মলি জেনান:
‘ভগিনীরা! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন! মাথা ঠুকিয়া বল মা! আমরা পশু নই; বল ভগিনী! আমরা আসবাব নই; বল কন্যে, আমরা জড়োয়া অলঙ্কার রূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।‘
নারীদের হাজার বছরের ঘুমন্ত সত্তাকে জাগিয়ে তুলবার জন্যই, সমাজ-সংসার-ধর্ম-কুসংস্কার সর্বোপরি পুরুষতন্ত্রের তৈরি সোনার শেকল ভেঙ্গে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবার জন্যই ‘জাগো গো ভগিনী প্রবন্ধে’ এমনভাবে জেগে উঠবার জন্য যিনি ডাক দিয়েছিলেন, তিনি বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’।
তিনি লিখেছিলেন–
‘আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা, আমাদের লক্ষ্য তাহাই।‘
তিনি বুঝেছেন–
‘প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে নারী–পুরুষের সমতা অনস্বীকার্য। দেহের দুটি চক্ষুস্বরূপ, মানুষের সবরকমের কাজকর্মের প্রয়োজনেই দুটি চক্ষুর গুরুত্ব সমান।‘
এই মহীয়সী নারী ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের, আর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।
সাবের পরিবারে পর্দা প্রথার এতোই কড়াকড়ি ছিল যে, আত্মীয় পুরুষ তো দূরের কথা, বহিরাগত মহিলাদের সামনেও পরিবারের মেয়েদের পর্দা করতে হতো। নারী শিক্ষার সুযোগ বলতে ছিল শুধুমাত্র কোরান তেলাওয়াত শিক্ষা ও উর্দু শিক্ষা। বাংলা বর্ণ পরিচয় ছিল নিষিদ্ধ। স্কুল–কলেজের আঙিনায় পা বাড়ানোর সৌভাগ্য বেগম রোকেয়ার হয়নি। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিক মনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও আরেক বোন করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখাতেন।
সে সময় এমন ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে তার আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন, মননশীল ও সাহসী হয়ে উঠবার পেছনে যে দুইজন মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি, তারা হলেন বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের এবং তাঁর স্বামী সাখাওয়াত হোসেন। ১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট উর্দুভাষী ও বিপত্নিক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বেগম রোকেয়া। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন‘ নামে পরিচিত হোন।
মুক্তমনা মানুষ সাখাওয়াত হোসেন রোকেয়াকে লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন। স্বামীর উৎসাহ ও প্রেরণায় তিনি বাংলা ও ইংরেজি খুবই ভালোভাবে আয়ত্ত করেন এবং তাঁরা একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন।
১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মারা গেলে এর পাঁচ মাস পর ভাগলপুরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন বেগম রোকেয়া । ১৯১০ সালে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার ফলে স্কুল বন্ধ করে তিনি কলকাতায় চলে যান। এখানে ১৯১১ সালের ১৫ই মার্চ তিনি পুনরায় স্কুল চালু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় ছাত্রী ছিল আট জন; চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ জনে। ১৯৩০ সালের মাঝে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়। স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন।
১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্য জগতে পদার্পণ করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা Sultana’s Dream, যা বাংলায় ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে অনুদিত হয়। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসাবে ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হলো, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, জাগো গো ভগিনী, মতিচুর। তাঁর প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গ সমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ–বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর রচনা দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।
ধর্মের দোহাই দিয়ে বাঙালী নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখার যে ষড়যন্ত্র বহুযুগ ধরে চলে আসছিল, এর মূল উৎপাটনের পথে বেগম রোকেয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯০৪ সালে ২৪ বছর বয়সী রোকেয়া দৃঢ়ভাবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মতো মেধাবী, আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মননশীল, সাহসী নারী বাঙালী সমাজে আজও বিরল।
তার সাহিত্য যেমন কালজয়ী, তেমন তার প্রখর চিন্তাশক্তি, যুক্তি–বোধ অনেক পুরাতন কুসংস্কার ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল।
তিনি তাঁর ‘আমাদের অবনতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, যখনি কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছে, তখনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচন রূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। আমরা প্রথমত যাহা সহজে মানি নাই তাঁহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। পুরাকালে যে ব্যক্তি প্রতিভাবলে দশ জনের মধ্যে পরিচিত হইয়াছেন, তিনি আপনাকে দেবতা কিংবা ঈশ্বর প্রেরিত দূত বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। ক্রমে যেমন পৃথিবীর অধিবাসীদের বুদ্ধি–বিবেচনা বৃদ্ধি হইয়াছে, সেরূপ পয়গম্বর দিগকে (অর্থাৎ ঈশ্বর প্রেরিত মহোদয়া দিগকে) এবং দেবতা দিগকেও বুদ্ধিমান হইতে বুদ্ধিমত্তর দেখা যায়!!
