
এই সবের উপরেই ভিত্তি একটি ভারতীয় বাংলা মুভি দেখলাম সেদিন, “সাহেব বিবি গোলাম”। ছবিটি ২০১৬ তে মুক্তি পেয়েছে। গল্পের নায়িকা ‘জয়া’ (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) ঘোরতর সংসারী এক গৃহবধু। স্বামী, শাশুড়ি ও নয়/দশ বছরের একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। দেখতে বেশ সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী। এক সময় নাচ করতেন। মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ফলে অন্যান্য মা-অভিভাবকদের সাথে জয়ার বেশ বন্ধুত্ব হয়েছে।
একদিন মেয়ের স্কুল টিচার খাতায় মেয়ের ভুল দেখানোর নাম করে জয়ার হাত বোলাতে থাকেন। বান্ধবীকে ঘটনাটি বললে সে প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করতে বলে। জয়া অমত করে। বহুদিন পর পুরুষের স্পর্শ তাকে আন্দোলিত করেছে জানায়। কারণ জানতে চাইলে সে বলে, স্বামীর সুখ থেকে সে বঞ্চিত। স্বামীর কাছ থেকে তীব্র প্রত্যাখ্যান দিন দিন তাকে নিজের প্রতি অবহেলায়, অপমানে ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে অসহায় করে ফেলেছে। তার পক্ষে সংসার, সন্তান কোনোটাই ছাড়া সম্ভব না। সব শুনে বান্ধবী তাকে এক জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে সংসার ছাড়তে না পারা ও স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত সুখ থেকে বঞ্চিতরাই যায়।
স্বামীর সাথে ঝগড়া-ঝাঁটি,মারামারির সম্পর্ক হলে আমরা খবর পাই। আবার বিকৃতভাবে যদি কোনো স্বামী যৌন সুখ পেতে চায়, তো তাকেও আমরা নির্যাতন বলি। কিন্তু নীরবে একই ঘরে, একই বিছানায় থেকে স্ত্রীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যখন কোনো স্বামী মাসের পর মাস কিংবা বছর গড়িয়ে যায় যৌন সম্পর্কহীন, তখন সেটাকে নির্যাতন বলি না, এমনকি সেই খবরও পাই না। কেউ এই বিষয়ে মুখ খুলে না বলেই আমরা হঠাৎ কারো কাছে এইসব কথা শুনলে সাধারণ বিষয় বলে উড়িয়ে দেই।
মেয়েরা নিজের সমবয়সী কাউকে বলতে গেলে শুনতে হয় টুকিটাকি বিষয় মিটায়ে ফেল। কেমনে মিটাতে হয় তার সমাধান তার জানা নেই, কারণ তিনি তো কম করে হলেও সপ্তাহে অন্তত দু’দিন স্বামীর সাথে সহবাস করেন।
কথা হচ্ছে ,স্বামী শুধু মারপিট করলেই আমরা তাকে নির্যাতন বলে জানি, কিন্তু যৌন সুখ থেকে বঞ্চিত করেও যে স্ত্রীকে এক কঠিন ধরনের নীরব মানসিক নির্যাতন করা হয়, তা ব্যক্তি না বললে আজীবন অজানাই থেকে যায়। তার প্রভাব নারীদের কাজে-কর্মে সব ক্ষেত্রেই পড়ে। অথচ যৌন চাহিদা আমাদের ঘুম, খাওয়া, টয়লেট করার মতোই প্রয়োজনীয়। শরীর থাকলে চাহিদা থাকবেই। আমরা নিয়ন্ত্রণ করি মাত্র, কিন্তু উপেক্ষা করতে পারি না।