তানিয়া কামরুন নাহার:
একটি মেয়ে যখন ১০ কিমি ম্যারাথন দৌড় সম্পন্ন করে আসে তখন পুরুষেরা উৎসাহ দিয়ে বলে, ‘’মেয়েরাও পারে।‘’ মেয়েরাও আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে চিৎকার করে বলে, ‘’আমরা মেয়েরাও পারি।‘’ নারীর সাফল্যে এই যে সকলের ‘’মেয়েরাও পারে‘’ বলে একটি বাক্যের ব্যবহার আমরা দেখি, এই বাক্যের নিগূঢ় অর্থ কী?
জেন্ডার সমতা নিয়ে যখনই কোন কথা হয়, তখন প্রায়ই একটা কথা কানে আসে। ‘’নারীরা কি পারবে বলেন? একজন পুরুষ আর একজন নারী একসাথে যদি দৌড় দেয়, নারী কি কোনদিন পুরুষের সাথে পারবে? পুরুষই হলো শ্রেষ্ঠ।’’ এমন প্রশ্ন করলে আমিও পালটা প্রশ্ন করে বলি, ‘’ঠিক আছে, এই দৌড় প্রতিযোগিতায় একটা ঘোড়াও রাখুন। এবার বলুন কে শ্রেষ্ঠ, নারী, পুরুষ নাকি ঐ ঘোড়া?‘’

এটা একই সাথে খুবই দু:খজনক ও হাস্যকর যে, পুরুষদের যেকোন কর্মকাণ্ডকে নারীরা স্ট্যান্ডার্ড মনে করে। তাই প্রায়ই নারীদের কণ্ঠে সাহসী উচ্চারণ থাকে, ছেলেরা যদি পারে তাহলে আমরা পারবো না কেন?’’ কিন্তু খেয়াল করবেন, পুরুষদেরকে সচরাচর এরকম বলতে দেখা যায় না যে, “মেয়েরা যদি পারে তবে আমরা পারবো না কেন?” রান্নাবান্না, সন্তান লালন, কাপড় কাচা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুরুষরা কখনওই এরকম কোন মনোভাব পোষণ করে না। কারণ, এক্ষেত্রে তারা মেয়েদেরকে স্ট্যান্ডার্ড ভাবে না। এবং এ কাজগুলো করতে না পারাই হলো পুরুষদের স্ট্যান্ডার্ড।
আবার যখন কোন নারী বিমান চালায়, এভারেস্ট জয় করে, ক্রিকেট খেলে কিংবা সবাইকে মেধার যোগ্যতাতে পিছনে ফেলে দেয়, তখন, পুরুষদের টোন বদলে যায়, “মেয়েরাই যদি এসব কাজ পারে, তবে আমরা কেন পারবো না?” অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রেও স্ট্যান্ডার্ড পুরুষই।
একই কারণে ধুমপান, গাঞ্জাপান, মাদক দ্রব্য গ্রহণ, ছিনতাই করা, প্রকাশ্যে মল–মূত্রত্যাগ ত্যাগ, খুন খারাপি, জংগি কার্যকলাপ ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রেও স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে পুরুষকেই দেখা হয়। এজন্য অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পুরুষদেরকে, *শুধুমাত্র পুরুষদেরকে* আগে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কেন না, কোনো পুরুষকে নিয়ম অমান্য করতে দেখলে একজন নারী তাকে আদর্শ ভেবে নিয়ম অমান্য করতে উৎসাহিত হয় এই ভেবে যে, ‘’ছেলেরা নিয়ম অমান্য না করলে যদি কিছু না হয়, তবে আমার বেলায় কী দোষ?’’
অথচ এর উল্টোটাই বরং হওয়া উচিত ছিল। নিয়ম শৃংখলা মেনে চলা নারীটিই সবার আদর্শ হবার কথা। নারীরা যে পারে, এটা আর কেউ মানুক না মানুক অপরাধীচক্ররা ঠিকই জানে ও মানে। এজন্য বিভিন্ন অপরাধী চক্র, আত্মঘাতি জঙ্গি হামলা প্রশিক্ষণে নারীদেরকেও তারা ব্যবহার করছে। তাহলে কি বলতে পারি যে, একমাত্র তারাই বুঝতে পেরেছে নারীকে বাদ দিয়ে কোন সফলতা অর্জন সম্ভব নয়!