বিজয়ের হাতটি ছাড়বেন না আপনারা

মলি জেনান: আমি জানিনা আমি কী লিখতে চাই? কেন লিখতে চাই? কীভাবে লিখলে বোঝানো যাবে যা বোঝাতে চাই? উইমেন চ্যাপ্টারে মারজিয়া প্রভা’র একটা লেখা “বাচ্চা আবার ‘জারজ’ হয় কীভাবে?” পড়ে শুধু ভাবছি আর ভাবছি…..। 

নারী-পুরুষের সহজ জৈবিক সম্পর্কের ফসল একটা বাচ্চা, সে সম্পর্কে যে সকল ক্ষেত্রে ভালোবাসা-বাসি থাকবে এমন কোন গ্যারান্টি নেই। এমনকি স্বামী-স্ত্রী‘র সার্টিফিকেটধারী যুগল জীবনে সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে সোনা-রুপা বা তামার চামচ মুখে দিয়ে যেসব নবাবজাদারা জন্মগ্রহণ করেন তারা সবাই যে বাবা-মা’র একাগ্র ভালবাসার ফসল, এমন প্রতিজ্ঞাই ক’জন করতে পারবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
তাই কে ‘জারজ’, আর কে ‘জারজ’ নয় এই বিভাজন নির্ধারণ পদ্ধতিটি কী?
আর আমরা কোন যোগ্যতার বলে একজন মানব সন্তানকে জারজ বলবার দুঃসাহস দেখাই?
এই ক্ষমতা আমাদের কে দিয়েছে?

মারজিয়া প্রভা’র লেখা থেকেই জানতে পারি বিজয় যখন তার মা নার্গিসের পেটে, তখন তার তথাকথিত বাবা তাদের ছেড়ে গেছেন, সেই থেকে বিজয় সমেত তার মা গুলিস্তান পার্কে জীবনযাপন করেছেন। যদি তাই হয়, তাহলে সাময়িক জৈবিক তাড়নায় যে ‘বাবা’ স্পার্ম ত্যাগ করেই তার কাজ শেষ মনে করে তাদের ফেলে গেলেন, তার পরিচয় কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়?

যে মা তাকে দশ মাস গর্ভে ধারণ করলেন, পৃথিবীতে আনলেন, দাঁড়াতে, হাঁটতে শেখালেন, তার পরিচয়ই কেন বিজয়ের একমাত্র পরিচয় হয়ে উঠবে না?
ভ্রুণ অবস্থায় ফেলে যাওয়া সেই লোকটির পরিচয় নেই বলে কেন তাকে হতে হবে ‘জারজ’?
কেন তার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার নেই?
কেন তাকে আজন্ম লড়াই করতে হবে একটু বেঁচে থাকবার জন্য?  

‘পথের ইশকুল’ এবং যারা বিজয়ের বেঁচে থাকবার অধিকার আদায়ে ওর হাতটি ধরে আছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। নিশ্চয়ই বিজয় স্কুলে যাবে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখবে, শুধু আপনারা হাল ছাড়বেন না। ঘোর দুঃসময়ে কাউকে না কাউকে সাহসী হয়ে উঠতে হয়, সমস্ত আলো নিভে গেলে কেউ না কেউ প্রদীপ জ্বালবার সলতে পাকায়……..।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.