আগে পাহাড়ি জনগোষ্ঠিকে সম্মান করতে শিখুন

শান্তা মারিয়া:

চৈত্র মাসের শেষ কটি দিন থেকেই শুরু হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির উৎসব বৈসাবি। বিশেষ করে বাংলাদেশের তিন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উৎসবকে একসঙ্গে বৈসাবি বলা হয়। বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই তিনটি উৎসবের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে হয় বৈসাবি। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই আর চাকমাদের বিজু। তিনটিই মূলত বর্ষবরণ উৎসব।

গত কয়েক বছর ধরে বৈসাবিতে দারুণ উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে বাঙালিরাও। শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঙালি নয়, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও অনেক উৎসাহী মানুষ যাচ্ছেন এই উৎসব উপলক্ষ্যে।

বৈসাবি পালিত হয় বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়। সকল সম্প্রদায়ের উৎসবে অন্য সকল সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিচ্ছেন এটা ভালো কথা। কিন্তু প্রতিটি সম্প্রদায়ের উৎসবের সঙ্গে যে তাদের নিজস্ব রীতিনীতি, প্রথা জড়িয়ে আছে সেকথাও তো ভুললে চলবে না।

বৈসাবির মধ্যে জলখেলা, জলকেলি, পানি ছিটানোর একটি উৎসব রয়েছে। এই উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে অনেক অতি উৎসাহী বখাটে ছেলেরা যথেষ্ট বাড়াবাড়ি করে থাকে। তাদের মূল টার্গেট থাকে পাহাড়ি নারীদের উত্যক্ত ও হয়রানি করা। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পাহাড়ি নারীদের দিকে জল ছুঁড়ে দেয়। ছবি তোলার নাম করে পাহাড়ি নারীদের অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তোলে। ফেসবুকে বেশ কয়েকজন আদিবাসী বন্ধু এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এ ধরনের ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সকল মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠা দরকার অতি দ্রুত।

বখাটে বাঙালি পুরুষদের প্রতিহত করার দায়িত্ব কিন্তু অন্য ভদ্র বাঙালিদের উপরেই বর্তায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের কার্যকলাপ যদি সচেতন বাঙালিরা প্রতিহত না করেন তাহলে দোষের ভাগী কিন্তু সকলকেই হতে হবে।

এইসব বখাটে বাঙালি পুরুষদের প্রতি আমি বলতে চাই, পাহাড়ি নারীদের (বাঙালি নারীদেরও) প্রথমে সম্মান করতে শিখুন। তাদের সঙ্গে ‘প্রেম’ করার নামে তাদের হয়রানি ও নির্যাতন করার ধান্দা ছাড়ুন। নাহলে পাহাড়ি ঝাঁটা দিয়ে পিটিয়ে আপনাদের ‘প্রেমের ও মজা করার খায়েস’ মিটিয়ে দেওয়া হবে। পাহাড় কারও ফালতু ‘আমোদ ফুর্তির’ জায়গা নয়।  

যে কোনো উৎসবে অংশ নিলে সেই উৎসবের নিয়ম কানুন, রীতি প্রথাকে সম্মানের চোখে দেখার মানসিকতা ধারণ করা দরকার সর্বাগ্রে।

কিছুদিন আগেই হোলি উৎসবে অংশ নেওয়ার নাম করে পুরান ঢাকায় কতিপয় বখাটে (তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের) নারীদের হয়রানি করে পুরো উৎসবটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল। এই ধরনের যে কোনো অপচেষ্টাকে সকল সচেতন নাগরিক (সব ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠির) মিলে প্রতিহত করা প্রয়োজন।

আদিবাসীরা এদেশেরই নাগরিক। প্রত্যেক নাগরিকের মতো তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে নিজস্ব অনুষ্ঠান উৎসব পালন করার। তাদের উৎসবকে কলুষিত করার যে কোনো অপচেষ্টাকে রুখতে হবে। এদিকে সরকারেরও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.