তবেই দেখিতেছেন, এই ধর্মগ্রন্থগুলো পুরুষ রচিত বিধি ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।
কেহ বলিতে পারেন তুমি সামাজিক কথা বলিতে গিয়া ধর্ম লইয়া টানাটানি কর কেন? তদুত্তরে বলিতে হইবে, ‘ধর্ম’ শেষে আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে, ধর্মের দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমণীর উপর প্রভুত্ব করিতেছেন। তাই ধর্ম লইয়া টানাটানি করিতে বাধ্য হইলাম”।
এতেই প্রমাণ হয়, তাঁর সময়ের সমস্ত ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নারীকে তার স্ব–মহিমায় প্রজ্বলিত হবার শক্তি যুগিয়েছেন। শুধু মুসলিম সমাজ নয়, তিনি সমগ্র বাঙালী সমাজে নারীকে মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।
তিনি তাঁর ‘স্ত্রী জাতীর অবনতি শীর্ষক’ প্রবন্ধে লিখেছেন, স্বামী শব্দের অর্থ কি? দানকর্তাকে দাতা বলিলে যেমন গৃহকর্তাকে গ্রহীতা বলিতেই হয়, সেইরূপ একজনকে স্বামী, প্রভু, ঈশ্বর বলিলে অপরকে দাসী না বলিয়া আর কি বলিতে পারেন?
তাঁর এ ধরনের সাহসী সৎ লেখার জন্য মৌলবাদীরা তাঁর বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে, তাকে দমাতে চেয়েছে, তাই তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি কারসিয়াং ও মধুপুর বেড়াইতে গিয়া সুন্দর সুদর্শন পাথর কুড়াইয়াছি, উড়িষ্যা ও মাদ্রাজে সাগর তীরে বেড়াইতে গিয়া বিচিত্র বর্ণের বিবিধ আকারের ঝিনুক কুড়াইয়া আনিয়াছি। আর জীবনের পঁচিশ বছর ধরিয়া সমাজসেবা করিয়া কাঠমোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়াইয়াছি’।
অথচ সেই একই রোকেয়া যখন বলেন যে, প্রাথমিক শিক্ষা বলে যা কিছু শিক্ষা দেওয়া হয়, তা কোরানেই আছে; তখন বড়সড় ধাক্কাই খেতে হয়। তাঁর অন্য এক রূপ দেখা যায় এখানে।
বঙ্গীয় নারী–শিক্ষা সমিতির অভিভাষণ এ রোকেয়া বলেছিলেন:
‘মুসলমান বালিকাদের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে কোরান শিক্ষাদান করা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজন। …. আপনারা কেহ মনে করিবেন না যে, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কোরান শিক্ষা দিতে বলিয়া আমি গোঁড়ামীর পরিচয় দিলাম। তাহা নহে, আমি গোঁড়ামী হইতে বহু দূরে। প্রকৃত কথা এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা বলিতে যাহা কিছু শিক্ষা দেওয়া হয়, সে সমস্ত ব্যবস্থাই কোরানে পাওয়া যায়।’
অবরোধবাসিনীতে যিনি পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে দৃঢভাবে কথা বলেন, সেই তিনিই আবার যখন বোরকা পরে চলাফেরায় কোনো অসুবিধা হয় না বলে মনে করেন, তখন তাকে স্ববিরোধী বলেই মনে হয় বৈকি!
