশা করি তার এই ঘটনা থেকে অন্য ‘মুগ্ধ প্রেমিকা’রা শিক্ষা নিবেন। প্রেম গোপনে করা গেলেও বিয়েটা গোপন কোনো বিষয় নয়। এটা প্রকাশ্যেই করা দরকার। যে পুরুষ বা নারী সম্পর্ককে স্বীকার করতে পারে না, সঙ্গীকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারে না, সম্পর্কের দায়িত্বকে গ্রহণ করে না, তারা কোনো সম্পর্কে যাবার উপযুক্তই নয়। অপুর উচিত হবে শাকিবের মুখে ঝাঁটা মেরে নিজের সন্তানকে নিজেই মানুষ করা। যে বাবা প্রকাশ্যে তার সন্তানকে স্বীকার করে না সেই লোকের বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই। বায়োলজিক্যাল ফাদার যেকোনো শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিই হতে পারে। কিন্তু পিতা হওয়া, সন্তানের সামনে আদর্শ স্থাপন করা, সন্তানের দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করা সকল লোকের পক্ষে সম্ভব হয় না। এসব নষ্ট জন্মদাতাদের কোনো প্রয়োজন সমাজের নেই, কোনো মানব সন্তানেরও নেই।

এই ঘটনা থেকে নারীরা সাবধান হোন। কাপুরুষ ও নষ্ট পুরুষদের সঙ্গে গোপন বিয়েতে যাবেন না। যে প্রকাশ্যে বিয়ে করতে পারে, তাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিন। একই কথা পুরুষের বেলাতেও প্রযোজ্য। তবে বিশেষ করে নারীদের এই কথা বলার কারণ হলো ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত যে কোনো প্রেমজ সম্পর্কের মাশুল নারীকেই গুণতে হয় আমাদের সমাজে।

অপুর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, ওই ভণ্ড স্বামীর পুরো মুখোশ উন্মোচন করুন। যাতে অন্যরা সাবধান হতে পারে। আর নায়কবেশী খলনায়কদের উদ্দেশ্যে ঘৃণা ছাড়া কিছুই প্রকাশের নেই।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.