ইশরাত জাহান ঊর্মি:
এই মেয়েটা একা টেনে নিয়ে গেছে বাংলা সিনেমার ইন্ড্রাস্ট্রিকে অনেকদিন। সেকথা আমরা কেউ বলিনি। অপুর অর্থনৈতিক অবদান এই দেশের জন্য অ-আলোচ্য। সিনেমায় এইসব ঘটে। এইসব প্রেম, অপ্রেম, শরীর, সন্তান, নায়িকাদের পণ্য হওয়া-এইসব খুব কমন বিষয় সিনেমায়। কিন্তু সিনেমায় হ্যাপি বা অপুরা যেভাবে বেশ্যা, নটি, খানকি খেতাব পায়, শাকিব খানেরা তা পায় না। তারা ম্যাচো ম্যান। নাম্বার ওয়ান।
অপুর কান্না অভিনয়, অপু আদতে অভিনয় শিল্পী। অপু বিশ্বাস ঢাকার সিনেমার নায়িকা। হিন্দু পরিবারের মেয়ে। তাকে নাকি হাতে ধরে নায়িকা বানিয়েছে নাম্বার ওয়ান শাকিব খান। ধরে ধরে নায়িকা বানানো, তাদের দাসী বান্দীর মতো ব্যবহার করা, ইচ্ছে হলে মারধর করা, তাদের গর্ভে বাচ্চা দেওয়া, এইসব আমাদের “নায়ক”রা করে থাকেন। তারা “নায়ক”। আমি জানি না, সত্যিই ‘ভিলেন’ কারে কয়!
নারী তাদের কাছে, তার সমাজ এবং শিক্ষার কাছে একখণ্ড মাংসপিণ্ড। আর এইসব বোকা “বেশ্যা”রা নিজেদের ভাগটুকু বুঝে নিতে কোনদিন শেখেনি। অপু শাকিব এর সম্মান দেখে। শাকিব এর বাচ্চা পেটে এইটা বললে শাকিব এর মান ইজ্জত যাবে, তাই সে কোনদিন এইসব লোকের কর্ণগোচর করে না।
শাকিব পূজায় বগুড়ায় হেলিকপ্টার ভাড়া করে অপুর বাড়ি যায়, অপু সবাইরে বলে, “আমরা ভালো বন্ধু”। অপুর সাথে আমার দেখা হয়েছিল একটা পার্টিতে। দুবছর আগে। সেইসময় তার একটা স্ট্রাগল চলছে। ওজন কমানোর স্ট্রাগল। শাকিব খান তারে বলেছে, ওজন না কমালে তাকে সিনেমায় নেওয়া যাবে না। অপু কী কী সব ডায়েট-ফায়েট আর জিম করে ওজন কমাচ্ছে। আমরা সাংবাদিকরা ওর সাথে গল্প ইয়ার্কি করি। এইসব মেয়েরা ইয়ার্কির চেয়ে বেশি কী!
তো সেই অপু হঠাতই নাই হয়ে গেলেন। তারপর যখন ফিরলেন একটা চ্যানেলে কেঁদে ভাসাচ্ছেন। সঙ্গে বাচ্চা। তিনি সম্মানের সাথে বাঁচতে চান, বাচ্চার স্বীকৃতি চান ইত্যাদি ইত্যাদি। অপু যা করেছেন, অপুর সাথে সমাজ এবং পুরুষতন্ত্র যা করেছে, তা নিয়ে আমার ত্যানা প্যাঁচাতে ইচ্ছা করছে না।
আমি শুধু অপুর এই ইন্টারভিউ দেখতে দেখতে সমবেত নারী-পুরুষের কমেন্ট পাস শুনি, আর ভাবি, নারীজন্ম কি একটা বার ঘুরে দাঁড়াতে পারে না, সজোরে একটাবার লাত্থি মারতে পারে না এই সমাজের মুখে? কমেন্টগুলো তুলে দিচ্ছি।
: ওর জন্য যে কত পুরুষ স্যুইসাইড করতে গেছে তাদের বেলা?
: এতো লোভ কেন?
: শরীরের খায়েশ মেটানোর সময় মনে ছিল না?
: আচ্ছা এতোদিন বলে নাই ক্যান তাইলে বাচ্চার কথা? এখন কী উদ্দেশ্যে বলতে আসছে?
: খানকী একটা!
: বাঈজী বাড়ি থেকে তুলে এনে নায়িকা বানাইছে ওরে, আর এখন আসছে শাকিব খানরে ফাঁসাইতে…
: কানতেছে না অভিনয় করতেছে?
: টেলিভিশন এর টিআরপি বাড়ানোর পন্থা।
: আচ্ছা এই মাগী এতোদিন কই ছিল!
: ইস আবার মোটা হইছে।
: বাচ্চাটা সুন্দর আছেরে! চেহারা তো শাকিব এর মতো না… এবং এইসব মন্তব্য করা শিক্ষিত নারী-পুরুষ ভর্তি সমাজের কাছে অবন্তী বিশ্বাস অপু আসছেন ইনসাফ চাইতে। কী বিস্ময়কর!!!।
আর কিছু লেখার পাচ্ছি না। অপু, পারো তো কান্না মুছে ফেলে একটা লাত্থি মাইরো, ওরিয়ানা ফাল্লাচ্চি তোমার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে, তুমি তোমার শিশুটিকে নিয়ে একা বাঁচো প্লিজ।