শারমিন আখতার:
আমি একটি টেইলার্স এর সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় দেখলাম একটি দুই বছরের বাচ্চা ছেলে ঠিক গেটে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে প্রস্রাব করছে।পাশেই তার মা দাঁড়িয়ে আছে। আমি খুবই অবাক হলাম আর সেই মা-কে জিজ্ঞেস করলাম এভাবে এখানে প্রস্রাব করাচ্ছেন কেন? সে নিরুত্তাপ দিল- বাবুর খুব প্রস্রাব লাগছে বিরক্ত করতেছে তাই!
আমি- এখানে আজ আপনি প্রস্রাব করালেন আর ও শিখলো যে যেখানে-সেখানে প্রস্রাব করা যায়! এটি বলেই প্রস্থান করলাম!
ছেলেদের লজ্জা শরম নেই, যত্রতত্র যৌনাঙ্গ বের করে প্রস্রাব করা পুরুষের জন্য খুবই সহজাত ব্যাপার এসব নিয়ে শুধু আমরা ছেলেদের দোষ দিই। কিন্তু কেবলই কি পুরুষের দায়ভার নাকি মা হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা? বহুবার দেখেছি ছেলেকে রাস্তার ধারে মা প্রস্রাব করায় অন্যদিকে একটি কন্যা শিশুকে পাবলিক প্লেসে প্রস্রাব করানো হয় না। আবার পুত্র সন্তানকে জামা ছাড়াই রাখার প্রবণতা থাকে কিন্তু মেয়েকে হাতে গোনা কিছু সময়ে তাও ১ বছর বয়স হবার পূর্বে মাঝেমাঝে জামা ছাড়া রাখা হয়। বাড়িতে কন্যা শিশুরা কিছু বললে তাকে বকা দেয়া আর পুত্র সন্তান কিছু বললে ছোট বলে তাকে শাসন না করার বহু নজির রয়েছে।
পুত্র সন্তানের সামনে কন্যা সন্তানকে বারবার তুমি মেয়ে বলে তোমাকে রান্না শিখতে হবে, জোরে হাসা ও হাঁটা যাবে না, সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরতে হবে, সব সময় বুকের ওড়না ঠিক রাখতে হবে, দুনিয়া আখিরাত হলেও যোনী সুরক্ষিত রাখতে হবে কারন মেয়েদের সতীত্বই সব ইত্যাদি যাবতীয় এসব কথা বললে তার শিশু মন থেকেই এসব বিষয় গেঁথে যায়। ফলে এসব বিষয়ে ছোট বেলা থেকে শিখে আসার অন্যথা কোনো মেয়ের মাঝে দেখলে পুরুষের মনে হয় সেই মেয়েটি যথার্থ ‘মেয়ে’ নয়!
তাই আমরাই পারি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পুরুষ নয় কিছু মানুষ উপহার দিতে। আপনার পুত্র সন্তানকে যত্রতত্র প্রস্রাব না করিয়ে, তাকে সব সময় ঠিকঠাক জামা কাপড় পরিয়ে, লজ্জা কেবল নারীর নয় বরং মানুষের ভূষণ শিখিয়ে, মেয়েরা কেবলই মেয়ে নয় বরং মেয়েরাও চাইলে সবকিছু করতে পারে এসব শেখান। মেয়েদের সম্মান করতে শেখান, একটি মেয়ে আপাদমস্তক কেবল যৌনাঙ্গ নয় বরং গোটা একটা মানুষ সে বিষয়ে তাকে শেখান, পড়ান।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমি যেসব অভিযোগ করি পুরুষ নিয়ে, সেগুলো কোনো মেয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে করলে আমার কেমন লাগবে ভেবে আতংকিত হই। আমার খুব খারাপ লাগবে, প্রচণ্ড অপমান বোধ করবো আমি। তাই আমি কাউকে সুযোগ দেবো না এসব বলার, পুরুষ নয়, ‘মানুষ ‘ করবো।
আসুন পড়াশুনো করিয়ে বড় বড় ডিগ্রী অর্জন এর জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি পুত্র সন্তানকে শিষ্টাচার আর মানুষ হওয়ার দীক্ষা দিই, মানুষ করি।
গবেষণা সহকারী
Development Research Initiative (dRi)