অজন্তা দেব রায়:
সম্প্রতি দোল/হোলি উৎসব নিয়ে করা একটি টেলিভিশনের রিপোর্টকে কেন্দ্র করে তুমুল হৈ চৈ হচ্ছে। প্রথমেই চলেন দেখি রিপোর্টটাতে কী দেখানো হয়েছে।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের উপর করা রিপোর্টটাতে দেখানো হয়েছে যে, শান্তিপূর্ণভাবেই সকাল থেকে এই উৎসবে সামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন ধর্মের, বয়সের হাজারও নারী পুরুষ। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে লোকজন বাড়তে থাকে, এবং এক পর্যায়ে ইউনিভার্সিটি এরিয়া থেকে কিছু বখাটে ছেলে এসে বিশেষ করে মেয়েদের টার্গেট করে উশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করে। রঙের উৎসবে বখাটেদের উৎপাত -এটাই ছিল রিপোর্টটার থিম।

‘মুসলিম হিজাবী মা-বোনদের উপর প্রকাশ্য রাজপথে জোরপূর্বক হোলির রঙ মাখানো কোন ধরনের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ? সাথে ২ টা স্ক্রিনশট অ্যাড করে দেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে হিজাবি একজন মেয়েকে জোর করে মুখে রং লাগিয়ে দিচ্ছে একটা ছেলে।
এই পোস্টে এ পর্যন্ত ১৩০০০ লাইক, প্রায় ৮ হাজার শেয়ার এবং হাজারের মতো মন্তব্য এসেছে যার অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বাজে মন্তব্য, সহিংস কথাবার্তা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক।
কোনো অশিক্ষিত লোক যদি এই পোস্টটি করতো তাহলেও হয়তো বুঝতাম যে না বুঝে করেছে। অথচ জনাব তুহিন মালিকের ফেইসবুক পেইজে তার নামের সাথে জুড়ে দেয়া ‘Dr’ লেখা দেখেই বোঝা যায় তিনি আর যাইহোক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অন্তত শিক্ষিত। সুতরাং তার কাছ থেকে এমন একটা পোস্ট অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক এবং সেই উদ্দেশ্য কোনভাবেই ‘সৎ’ নয়।
তা না হলে এই ভিডিও দেখে এধরনের একটা লেখা একজন শিক্ষিত কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে আসতে পারে না। কারণ ওই ভিডিওটার শুরুতেই সংবাদ পাঠক নিজেই স্পষ্টভাবে বলছেন যে – ‘ হোলির রঙিন আনন্দে কালিমা লেপন করে দিয়েছে কিছু বখাটে যুবক’।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে,

-যেখানে রিপোর্টে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে এই উৎসবটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, সেখানে সেই সার্বজনীনতাকেই আক্রমণ করে কথা বলা কি আরও বড় কোনো চক্রান্তের অংশ নয়?
-এই রিপোর্টের মধ্যে এতো কিছু দেখানো হয়েছে, কিন্তু জনাব তুহিন মালিক শুধু হিজাব পরা দুই জনের ছবিই কেন পোস্ট করলেন? অন্য মেয়েদের অপমান কি অপমান নয়?
ভাগ্য ভালো যে , বখাটে ছেলেগুলো ধরা পড়েছে। ঐদিনের ঘটনার দায়ে ভিডিও ফুটেজ থেকে সনাক্ত করে আকাশ, সিফাত ও মামুন নামের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খেয়াল করে দেখেন, তাদের মধ্যে কেউই হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়। সংগৃহিত ভিডিও থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই বখাটেরা বাইরে থেকে এসে উৎসবে ঝামেলা তৈরি করেছিলো। তাহলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো রকম তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা ড .তুহিন মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া কি উচিত নয় এখন?

ফেসবুকের কোনো এক কোনায় কোথাকার কোন জেলে রসরাজ দাশের আইডি থেকে ভুয়া ধর্মীয় অবমাননামূলক পোস্টের কারণে তাকে বিনা বিচারে আড়াই মাস জেল খাটতে হয়, কোন ব্লগের কোথায় কী লেখার জন্য খুন হয়ে যেতে হয়, চাপাতি আর ৫৭ ধারার সম্মিলিত দৌড়ানি খেয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়, অথচ হাজার হাজার লাইক আর ফলোয়ার সমৃদ্ধ ফেইসবুক প্রোফাইল আর পেইজ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েও তুহিন মালিকেরা আইনের নজরে পড়ে না।
এই এক চোখা নীতির অবসান চাই।