ইহা একটি ‘খুশ’ খবর

শান্তা মারিয়া: অত্র লেখাটি সাধু ভাষা ব্যতীত কোনো প্রকারেই লেখা সম্ভব নহে। কারণ বাল্যকালে বাল্য শিক্ষার সময়ে অত্র ভাষা শিক্ষা করিয়াছিলাম। সাম্প্রতিক খুশখবরে আমার সমুদয় শিক্ষাদীক্ষা জল হইয়া গিয়েছে। মস্তক গুলাইয়া গিয়াছে। আমি কোনটি আগের কোনটি পরের, কোনটি অতীত আর কোনটি ভবিষ্যত কিছুই বুঝিতে পারিতেছি তা। আমি সচেতন নাগরিক হইতে অচেতন নাগরিকে পরিণত হইয়াছি। এই সকল কারণে আমি সাধুভাষার সাধু প্রয়োগ করিতেছি।

প্রথমেই আমি আপনাদিগকে খুশ খবর দিতেছি। আজ হইতে আমাদের বালকবালিকাদের বিবাহের পথে সকল অন্তরায় দূর হইয়াছে। যাহারা বাল্যবিবাহের নামে জ্বলিয়া উঠিতেন তাহাদের মুখে ছাই নিক্ষেপ করিয়া বাল্যবিবাহ আইন পাশ হইয়াছে। আর কোনো সমস্যা নাই।

শান্তা মারিয়া

যাহারা বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রকৃতপক্ষে তাহারা ঈর্ষাকাতর নরনারী। শৈশবে বিবাহের মজা পায় নাই। তাহাদের খালি শুষ্ক বইপুস্তক পড়িতে হইয়াছে। আহা, কত বিলকিছ বেগমের(প্রকৃত নাম নহে) মন কত আবুল–গাবুলকে(প্রকৃত নাম নহে)দেখিয়া আনচান করিয়াছে। কত গাল্টুর মন কত খেদি পেচিকে দেখিয়া আকুল হইয়াছে। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহ করিয়া পুলিশের হাতে প্যাদানি খাওয়ার ভয়ে নিজেদের সংযত রাখিতে হইয়াছে।

নিজেরা ছোটবয়সে বিবাহ করিতে পারে নাই বলিয়া ইহারা এতদিন হিংসায় অস্থির হইয়া বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করিয়াছে। এখন তাহাদের থোতা মুখ ভোতা হইয়াছে। এখন তাহারা হায় আফশোস করিতেছে। আর ভাবিতেছে আমরা উনবিংশ শতাব্দীতে কেন জন্ম গ্রহণ করিলাম না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বর্গ হইতে তাহার বিখ্যাত বিদ্যাসাগরী চটিজুতা নিক্ষেপ করিবার কথা ভাবিতেছেন। বেগম রোকেয়া ভাবিতেছেন কেন ইশকুল খুলিয়াছিলাম, তাহার বদলে বিবাহের জন্য কমিউনিটি সেন্টার করিলে এতদিনে লাল হইয়া যাইতাম।

আমরা এক্ষণ বালকবালিকাদিগের জীবন যৌবনের হেফাজত করিব। তাহাদেরকে শুকাইয়া মরিতে দিব না। আটবছরে গৌরীদান আর নয় বছরে রোহিনী দান করিব। ‘খোকা যাবে বিয়ে করতে সঙ্গে যাবে কে’ কিংবা ‘খুকু যাবে শ্বশুরবাড়ি’ ইত্যাদি ছড়া এতদিন ছড়ার বইতেই ছিল। অবশেষে এইসব ছড়া বাস্তবতার মুখ দেখিবে।

বাল্যবিবাহ আইন পাশ হইয়াছে শুনিয়া এক বালক রূপকথায় এক রাজার সাত রানীর গল্প শুনিয়া তাহার মাতাকে বলিতেছে ‘মা আমি এইবার রাজার মতো সাতটা বিয়ে করব’। মাতা রাগিয়া বলিতেছেন ‘কোন রানীর সঙ্গে ঘুমাবি তাহলে?’ খোকা বলিতেছে, ‘ধুর আমি তো তোমার সঙ্গে ঘুমাব। আর বাবাকে পাঠাবো ওদের সঙ্গে ঘুমাতে’। শুনিয়া মা ও বাবা দুজনেই আনন্দ অশ্রু বিসর্জন দিতেছেন।

এক খুকু বলিতেছে ‘আমি কাল থেকে আর ইশকুলে যাবো না। আমি রাজপুত্র বিয়ে করে রাজবাড়িতে থাকবো’। পিতা মাতা ইহা শুনিয়া খুকুর জন্য বইপুস্তকের পরিবর্তে লাল বেনারসি কিনিবার আয়োজন করিতেছেন।

লেখাটি লিখিতেছি আর মনে বহুৎ কষ্ট হইতেছে। আহা, বাল্যবিবাহ আইনটি আরও আগে পাশ হইলে আমি ছোটবেলায় বিবাহ করিয়া এতদিনে নাতিনাতনির মুখ দেখিতাম কষ্ট করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া, আর অফিসে চাকুরি, সাংবাদিকতা, কিছুই করা লাগিত না

আসুন আমরা শিশু এবং বালক বালিকাদিগের বিবাহ দিয়া অশেষ সওয়াব হাসিল করি, দেশকে জনসংখ্যায় ভাসাইয়া দেই খোকা খুকিরা বরকনে সাজিয়া আমোদ আহ্লাদ করুক কি আনন্দ পুত্রকন্যাকে অযথা অর্থব্যয় করিয়া বিদ্যা শিক্ষা না দিয়া আসুন তাহাদের বিবাহ দেই জাঁক জমক করিয়া পুতুল বিবাহের আয়োজন করিবাল্যবিবাহ জয়যুক্ত হউক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.