হাওরের মানুষগুলোর পাশে কেউ নেই?

কাকলী তালুকদার:

অসহায় বোধ করছি……
আমাদের ডিঙ্গাপোতা হাওর ডুবে গেছে, এমন অনেক অনেক হাওর ডুবে গেছে। গ্রামে গ্রামে গরু বিক্রির হিড়িক পরে গেছে। মানুষের খাবার নাই, গরুর খাবার ও নাই। গ্রামের দোকানগুলোতে মানুষ চাল কিনতে পারছে না। দোকানিরা বলছে, চাল নাই। আটা কিনে নিয়ে আসছে অনেকেই।

আমাদের মতো গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোতে এক বছরের চাল মজুত রাখে। বৈশাখ মাসে আবার নতুন ধান উঠা পর্যন্ত সেই চাল ঘরে থাকে। এই সকল পরিবারে যদি কখনও সময়ের আগে চাল শেষ হয়ে যায় তবে গ্রামে কানা-ঘোষা শুরু হয়ে যায় তাদের ধন-দৌলত নিয়ে।

আমাদের মতো অনেকের ঘরেই এবার সারা বছরের চাল কিনতে হবে শহর থেকে।গ্রামের একটি কৃষক পরিবার কখনই সেটা কল্পনাতেও ভাবে না,চাল কিনতে হবে। মার সাথে একটু আগে কথা হলো, এবার বৈশাখের পর চাল কিনতে হবে। মা খুব মন খারাপ করে কথা গুলো বলছিলেন। এতো বছরে এবারের মতো হয়নি কখনও অন্ততঃ নষ্ট হলেও খাবারের চাল কিনতে হয়নি কখনও। গরুর খাবার একমাসের মজুত আছে ঘরে।

মাকে বললাম, মন খারাপ করো না। সবার তো একই অবস্থা হবে। তবে জলবায়ুর পরিবর্তন এর নেতিবাচক প্রভাব আরও ভয়ানক হতে পারে সেই প্রস্তুতি রাখার জন্যও বললাম। মা আমাকে বলে আমি খবর পাই কিনা, আর আমি এদিকে ভাবছিলাম কিছু একটা কি করা যায় আমাদের গ্রাম গুলোর জন্য।

গতকাল থেকে তিনটা বাচ্চা কে নিয়ে আমি আর তান্নু আপা বাসা পরিবর্তন করেছি। বাসা পরিবর্তনের গল্প সবাই জানে নিশ্চয়ই। রাতে গা ব্যথার জন্য দুজনেই দুটো করে ট্যাবলেট খেয়ে শুয়েছি। বাচ্চাদের
স্কুল নিয়ে এখন নতুন যুদ্ধ শুরু হবে কাল থেকে। আমাদের সংগ্রাম গুলো তবুও একটা উন্নত জীবনের জন্য। আজ খুব নিঃস্ব লাগছিলো নিজেকে, মায়ের সাথে কথা বলে মনে হলো কত ভালো আছি। শরীর ব্যথার জন্য না হয় আজও দুটো ট্যাবলেট খেয়ে নিবো। কিন্তু ভাটি এলাকার হাজার হাজার মানুষের এই বেঁচে থাকার যুদ্ধ টা আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

বন্ধুরা, আপনাদের কাছে অনুরোধ যারা পারেন তারা সবাই মিলে চলুন মানুষ গুলোর পাশে দাঁড়াই। গ্রামে আপাততঃ মানুষের চাল, আটা সহ নিত্য পণ্য গুলো খুব দরকার। কৃষকের গরু গুলো যেনো সঠিক দামে বিক্রি করতে পারে সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কিংবা অনেকেই গরুর ফার্ম করেন সেখানে কৃষকের গরু গুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখা যেতে পারে।

এই সময়ে প্রান্তিক কৃষক নিঃস্ব হয়ে যায়, তাদের খাবার কিনার টাকা থাকে না হাতে। বাকী তে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য গুলো কিনে আনে। বৈশাখের ধান উঠার পর সেই দোকান বাকী পরিশোধ করে। অনেক দোকানী আবার সেই টাকার উপর সুদ এর টাকা আদায় করে।

বন্ধুরা, সামনে পহেলা বৈশাখ ভাবছেন কী পোশাক পরবেন, কীভাবে সাজবেন। আমিও ভাবছিলাম অনেক বছর পর বৈশাখে একটু আনন্দ করবো। প্লিজ চলুন, আমরা আমাদের পহেলা বৈশাখটা দুর্গত ভাটি অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াই। সম্ভব হলে সরকারকে একটু আগ্রহী করে তুলি এই দুর্যোগ মোকাবেলায়।

জানি, আমরাই পারবো যদি আমরা সেটা মন থেকে চাই।

৪ এপ্রিল ২০১৭
কানাডা

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.