“আমরা অন্যায় পর্দা ছাড়িয়া আবশ্যকীয় পর্দা রাখিব। প্রয়োজন হইলে অবগুণ্ঠন (ওরফে বোরকা) সহ মাঠে বেড়াইতে আমাদের আপত্তি নাই। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে শৈলবিহারে বাহির হইলেও বোরকা সঙ্গে থাকিতে পারে। বোরকা পরিয়া চলাফেরায় কোন অসুবিধা হয় না”।
লেখক হুমায়ুন আজাদের ছাত্রী আকিমুন রহমান। তিনি তাঁর ‘বিবি থেকে বেগম গ্রন্থের স্বামীর ছাঁচে বিকশিত প্রতিভারা’ অধ্যায়ে বেগম রোকেয়ার মত নারীবাদীদের তুলোধুনো করে ছেড়েছেন। তাঁর কাছে রোকেয়া স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ এক নারী, পুরুষতন্ত্রের জুতোয় পা ঢোকানো নারী ছাড়া আর কিছু না আকিমুন রহমানের ভাষায়:
“রোকেয়া আদ্যপান্ত স্ববিরোধিতাগ্রস্ত। রচনায় তাঁর ক্ষোভ ও বক্তব্য বেজে ওঠে; ব্যক্তিজীবনে তিনি যাপন করেন প্রথাগ্রস্ত, বিনীত, মান্য করে ধন্য হয়ে যাওয়া জীবন। তাই তাঁর রচনাবলী থেকে চোখ ফিরিয়ে তাকানো দরকার তাঁর জীবনের দিকে; তবেই স্পষ্ট হয় উঠবে তাঁর সত্য পরিচয় ও ভূমিকা। রোকেয়া আমূল নারীবাদী শুধু কোনো কোনো বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশে, নতুবা জীবনাচরণে ও বিশ্বাসে রোকেয়া অতি প্রথা মান্যকারী স্ববিরোধিতাগ্রস্ত পতিপ্রভুর চিরবাধ্য ও অনুগত এক বিবি ছাড়া আর কিছু নয়”।
অপরদিকে হুমায়ুন আজাদ তাঁর ‘নারী’ গ্রন্থে ‘পুরুষতন্ত্র ও রোকেয়ার নারীবাদ’ অধ্যায়ে বেগম রোকেয়াকে একজন সফল নারীবাদী হিসাবে দেখিয়েছেন। পুরুষতন্ত্রের সাথে বাধ্য হয়ে সামান্য কিছু সন্ধির বিষয়কে উপেক্ষা করে বেগম রোকেয়াকে পৃথিবীর এক শ্রেষ্ঠ নারীবাদী হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি রোকেয়াকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে:
“রোকেয়া পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে চালিয়েছিলেন সার্বিক আক্রমণ। তিনি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছেন পুরুষতন্ত্রের তৈরি নারী ও পুরুষের ভাবমূর্তি, বর্জন করেছেন নারী-পুরুষের প্রথাগত ভূমিকা; তুলনাহীনভাবে আক্রমণ করেছেন পুরুষতন্ত্রের বলপ্রয়োগসংস্থা ধর্মকে। রোকেয়া পরে ধর্মের সাথে কিছুটা সন্ধি করেছেন আত্মরক্ষার জন্যে; নইলে তাঁকে ও তাঁর আদর্শকে অত্যন্ত বিপন্ন করে তুলতো মুসলমান পিতৃতন্ত্র। তিনি এমন এক পিতৃতন্ত্রের সদস্য ছিলেন, যেখানে পুত্র মাকে শেখায় সতীত্ব”।
আকিমুন রহমানের যুক্তি অনেক ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে সঠিক বলে মনে হলেও তখনকার রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে আজকের সমাজের নারীদের চেয়ে বেগম রোকেয়ার চিন্তা অনেকাংশে অগ্রসর ছিল। তিনি রীতি মেনেছেন সামাজিক কারণেই। তাঁকে সামাজিক বিধি ব্যবস্থায় অনেক কৌশলী হতে হয়েছিল।
এক্ষেত্রে বোঝা জরুরি তার সামাজিক অবস্থান এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব তাঁর মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক ছিল না, কিন্তু তার অবস্থান থেকে ধর্মীয়গুরুদের এবং ধর্মের রীতিনীতির বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর বক্তব্যগুলো তাঁকে কখনোই একজন ধর্মান্ধ হিসেবে উপস্থাপন করে না।
কথিত আছে, কলকাতায় তিনি যখন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের জন্য দ্বারে দ্বারে ছাত্রী খুঁজছিলেন, তখন একজন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে এতো কথা বলেন, অথচ নিজে ঘোমটা দেন কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘এই ঘোমটাটা আছে বলেই এখনও স্কুলে আট-দশ জন ছাত্রী আছে। ঘোমটাটা না থাকলে ওটুকুও থাকবে না।’
যতটুকু বুঝতে পারি তিনি সমাজের মধ্যে থেকেই সমাজ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। একুশ শতকের এই যুগে এসেও আমরা তসলিমা নাসরিন’কে তার নিজের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনতে পারিনি, পৃথিবীর কোথাও একটু নিরাপদ বাসযোগ্য আবাসভূমি দিতে পারিনি, তাহলে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় এতোখানি কৌশলী না হলে আজ তাঁকে নিয়ে এই নিবন্ধ লেখার সুযোগটিও আমরা পেতাম কিনা তা ভাববার বিষয়।
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে এ বিষয়ে আনু মুহাম্মদ এর চমৎকার একটি লেখা আছে।
এর দুটা লাইন এমন– ‘রোকেয়ার অগ্রসর চিন্তা ধারণ করতে না পেরে সমাজ তার কম গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়কেই গ্রহণ করেছে– মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত। আর সেই কাজেও রোকেয়া সেই সময় সহযোগিতা পাননি।’
তথ্যসূত্র:
১। রোকেয়া রচনাবলী
২। বিবি থেকে বেগম – আকিমুন রহমান
৩। নারী – হুমায়ুন আজাদ
৪। রোকেয়া – আব্দুল কাদির, ১৯৭৩