শাফিনেওয়াজ শিপু: বলতে বলতে আরেকটি ২৬শে ফেব্রুয়ারি পার হয়ে গেল, ঠিক দুই বছর আগে এই তারিখে ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে আমাদের অভিজিৎদা খুন হয়েছিলেন তাঁর প্রতিবাদী লেখার কারণে। দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে গেল, কিন্তু এখনো তাঁর হত্যার বিচার আমরা পাইনি। আর হাস্যকর ব্যাপার এইভেবে যে, এখন পর্যন্ত নাকি আমাদের পুলিশ ভাইরা হত্যাকারীদের সনাক্তই করতে পারেনি।
আমার তো মনে হয়, তারা ইচ্ছে করেই বা ‘কারও’ অঙ্গুলিলেহনেই এই টালবাহানা করছেন, যার কারণে এতো সময় নিচ্ছেন খুনিদের বের করতে। যেখানে দুই বছর নয় মাস লাগলো রাজীব হত্যার রায় দিতে, সেখানে তো অভিজিৎদার ক্ষেত্রে কতো বছর লেগে যাবে স্বয়ং খোদাই জানে।
অভিজিৎ ছিলেন একজন বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল লেখক। তিনি ছিলেন আমার আদর্শ। আমি জানি না আমি লেখার দক্ষতা কতোটুকু, কিন্তু আজকে এই লেখালেখির পেছনে যাকে আমি মডেল হিসেবে দেখি, তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন আমাদের এই অভিজিৎদা। তাঁর লেখালেখি আমাদেরকে উৎসাহ দিত কোনো কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। আজকে হয়তো তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ চিরজীবন আমাদের সকলের মাঝে বেঁচে থাকবে। ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি যে সবাইকে আহবান জানাতেন তাঁর প্রমাণ আমরা পেয়েছি তাঁরই লেখাতে। আমরা কিন্তু তাঁর কোন লেখাতেই কখনো কোনো আক্রমণাত্মক কিছু খুঁজে পাইনি, বরং পেয়েছি সহজ সরল যুক্তি, সকল বিষয়ের অনেক জ্ঞান ও তাঁর উদার মনমানসিকতা, যা প্রমাণ করে তিনি ছিলেন একজন মুক্তচিন্তার মানুষ।
এই যে গত দুই বছরে যে, এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি এই লেখক ও ব্লগারের হত্যাকারীদের, এই নিয়ে তো আমাদের সরকারের কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। বরং খালি খালি কথায় কথায় বলছে খুনি সনাক্ত হয়েছে এবং পুলিশের নজরদারিতে আছে এবং আমরা যেকোনো সময় খুনিদেরকে গ্রেফতার করবো।
এখন আমার প্রশ্ন হলো, এইভাবে আর কতোদিন আপনারা তাঁর পরিবারকে ঝুলিয়ে রাখবেন? এমনকি আপনারা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে এই বৃদ্ধ বাবাটিকে ঘুরাচ্ছেন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এবং আপনাদের কাছে গেলে আপনারা শুধু বলেন, খুনি শনাক্ত হয়েছে এবং আপনাদের নজরদারিতে আছে।
আরে পুলিশ ভাই! এইভাবে আর কতোদিন?
আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, তিনি ছেলে হত্যার বিচার মনে হয় পাবেন না আদৌ। কারণ আমাদের এই সরকার তো ইসলামী মৌলবাদীদের কাছে জিম্মি। যতদিন এই ধরনের উগ্র মৌলবাদীরা বেঁচে থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত আমাদের ব্লগারদের বিচার হবে না। গত তিন মাস আগেও যখন তাঁর বাবা পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন এই হত্যার কোনো তদন্ত হলো কীনা জানতে, জবাবে একই উত্তরই তিনি পেয়ে যাচ্ছেন।

দেশে বিদেশে এই হত্যার পর তোলপাড় হলেও এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি। গত বছরের ১৯ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড ছয় জঙ্গির নাম–ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ করার পরেও যে তাদেরকে কেন ধরতে পারছে না, আমার মাথায় আসছে না। তাহলে তো আমরা বলতে পারি, আমাদের এই সরকার ইচ্ছে করেই এমনটি করছে, যাতে করে আরো সময় নষ্ট হয় এবং সময়ের সাথে সাথে সব কিছু যাতে জনগণ ভুলে যায়।
তবে একটি কথা বলতে চাই যে, অভিজিতরা কখনো মরে না, বরং তাঁদের আদর্শ ও সত্ত্বা আমাদের মাঝে চিরজীবন বেচেঁ থাকবেই…………!!
এক অভিজিৎ সাহসী করে তুলেছে সহস্র কলমকে। কোনো অশুভ শক্তির আঘাতে সেই কলম বন্ধ হবে এমন ধারণা যেসব মৌলবাদী করছে, আর মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে, তাদেরকে জানাতে চাই, কলমের শক্তি বহন করে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সেখানে কোন তলোয়ারের আঘাতও বন্ধ করতে পারবে না কলমের গর্জনকে।