নাসরীন রহমান:
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর সংগ্রামের ইতিহাসে বোনা এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অর্জন, অগ্রযাত্রার প্রতীক এই নারী দিবস। প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপনের একটি মূল প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
এবার আন্তর্জাতিক নারীদিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘Be Bold for Change!
Be Bold! Be the Change!
কিন্তু সাহসী হওয়াটা কি শুধু প্রতিকার করতে যেয়েই প্রয়োজন ?
না ; আমাদের সাহসী হতে হবে নিজেদের কথাগুলো বলার জন্যও ; নারী বা কন্যাশিশুদের প্রতি প্রযুক্ত অন্যায় এর কথা বলতে হলে সাহসী হতে হবে আমাদের ।
ভয় বা লোকলজ্জায় হোক না জানানো কথাগুলো বলতে হবে আমাদের মনে সাহস সঞ্চয় করেই।
তবেই না আমরা প্রতিকার পাবো, মন গুমরে মনের কথা মনে রেখে দিলে প্রতিকার যেমন হবে না, তেমনি প্রকাশিত হবে না ‘পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর দানব রূপটি ‘!

আমি ০২, মার্চ ২০১৭ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ; সংবাদের কিছু অংশ আমি তুলে দিচ্ছি এখানে,
‘রাজধানীতে এক কিশোরী ধর্ষণের মামলায় তার এক নিকটাত্মীয়কে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে গুরুতর যৌন নির্যাতনের শিকার কিশোরীর নিকটাত্মীয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, ওই কিশোরীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে আসছিল অভিযুক্ত নিকটাত্মীয় !
ভয়, সংকোচ বা লোকলজ্জায় কিশোরীটি এই ব্যাপারটি গোপন করে আসছিল; এবং একসময় অসহ্য হয়ে বাধ্য হয় ঘটনার প্রকাশ করতে ।
এখানে দুটি দিক লক্ষ করুন পাঠক
(এক) নিকটাত্মীয় কতৃক দিনের পর দিন ধর্ষিত হওয়া
(দুই) নিকটাত্মীয় বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা, যার বলী কিশোরীটি !
এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে, নারী নিপীড়নের ইতিহাসে এই কিশোরীটি কি প্রথম এমন বিকৃত যৌনাচারের শিকার?
না, বরং আমাদের সমাজে অহরহ শোনা যায় নিকটাত্মীয় কতৃক কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা; এটাই অপ্রিয় সত্য যে, আমাদের দেশে কিশোরীরা অনেক ক্ষেত্রেই জীবনে প্রথম নিকটাত্মীয় থেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়।
কিশোরী বয়সটি পরিবর্তনের বয়স, পরিবর্তন যুগপৎভাবে শরীর ও মনে, এই সময় কিশোর – কিশোরীরা জগতকে দেখতে শেখে জ্ঞানের আলোকে, বয়সের চাঞ্চল্য নিয়ে, এই সময়টা তাদের জীবন, জগৎ, আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ভাবনা গড়ার সময়; অথচ এই সময় যদি কোনো কিশোরী ‘নিকটাত্মীয় ‘ দ্বারা বিকৃত যৌনাচারের শিকার হতে থাকে দিনের পর দিন, তবে ওই কিশোরীর মানস গঠনে কতটা বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা বোধকরি আর বুঝিয়ে বলার দরকার নেই।
এবং এর নেতিবাচক প্রভাব যে কিশোরীটিকে আমৃত্যু বয়ে যেতে হবে তাও আমাদের সমাজ কাঠামোতে বাস্তবতা।
তাই লোকলজ্জা, ভয়কে জয় করতে হবে কিশোরীদের; গোপন করা নয়; মা বা বোন বা বাবার কাছে বলতে হবে এমন অসৎ মনোবৃত্তি সম্পন্ন ‘নিকটাত্মীয় ‘ আচরণের কথা।
তাতে প্রতিকার মিলবে, দিনের পর দিন ‘নিকটাত্মীয়ের ‘ অন্যায় যৌননির্যাতন থেকে মুক্তি মিলবে; এবং অভিভাবককেও একই সাথে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে হবে অভিযুক্ত ‘ ‘নিকটাত্মীয় ‘ বিরুদ্ধে।
পরিশেষে এই বলে লেখাটি শেষ করতে চাই; সাহসী হও মেয়েরা, গোপন করা নয়, লজ্জা নয়, ভয় নয়, খুলে বলো মনের সব কথা।
‘Be Bold for Change!
Be Bold! Be the Change’।