শীলা চক্রবর্ত্তী:
প্রেমের সম্পর্ক বা শারীরিক সম্পর্ক থাকলেও, এমনকি স্বামী-স্ত্রী হলেও, অন ক্যামেরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রদর্শনের প্রস্তাব দেয়াটা বা জোর করাটা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। বিশেষত যদি একজন সম্মত না থাকেন, অপরজনের অবশ্যই উচিৎ, সেই অসম্মতিকে সম্মান জানানো। হ্যাঁ, কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের অঙ্গ প্রদর্শন করতে চান, করতেই পারেন। সেখানে তৃতীয় কারোর কিছু বলার থাকেনা। কিন্তু ক্রমাগত কারোকে এহেন প্রস্তাব দেয়া, তার অসম্মতি সত্ত্বেও, যথেষ্ট কুরুচিকর।
একটি মেয়ে, হয়তো আপনার স্ত্রী বা প্রেমিকা, আপনার সাথে বিছানায় সহজ, তার মানেই তো এটা নয়, যে সে অন ক্যামেরা নিজেকে প্রদর্শন করতেও সহজ হবে! এটি হয়তো তার রুচিকে আঘাত করতেও পারে ! এটাতো হাজার হলেও “সম্পর্ক” নয়! দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে, এটা বুঝতে হবে, বোঝা দরকার।

আপনি গায়ক হোন, শিল্পী হোন বা কবি, আপনার বোধ, অপরের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে সম্মান করার স্তরে উপনীত হতে না পারলে আপনার সাথে এলিতেলিদের কোনো ফারাক লাই হ্যে!!
আমার এক বন্ধু, বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় তার স্বামীকে ছেড়ে আসে। স্বামীটি ঝগড়ার এক পর্যায়ে মেয়েটির পরিহিত ম্যাক্সিটি টেনে ছিঁড়ে খুলে নিয়ে বলেছিলো, “যা তুই এই অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা” ! পরে মেয়েটি যখন এই নিয়ে অভিযোগ করতে যায়, লোকটি বলে, “তাতে কী হয়েছে? সেখানে তো তুমি আর আমি ছাড়া কেউ ছিলো না”! কী অদ্ভুত মানসিকতা! যেহেতু মেয়েটি বিছানায় আপনার সাথে নিরাবরণ হয়, আপনার কাছে খুব ক্যাজুয়াল এই ঘটনাটি! আপনার অধিকার জন্মে যায় যখনতখন যেখানে-সেখানে তাকে অনিচ্ছুক নগ্নতার মধ্যে এনে ফেলার? চমৎকার!
তো, এইসব গায়ক-কবিদের মানসিকতাও এর থেকে আলাদা কিছু নয় ।
কাগজে দেখেছিলাম, বিশ্বজোড়া যৌনতার বাজারে, এভাবেও যৌনতা কেনে গ্রাহকরা। মেয়েটির একাউন্টে ঢোকে টাকা, এদিকে অন ক্যামেরা নিজেকে মুক্ত করে মেয়েটি। দৃশ্যসুখ …. সিনেমায় দেখেছি, যৌন হতাশাগ্রস্ত, বিকারগ্রস্তরা এভাবে প্যাসিভ সেক্সে দৃশ্যসুখ নিয়ে থাকে।
স্বামী-স্ত্রী, বা প্রেমিক-প্রেমিকারাও অনেককাল ধরেই ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সেলফোনে তুলে রাখেন। এই ফ্যাশানটিও বিপজ্জনক। কখন কোন ফেরে এটি অনলাইনে কে যে ভাইরাল করে দেবে, তার ঠিক কী? উদাহরণ তো প্রচুর !!
স্বামী, যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেল করছে এহেন এমএমএস অনলাইনে দিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। মেয়েদের প্রতি পদেই সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই। তাছাড়া যে পুরুষ এইটুকু ইচ্ছের সম্মান দিতে পারবে না, সে মানুষ হিসেবে কতটা নির্ভরযোগ্য, সেটাও ভেবে দেখতে হবে বৈকি, বারবার ভাবতে হবে।
আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়, সে সম্পর্ক কতটা জরুরি, আদৌ জরুরি কিনা, ভাবতে হবে ।